যাকাত না দেওয়ার শাস্তি

যাকাত না দেওয়ার শাস্তি

অনলাইন ডেস্ক

যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। যা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী প্রত্যেকের ওপর আদায় করা ফরজ। নেসাব বলতে বোঝানো হয়, সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা তৎসমমূল্যের সম্পদকে।

এ পরিমাণে কারো সম্পদ একবছর মালিকানায় থাকলে ঐ বছরই তাকে সম্পদের আড়াই শতাংশ যাকাত দিতে হয়।

  যাকাত আদায়ের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভূত করে এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে কঠিন আযাবের সুসংবাদ প্রদান করুন। সেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, “এটা তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করেছিলে।

অতএব তোমরা যা পুঞ্জিভূত করেছিলে, তা আস্বাদন করো’ (সূরা তাওবা ৩৪-৩৫)।

আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘প্রত্যেক সোনা-রূপার মালিক যে তার হক্ব (যাকাত) আদায় করে না, ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য বহু পাত তৈরি করা হবে এবং সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার পাঁজর কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। যখনই তা ঠান্ডা হবে, তখনই তা গরম করা হবে (তার এ শাস্তি চলতে থাকবে) সেই দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। সকল বান্দার বিচার নিষ্পতি না হওয়া পর্যন্ত তার এ অবস্থা চলতে থাকবে। অতঃপর সে তার পথ ধরবে হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।

জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! উট সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন: কোন উটের মালিক যে তার হক্ব আদায় করবে না। আর তার হক্ব সমূহের মধ্যে পানি পানের তারিখে তার দুধ দোহন করা এবং অন্যদের দান করাও এক হক্ব। যখন ক্বিয়ামতের দিন আসবে তখন এক প্রশস্ত বিশাল ময়দানে তাকে উপুড় করে ফেলা হবে এবং তার সকল উট যা একটি বাচ্চাকেও হারাবে না- পূর্ণভাবে তাকে ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে ও মুখ দ্বারা কামড়াতে থাকবে। এভাবে যখনই তাদের শেষ দল অতিক্রম করবে পুনরায় প্রথম দল এসে পৌঁছবে। এরূপ করা হবে এমন দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান, যাবৎ না আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা শেষ হয়। অতঃপর সে তার পথ জান্নাতে অথবা জাহান্নামের দিকে দেখতে পাবে।

জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! গরু ও ছাগল সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন: প্রত্যেক গরু ও ছাগলের মালিক যে তার হক্ব (যাকাত) আদায় করবে না, ক্বিয়ামতের দিনে তাকে এক ধুধু মাঠে উপুড় করে ফেলা হবে এবং তার সকল গরু ও ছাগল তাকে শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে ও ক্ষুর দ্বারা মাড়াতে থাকবে। অথচ সেদিন তার একটি গরু বা ছাগলও শিং বাঁকা, শিং হীন বা শিং ভাঙ্গা হবে না এবং একটি গরু-ছাগলকেও সে হারাবে না। যখনই তার প্রথম দল অতিক্রম করবে, তখনই শেষ দল এসে পৌঁছবে। (এরূপ করা হবে) সে দিনে, যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাযার বছরের সমান। যাবৎ না আল্লাহর বান্দাদের বিচার-মীমাংসা শেষ হয়। অতঃপর সে তার পথ হয় জান্নাতে, না হয় জাহান্নামে দেখতে পাবে।

অতঃপর জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! ঘোড়া সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন: ঘোড়া তিন প্রকার। ঘোড়া কারো জন্য পাপের কারণ, কারো জন্য আবরণস্বরূপ আর কারো জন্য ছওয়াবের বিষয়। (১) যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য পাপের কারণ তা হলো সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে পালন করেছে লোক দেখানো অহংকার ও মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে। (২) যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে আবরণ স্বরূপ তা হ’ল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে লালন-পালন করেছে আল্লাহর রাস্তায় এবং তার সম্পর্কে ও তার পিঠে আল্লাহর হক্ব সম্পর্কে ভুলেনি। এই ঘোড়া তার মান-সম্মানের জন্য আবরণ স্বরূপ। আর (৩) যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য ছওয়াবের কারণ তা হলো সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে তাকে পালন করেছে কোন চারণভূমিতে বা ঘাসের বাগানে শুধু আল্লাহর রাস্তায় মুসলমানদের দেশ রক্ষার জন্য। তখন তার সে ঘোড়া চারণভূমি অথবা বাগানের যা কিছু খাবে, সে পরিমাণ নেকী তার জন্য লেখা হবে এবং তার গোবর ও প্রস্রাব পরিমাণও নেকী লেখা হবে। যদি তা আপন রশি ছিড়ে একটি অথবা দু’টি মাঠও বিচরণ করে তাহ’লে তার পদচিহ্ন ও গোবর পরিমাণ নেকী তার জন্য লেখা হবে। এছাড়া তার মালিক যদি তাকে কোন নদীর কিনারে নিয়ে যায়, আর সেটা নদী হ’তে পানি পান করে, অথচ মালিকের ইচ্ছা ছিল না তাকে পানি পান করানোর। তবুও ওই পানি পরিমাণ নেকী তার জন্য লেখা হবে।

জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! গাধা সম্পর্কে কী হবে? তিনি বললেন: গাধার বিষয়ে আমার নিকট শুধু এই স্বতন্ত্র ও ব্যাপকার্থক আয়াতটি নাযিল হয়েছে ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সেদিন সে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। [যিলযাল ৯৯/৭-৮; মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৭৩; বাংলা মিশকাত হা/১৬৮১]

news24bd.tv নাজিম

এই রকম আরও টপিক