বিয়ের সঙ্গে অর্গানাইজ হওয়ার সম্পর্ক কী?

বিয়ের সঙ্গে অর্গানাইজ হওয়ার সম্পর্ক কী?

Other

অর্গানাইজ শব্দের অর্থ সংগঠিত হওয়া। সেজদা যখন আমাকে বললেন অর্গানাইজ হ, তখন আমি জীবনের সঙ্গে এর অর্থ মেলাতে পারি নাই। সেটা অনেক দিন আগের কথা। অনেক দিন মানে বিয়ের আগের কথা।

তিনি বলছিলেন, বিয়েটা করতে হবে, তোকে এখন অর্গানাইজ হতে হবে। বিয়ের সঙ্গে অর্গানাইজ হওয়ার সম্পর্ক কী তা অনেক ভেবে বের করতে না পেরে, আমি তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, অর্গানাইজ কীভাবে হওয়া যায়? 

তিনি বললেন, নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতে হবে। বিয়ের পর সংসারের জন্য ওভেন, ফ্রিজ এসব লাগবে। এগুলো ধীরে ধীরে গুছিয়ে নে।

আমি পরদিন বিকেলে মার্কেটে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে ফ্রিজ, ওভেন কিনে ফেললাম। মানে অর্গানাইজ হয়ে গেলাম। সেজদা প্রবাসী হওয়ায় আমার বিয়েতে থাকতে পারলেন না, তবে সেই ঘটনা থেকে একটা শিক্ষা সব সময় নিজের সঙ্গে নিয়ে চলছি। সেটা হলো, শব্দের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক মিলিয়ে দেখা।  

যাহোক, এখন সময়টা অন্যরকম। সবাই সবকিছু চট করে বুঝে নেয়। ঠিকঠাক অর্থটা ধরা গেলো কী না তা পরীক্ষা করা হয়তো অনেকের হয়ে উঠে না। ফলে, অনেক কাজ শেষ হয় না। সাফল্যও আসে না কারো কারো।  

ফোকাস বা ঠিক বিষয়টি বুঝে সে অনুযায়ী কাজ করার কৌশল রপ্ত করাই আমার আজকের লেখার বিষয়। এই বিষয়টি ক্লাসে সারাংশ শেখানোর নামে আমাদের মাথায় ছোটবেলায় দিয়ে দেওয়া হয়। একটা প্যারাগ্রাফ পড়ে মুল কথাটি দুয়েকলাইনে বলতে পারার নাম সারাংশ। জীবনের সারাংশ বোঝার চেয়ে কারো কথার সারাংশ বুঝতে পারা কম কথা নয়।


আমির খানের পিকে ছবির শেষ দৃশ্যে যখন এলিয়েনরা আবারো পৃথিবীতে আসে, তখন তাদের গবেষণার বিষয় থাকে, মানুষের এক কথার আরেক অর্থ করার প্রবণতা। এই যেমন, কেউ যদি বলে তিনি  চিকেন পছন্দ করেন তার মানে হলো, তিনি মুরগি খেতে চান, নিজের কাছে সাজিয়ে রাখতে চান না। কারো বউ যদি বলে, ঠিক আছে বাসায় আসেন কথা হবে। তার মানে সামনে ভয়াবহ বিপদ ইত্যাদি। আমি এমন একাধিক অর্থবহন করে এমন বাক্য বা শব্দমালা নিয়ে কথা বলছি না। বলছি, স্পষ্ট একটা বর্ণনা পড়ে কেউ যেনো তার সঠিক অর্থটা বুঝতে পারে তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।  

যাহোক, বুঝতে পারার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা আমার কাজ নয়। আমি বলতে চাই, কেউ যদি কিছু বুঝতে চায় তাহলে তাকে কারো কথা মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে, কারো লেখা মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে। ধরা যাক, বৃষ্টি কীভাবে হয়, কারণ ও উপায় বিশ্লেষন করে কেউ একটা আর্টিকেল লিখলো বা ফেইসবুকে পোস্ট দিলো। তা পড়ে কেউ যদি কমেন্ট করে, তুমি ইদানিং বৃষ্টি নিয়ে অনেক ভাবছো, আগে এরকম ছিলে না, তাহলে ধরে নিতে হবে, পাঠক নিতান্ত অবহেলায় লেখাটি পড়েছেন, কিংবা একবারেই পড়েন নাই।  

লং স্টোরি শর্ট করি, যে প্রশ্নের জবাব শব্দ দিয়ে দেওয়া যায় তা বাক্য দিয়ে দেওয়া মানে ঘটনা বুঝতে না পারা। যে প্রশ্নের জবাব বাক্য দিয়ে দেওয়া যায় তা প্যারাগ্রাফ দিয়ে দেওয়া মানে প্রশ্ন ঠিক মতো বুঝতে না পারা। যে প্রশ্নের জবাব প্যারাগ্রাফ দিয়ে দেওয়া যায়, তার জবাব রচনা দিয়ে দেওয়া মানে, প্রশ্ন বুঝতে না পারা।  

আরও পড়ুন


আশ্রয়ণ প্রকল্প: এটা তো দুর্নীতির জন্য হয়নি, এটা কারা করলো?

আগের স্ত্রীকে তালাক না দিয়েই মাহিকে বিয়ে করেছে রাকিব

আমরা কখনো জানতামও না যে এই সম্পদ আমাদেরই ছিলো

নাশকতার মামলায় নওগাঁর পৌর মেয়র সনিসহ বিএনপির ৩ নেতা কারাগারে


 

 একটা ঘটনা বলে লেখা শেষ করি। এক সময় ঢাকায় ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বলে বাংলায় কথা বলতে পারতেন। তিনি পরে সম্ভবত ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এম আই সিক্স এর পরিচালক হয়েছিলেন। একবার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে অন্য সাংবাদিকদের মতো তাঁর সঙ্গে আমারও দেখা হয়েছিলো। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, কেউ যদি কোনো বিষয় এক পৃষ্ঠায় লিখে শেষ করতে না পারেন, তাহলে জনাব আনোয়ার চৌধুরী ধরে নেন, লেখক বিষয়টি ঠিকঠাক বুঝতে পারেন নি।  

সো, ভাই ও বোনলোক আগে বুঝেন সামনের লোকটি কী জানতে চায়, তারপর আপনার জ্ঞানের সাগরটি উপস্থাপন করুন। আজ এখানেই শেষ। সঙ্গেই থাকুন।

লেখাটি নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভির সিনিয়র নিউজ এডিটর, আনোয়ার সাদী-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া।  

(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv/আলী