পিজ্জা স্টোরে কাজ করা এক বাঙ্গালী আপার সাথে কথা হল। মাত্র আড়াই বছর হল এসেছেন বাংলাদেশ এর প্রত্যন্ত এক অঞ্চল থেকে। বিভিন্ন যায়গায় কাজ করে শেষ পর্যন্ত গত দেড় বছর ধরে এই পিজ্জা স্টোরে পার্মানেন্ট হয়েছেন।
প্রচণ্ড এফিসিয়েন্ট এই কর্মচারীর কাজের স্পিড, মোটামুটি আমেরিকান এক্সেন্টে কাস্টোমার ডিলিং দেখে জিজ্ঞেস করলাম
- আপা পড়ালেখা করেছেন কোথায় ?
বললেন,
- আপা নাইনে যখন পড়ি তখন আব্বা জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।
তারপর বাচ্চা হয়ে গেছে। আর পড়তে পারি নাই।জিজ্ঞেস করলাম
- আমাদের ভাই কি করে আপা?
আপা হাসতে হাসতে বললেন
- বাসায় বাচ্চা দেখে, রান্না করে, ঘরের কাজ করে।
আমরা বাঙ্গালীরা যেহেতু এরকম শুনে অভ্যস্ত না, তাই আবারো জিজ্ঞেস করলাম
- ভাই কাজ করে না কেন?
- সে পারে না কাজ করতে আর তাছাড়া দুইজন কাজ করলে বাচ্চা দেখবে কে? তাই আমি করি।
আপার কথা শুনে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকলাম তারপর রিয়েলাইজ করলাম
এই ভদ্রমহিলাই বাংলাদেশে থাকলে হয়ত সারাজীবন চুলা ঠেলে পার করে দিতেন, নাইন পাশ হবার কারণে স্বামীর কাছে খোঁটা শুনতেন, চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থেকেই কেটে যেত জীবন।
অথচ ইনি এখন এগারশ ডলার বাড়ি ভাড়া দিয়ে চার সদস্যের একটা ফ্যামিলির সম্পূর্ণ ভরণপোষণ করেন।
আমি মুগ্ধ অবস্থা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
- বাসায় যান কিভাবে আপা? বাসে ?
আপা বললেন
- জ্বি না আপা। হেঁটে যাই হেঁটে আসি। বাসে উঠলেই ছয় ডলার খরচ। কি দরকার ?
- ওহ বাসা মনে হয় কাছেই।
- পঞ্চাশ মিনিট হাঁটা। যাতায়াতে দুই ঘণ্টা লাগে।
আমি মনে মনে অঙ্ক কষলাম, দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে যাতায়াত আর স্টোরে আটঘণ্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ সপ্তাহে ছয়দিন।
পৃথিবীর কয়টা পুরুষ এই রকম পরিশ্রম করতে পারে এটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোটামুটি অশিক্ষিত, দুই বাচ্চার জননী, Good for nothing একজন নারী কি অবলীলায়, হাসিমুখে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে চলেছেন দিনের পর দিন।
বুঝলাম,মনের জোড় এর কাছে আসলে পায়ের জোড় কিছুই না। মনে জোড় থাকলে পা অটো চলে। আমার মুগ্ধতা এত বেঁড়ে গেল যে আর কথা বলতে পারলাম না।
মনে মনে শুধু বললাম
মা তুঝে সালাম
আম্মা তুঝে সালাম...........
রাখী নাহিদ, নিউইয়র্ক (ফেসবুক থেকে নেয়া)
news24bd.tv নাজিম