পারকিনসন্স সহজে ভালো হয় না, সচেতন থাকা ভালো 

প্রতীকী ছবি

আজ বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস

পারকিনসন্স সহজে ভালো হয় না, সচেতন থাকা ভালো 

ডা. আহসান হাবীব হেলাল 

প্রতি বছর ১১ এপ্রিল বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস পালিত হয়। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য 'পারকিসন্সের জন্য একতাবদ্ধ হই'। পারকিনসন্স মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত একটি রোগ। মস্তিষ্কের ‘সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা’ নামক অংশের স্নায়ু কোষ (নিউরোন) শুকিয়ে যাওয়ার কারনে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার (এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ) এর ঘাটতি দেখা দেয়।

স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্কে ব্যাজাল গ্যাংলিয়া নামক অংশ শরীরের চলাফেরা বা গতির সমন্বয় করে থাকে। ডোপামিনের অভাবে এই সমন্বয় নষ্ট হয়ে যায়।  

কারণ
সত্তর ভাগ ক্ষেত্রে পারকিনসন্স রোগের কারণ অজানা। পাঁচ ভাগ ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে হয়।

অবশিষ্ট পঁচিশ ভাগ বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন স্ট্রোক, টিউমার, বার বার মস্তিষ্কের আঘাত, মস্তিষ্কের ইনফেকশন, উইলসন ডিজিজ সহ মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ-যে গুলোকে বলা হয় পারকিনসনিজম।  আমাদের দেশে সঠিক তথ্য উপাত্ত নেই। আন্তর্জাতিক এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে তুলনা করলে ০.৩ ভাগ লোকে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়।

যারা আক্রান্ত হতে পারে
পুরুষ ও নারী সমানভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়। সাধারণত ষাট বছরের পর পারকিনসন্স রোগ হয়। জেনেটিক ক্ষেত্রে কম বয়সে যেমন ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ
এ রোগের প্রধান উপসর্গ বা লক্ষণ তিনটি।  
১. হাত পা কাঁপুনি।
২. হাত পা স্বাভাবিকের চেয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া।
৩. চলাফেরার গতি ধীর হয়ে যাওয়া।

এ ছাড়াও নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো থাকতে পারে। যেমন: সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটা, কথার স্বর কমে যাওয়া, কম কথা বলা, চোখের পাতার নড়াচড়া কমে যাওয়া, বার বার পড়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। উপরোক্ত লক্ষণ গুলোকে বলা হয় Motor Symptom. এছাড়া Non-motor symptom রয়েছে। সেগুলো হলো: হতাশা, উদ্বিগ্নতা, উদাসীনতা, কোষ্ঠ কাঠিন্য, ঘুম কম হওয়া, বার বার প্রশ্রাবের চাপ অনুভব করা বা প্রস্রাব আটকে যাওয়া , যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসা 
এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক সময়ে এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহন করলে রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকেন। তবে এ রোগে আক্রান্ত রোগীকে আজীবন ওষুধ খেতে হয়।

সম্পূর্ণ আরোগ্য হওয়া সম্ভব কি?
পারকিনসন্স সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ নয়। নিয়মিত ওষুধ সেবনে রোগী অনেকদিন পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।  

প্রতিরোধের উপায়
এ রোগে প্রতিরোধের উপায় এখনও জানা যায়নি।

অপারেশন বা অন্য কোন চিকিৎসা আছে কি?
অপারেশনের কোন ভূমিকা নেই। তবে ডিবিএস (Deep Brain Stimulation) পদ্ধতিতে অতি ক্ষুদ্র ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের গভীরে স্থাপন করা হয়। এতে ওষুধ অনেক কম লাগে। উপসর্গগুলো ৯০ ভাগ কমে যায়, রোগীও দীর্ঘদিন ভালো থাকেন। কিন্ত এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ পদ্ধতি আমাদের দেশে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে। এডভান্সড পারকিনসন্স ডিজিজ রোগীর ক্ষেত্রে লিভোডোপা প্যাচ, অ্যাপোমরফিন ইনফিউশন পাম্প এবং লিভোডোপা-কারভিডোপা ইনটেস্টিনাল জেল (LCIG) রয়েছে। তবে এগুলো বেশ ব্যয়বহুল এবং আমাদের দেশে এখনও শুরু হয়নি। ওষুধের পাশাপাশি ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পারকিনসন্স রোগের উন্নতি হয়।  

চিকিৎসা কোথায়? 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বর্হিবিভাগ এবং অন্ত:বিভাগে, ন্যাশনাল ইনিষ্টিউট অফ নিউরোসায়েন্স, সারা দেশের মেডিকেল কলেজ সমূহের নিউরোলজি বিভাগে এই রোগের ভালো চিকিৎসা হয়। এছাড়া কিছু বেসরকারী হাসপাতালে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা এ রোগের চিকিৎসা দেন।  

আমাদের করণীয়
গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে নিউডিজেনারেটিভ অসুখের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারকিনসন্স রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম। রোগী এবং পরিবারের লোকজনকে সচেতন করতে পারলে রোগীকে সচল রাখা সম্ভব। তবে রোগীকে সবসময়ই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে যেতে হবে।  

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ 
(পারকিনসন্স এন্ড মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার স্পেশালিস্ট) 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)

news24bd.tv/arkabul