মাদক আর যৌন শহর হিসাবে  নামডাক মূলত ট্যুরিস্টদের কারণে

মাদক আর যৌন শহর হিসাবে নামডাক মূলত ট্যুরিস্টদের কারণে

Other

আমস্টার্ডাম শহরটা দুনিয়ার বহু মানুষের কাছেই (বিশেষ করে এখানে আসা ট্যুরিস্টদের একটা বড় অংশের কাছে) ড্রাগসের শহর হিসাবে পরিচিত। কেনোনা এইখানে সফট ড্রাগস (গাঁজা, মাশরুম ইত্যাদি) লিগাল।  

হার্ড ড্রাগস ইলিগাল হইলেও এই ধরণের মাদক সেবনের কারণে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা খুবি কম। এই শহরে আইসা প্রথম যেই হোস্টেলে উঠছিলাম, তার লিফটে ট্যুরিস্টদের উদ্দেশ্যে একটা ম্যাসেজ ছিলঃ "ড্রাগডিলারদের থেকে মাদক খরিদ করা থেকে বিরত থাকুন।

আর অবৈধ মাদকের কারণে যদি অসুস্থ হয়ে যান, তবে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের কাছে সহযোগিতা চান। আমস্টার্ডামে মাদক নেয়ার জন্যে পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করবে না"। বলা ভাল, এই ম্যাসেজটা পুরাপুরি ঠিক না। আমস্টার্ডামে ড্রাগসের কারনে পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করতে পারে, যদি আপনি ড্রাগস নেয়ার পরে কোন ঝামেলা পাকান।

 

তবে ড্রাগস আর সেক্সের শহর হিসাবে এই শহরের যেই নামডাক তা মূলত ট্যুরিস্টদের কারণে, এবং আরও ভালভাবে বললে এই শহরটার হলিউডি রিপ্রেজেন্টেশনের কারনে। নাগরিকদের জীবনে এই নগর ভিন্নভাবে ধরা দেয়। আমস্টার্ডাম একিসাথে দুনিয়ার অন্যতম কালচারাল একটা কেন্দ্র, ইউরোপের অন্যতম সাংস্কৃতিক রাজধানী। এইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর। মিউজিয়ামের শহরও।  

ভ্যান গখ, রাইজক (রেমব্রান্টের পেইন্টিং-এর প্রধান অর্কাইভ), স্টেডেলাইক, আনা ফ্রাঙ্ক মিউজিয়ামের মতো বিখ্যাত মিউজিয়ামের শহরও এইটা। আর নিয়মিত শিল্প, সাহিত্যের সাথে যুক্ত নানান কর্মকান্ডতো চলেই। আপনি প্রতিদিনই কিছু না কিছুতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন (মানে স্বাভাবিক সময়ে আর কী), যেই ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আপনার পছন্দ। এছাড়াও আমস্টার্ডাম দুনিয়ার সবচাইতে সবুজ শহরগুলার একটা।  

প্রায় পুরা শহর জুরেই আছে পার্ক, খাল ও জঙ্গল। এই শহরকে দুনিয়ার সাইকেলের রাজধানীও বলা হয়। নাগরিকদের বড় অংশেরই প্রধান বাহন সাইকেল। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যেন সাইকেলে যাতায়াত করতে পারে সবখানে, রাস্তাঘাট তেমন করেই বানানো। এখানকার মানুষ এভারেজে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, দুনিয়ার অধিকাংশ শহর ও দেশের তুলনায়। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এইটা সত্য। মানে খালি নারীরাই নিজেদের যত্ন নেবে, আর ছেলেরা নেবেনা - এইটা এই শহরের কালচারের সাথে যায় না।  

এই শহরে মানুষদের জন্যে বেয়াম ও স্পোর্টসের অনেক সুযোগ সুবিধা আছে। প্রাতিষ্ঠানিক খেলাধুলার সুযোগের বাইরেও আরো নানান অবকাঠামো আছে। আপনার পয়সা খরচ করে জিমে যাওয়া লাগবেনা। এমন কোন পার্ক নাই, বা এমন কোন এলাকা নাই যেখানে বেয়াম করার পাবলিক স্পেইস নাই। আমার বাসা থেকে আধা ঘন্টার হাটা দূরত্বের মধ্যে তিনটা ক্যালিস্থেনিকসের অবকাঠামো আছে।  

এই পুরা শহরেই জায়গায় জায়গায় এমন অবকাঠামো বানানো আছে। খুব ঝামেলার কিছুনা আসলে। কয়েকটা লোহার বার (হরাইজন্টাল ও ভার্টিকাল) বসাইয়া দিলেই হয়। পুলআপ, চিনআপ বা ডিপের জন্যে এর চাইতে বেশি কিছু লাগে না। খুব খরচবহুল অবকাঠামো না এইগুলা। এই শহরের পলিসি দিনশেষে সোজা। আপনার জন্যে ড্রাগস, সুস্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড - সবই সহজলভ্য। এখন আপনি কী করবেন, সেইটা আপনার ব্যাপার।  

তরুণদের মধ্যে বহু কিছুর মতোই মাদকের প্রতি আগ্রহ থাকে। কেউ আসক্তও হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু আসক্তিতো তাদের সারা জীবন ডিফাইন করে দেয় না। যারা মাদক ছাড়তে চায়, তাদের জন্যে সেই সুযোগ, সুবিধা, নিরাপত্তা দরকার। মানে নিরাপত্তাহীনতা বা স্টিগমার মুখোমুখি না হয়েই যেন তা করতে পারে, সেই সুযোগটাতো রাখতে হবে। তরুণরাতো ইডিয়ট না। তাদের ভাল তারা বোঝে।  

বাংলাদেশের তরুণদেরকে টক্সিক পরিবেশে, টক্সিক সমাজে, টক্সিক শহরে বসবাস করতে বাধ্য করে মাদক নিয়ে ট্যাবু মারাইবেন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন চালাইবেন তাদের উপরে; তাতো চলবেনা। মাদকাসক্ত তরুণেরা খারাপ, আর পুরা বাংলাদেশটাকে প্রাকৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিষাক্ত বানিয়ে ফেলা আপনারা অনেক ভাল?

পারভেজ আলম: লেখক, একটিভিস্ট, অক্সিডেন্টালিস্ট

news24bd.tv / কামরুল