এক:
রোম যখন পুড়ছিল, নীরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।
সম্রাট নিরোর ওই পার্টি যেখানে তিনি বাঁশি বাজাচ্ছিলেন; কেমন ছিল ওই পার্টি। কীভাবে পুড়ছিল রোম। নীরোইবা কেমন শাসক ছিলেন।
নীরোর জন্ম ৩৭ খ্রিস্টাবে। ৫৪ থেকে ৬৮ খ্রিস্টাব পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের পঞ্চম সম্রাট ছিলেন তিনি। জুলিও-ক্লডিয়াস রাজতন্ত্রের সর্বশেষ সম্রাট নীরো।
নীরোর মা এগ্রোপিনা তার চাচা ক্লডিয়াসকে বিয়ে করেছিলেন পুত্রকে সম্রাট বানানোর জন্য।
ওই সময়ে পশ্চিমে স্পেন, পূর্বে সিরিয়া, উত্তরে ব্রিটেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল রোমান সাম্রাজ্য। বালক বয়সে শাসক হলেও খেলাধুলা, গান বাজনা, থিয়েটার, এসব করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন নীরো। কারণ মা এগ্রোপিনা পেছনে উপদেষ্টা হিসাবে থেকে তাকে পরিচালনা করেন।
এক পর্যায়ে মায়ের সঙ্গে দূরত্ব হয়। মাকে লোক পাঠিয়ে হত্যা করেন নীরো। একের পর এক স্ত্রীকে হত্যা করেন। সৎ ভাইকে হত্যা করেন। সাম্রাজ্য চালানোর নিষ্ঠুরতা আর খামখেয়ালিপনা চরমে ওঠে।
৬৪ খ্রিস্টাবে রোমে আগুন লাগে। ৬০ ভাগ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। নীরো তখন পার্টি বসান। মিউজিক পার্টিতে নিজে বাঁশি বাজান। তিনি কবিতা লিখতেন। গান গাইতেন্ থিয়েটার করতেন। অভিনয় করতেন।
রোমের আগুন নিজে লাগিয়ে ছিলেন বলে চাউর থাকলেও নীরো আগুনের জন্য খ্রিস্টানদের দায়ী করেন। তাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন।
নীরো বড় বড় প্রাসাদ বানাতে পছন্দ করতেন। মৌজ মাস্তি করতে পছন্দ করতেন। রোম পুড়ে যাবার পর তিনি এমন এক প্রাসাদ বানানোর কাজে হাত দেন যার ভেতরে থাকার কথা সোনার ইন্টেরিয়র, ঘূর্ণায়মান টেবিল, পাইপ দিয়ে ছড়াতে থাকবে সুগন্ধি, বিলাসিতার চূড়ান্ত মাত্রা।
রোমের মানুষ তখন পোড়াবাড়ি থেকে কষ্টে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নীরোর বিলাসিতা দেখে ক্ষুব্ধ জনগণ তাড়া করে। ৬৪ সালে তিনি পালিয়ে যান। তাকে তাড়া করে হত্যার উদ্যোগ নিলে নীরো নিজে আত্মহত্যা করেন ।
মাত্র ৩০ বছর বয়সে নীরো এভাবে মারা যান।
দুই :
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং ২৭ মার্চ একটি পার্টি দিয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ডিনার পার্টি। দিনে সেনাবাহিনী হত্যা করেছে ১০০ জনের বেশি মানুষ। রাতে ডিনার পার্টি। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন ভোরে তিনি নেতৃত্বে সেনাবাহিনী বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। তারপর বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে থাকে । এ পর্যন্ত ৪০০ জনকে হত্যা করে সেনাবাহিনী।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কারণ উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দেশ মিয়ানমারে মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষণ, আগুন লাগালে জনপ্রিয়তা বাড়ে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতে হ্লাইং অভিযুক্ত হন।
শেফ’স টেবিলের ৩৬ রেস্টুরেন্টে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব
জানাজার নামাজের জন্য হেফাজতির কাছে যাব না : এমপি মোকতাদির
কওমি মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
গণপরিবহনে আবারো যাত্রী অর্ধেক করার নির্দেশ
চলতি বছরের মাঝামাঝি অবসরে গেলে আগামীতে ভাগ্যে কী হবে তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন। তাই ক্ষমতাটা নিয়ে নিয়ে নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। একদিনে দেশটির ৪১ জায়গায় গুলি করে সেনাবাহিনী। জনগণের কাছে তার জনপ্রিয়তা কমছে।
মিয়ানমানের রাস্তায় শবযাত্রা। শোকের মিছিল। স্বজনের আহাজারিতে ভারি হচ্ছে বাতাস। জেনারেল তখন পার্টি দিয়েছেন। লেভিস পার্টি। জাঁকজমকপূর্ণ। জৌলুশে ভরপুর। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ এক ডজন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলছেন, পেশাদার সেনাবাহিনী নিজের দেশের জনগণকে সুরক্ষা দেয়। জনগণকে ক্ষতি করে না।
তার চেয়ে এক ডিগ্রী বাড়িয়ে বিদেশে থাকা মিয়ানমারের নাগরিকরা টুইট করছেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে জনগণের বিরুদ্ধে।
মিয়ানমারে সেনা শাসন নতুন কিছু নয়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬২ সাল থেকে টানা ৫০ বছর সেনাশাসন চলেছে। তারপর গণতন্ত্র উঁকি দিয়েছিল। আবার সেনাশাসন। আবার গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন। আবার কি মিলবে গণতন্ত্রের দেখা? কঠিন প্রশ্ন। উত্তর অজানা।
মাসুদ করিম, সিনিয়র সাংবাদিক
(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )
news24bd.tv নাজিম