ছেলের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়লেন অন্ধ বাবা

ছেলের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়লেন অন্ধ বাবা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

লক্ষ্মীপুরে ছেলের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়লেন এক অন্ধ বাবা। ছেলের কাছ থেকে খাবার-চিকিৎসা সেবা তো পান-ই নি, উল্টো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়েন অন্ধ ও বধির বৃদ্ধ হাজি মিয়া চান্দ প্রামাণিক।

গেল তিন মাস ধরে ছেলের অত্যাচার ও জমি হাতিয়ে নেয়ার ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয়ে নিয়েছেন তিনি। বাবার সব জমির (মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা) দলিল হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রয়েছে ছেলে দেলোয়ার হোসেন।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউপির ৪নং ওয়ার্ড উদমারা ও বংশী গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসী ও স্বজনদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, অভিযুক্ত ছেলে দেলোয়ার তার ৫ বোনের জমি দখল ও বাবার নগদ টাকা ছিনতাইসহ ফসলগুলো লাঠিয়ালদের দিয়ে ভোগদখল করছেন। বাধ্য হয়ে আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে ওই বৃদ্ধ বাবা মামলা করায় সন্ত্রাসী দিয়ে স্বজনদের পিটিয়ে আহত করে দেলোয়ার।

এ অবস্থায় অসহায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধ বাবা সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে সহকারী কমিশনার ভূমি (অ্যাসিল্যান্ড) কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসলেও ছেলে দেলোয়ার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

অসহায় বৃদ্ধ হাজি মিয়া চান্দ প্রামাণিক জানান, স্ত্রী, ৫ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার চলছিল। ১৯৭৪ সালে তিনি হজ করেছেন। সৃজনশীল ব্যবসা করে তিনি দুই কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। চার মাস আগে তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর শারীরিকভাবে অসুস্থতার পাশাপাশি তার দুই চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বড় ছেলে দিনমজুর ও ছোট ছেলে বখাটেপনাসহ রাজনীতিতে জড়িত। দুই ছেলে বিবাহিত ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটছিল।

হাজি মিয়া চান্দ আরে বলেন, তিন মাস আগে অন্ধত্ব ও বধির অবস্থায় নিজ ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যে ঘরে বাস করেন সেখানে বিদ্যুতের আলো, খাবার, সুচিকিৎসা সেবা পান না। পাশাপাশি তার এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চোখের চিকিৎসার কথা বলে সাদা কাগজে সই নিয়ে প্রতারণা করে সব জমির দলিল ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেন তার কাছে নিয়ে যায়।

পরে দলিল চাইতে গেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বধির বৃদ্ধের ওপর নেমে আসে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। এসব ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার চেয়ে না পেয়ে বৃদ্ধ বাদি হয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মোছলেহ উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেনের নামে ২৬ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

গেল ২৯ মার্চ আদালতের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত ২৪ এপ্রিল তার সার্ভেয়ারকে দিয়ে ঘটনাস্থল তদন্ত করেন। ওইদিনই তদন্ত দল ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসার পরই হাজি মিয়া চান্দ ও তার নাতিকে পিটিয়ে আহত করে দেলোয়ার হোসেনসহ তার লোকজন।

গেল সোমবার দুপুরে ২০-৩০ জনের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে ওই বৃদ্ধের ৪ শতাংশ জমির পাকা ধান লুট করে নিয়ে যায় দুলাল। এসব ঘটনায় দিনমজুর বড় ছেলে-মেয়ে ও জামাতারা প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার।

তারা দেলোয়ারসহ স্থানীয় কয়েক সন্ত্রাসীর অত্যাচার ও হত্যার হুমকির ভয়ে কারও কাছে বিচার চাইতে পারছে না। প্রতিদিন রাতে তাদের বসত ঘরের পাশে গিয়ে ঘরের চালে ঢিল মারে ও অসভ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, এসব ঘটনা আমাদের নিজস্ব পারিবারিক ব্যাপার। আপনারা (সাংবাদিক) বেশি নাক গলাবেন না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহ্তাসিম বিল্লাহ বলেন, অসহায় হাজি মিয়া চান্দের প্রতি নিজ ছেলের অত্যাচার ও জমিদখলের চেষ্টা মামলার বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর