পারকিনসন্স  রোগের লক্ষণ ও পরিত্রাণের উপায় 

একজন পারকিনসন্স রোগীকে সেবা দিচ্ছেন নার্স -ফাইল ছবি।

পারকিনসন্স  রোগের লক্ষণ ও পরিত্রাণের উপায় 

অনলাইন ডেস্ক

মস্তিস্কে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতির কারণে এই রোগ দেখা দেয়। ব্রেন এর মধ্যে ছোট একটা অংশ রয়েছে, যেটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় 'সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা' বলা হয়। এই অংশের স্নায়ু কোষ বা নিউরোন শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার (এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ) নষ্ট হয়ে যায় অথবা এর ঘাটতি দেখা দেয়।
স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিস্কে ব্যাজাল গ্যাংলিয়া নামের একটি অংশ মানুষের চলাফেরা এবং গতির সমন্বয় করে থাকে, ডোপামিনের অভাবে সেই সমন্বয়ের প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়।

তখন একজন মানুষ আক্রান্ত হয় পারকিনসন্স রোগে। মুলত জটিল স্নায়ুর অসুখ এই পার্কিনসনস।
লক্ষণ সমূহ
মূলত বেশি বয়সিরাই এই অসুখে আক্রান্ত হন।
মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পার্কিনসনসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কিছুটা বেশি।

বংশে এই রোগের ইতিহাস থাকলে, পরের প্রজন্মের মধ্যে পার্কিনসনসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে যায়। পার্ক-১ ও পার্ক–২ জিন থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত এই অসুখের ঝুঁকি অনেক বাড়ে।

নেতিবাচক চিন্তা — একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা মানুষের মাঝে দুঃখ, অসহায়ত্ব এবং হতাশার অনুভূতি তৈরি করতে পারে; যা একজন ব্যক্তিকে বিষণ্নতার জন্য আরও  ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। সীমাবদ্ধ জীবনধারার ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সহায়ক সামাজিক যোগাযোগের  অভাব, দ্রুত অবসরগ্রহণ বা পরনির্ভরশীলতা এগুলো বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।  
পরিবেশগত কারণ:গুরুতর মানসিক চাপ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে জীবনযাপনে কষ্ট, কিছু লোকের জন্য বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে।  
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: এরোগের চিকিৎসায় প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলো বিষণ্নতার মত উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।


চিকিৎসা পদ্ধতি
মস্তিষ্কের সাবস্ট্যান্সিয়া নাইগ্রা নামক অংশ থেকে ডোপামিন নামে এক নিউরোট্রানসমিটার নিঃসৃত হয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। মন ভাল থাকার পিছনেও এর ভূমিকা আছে‌। মস্তিষ্কের এই অংশ অকেজো হয়ে গেলে, ডোপামিন নিঃসরণ কমে যায়। এ ভাবেই পার্কিনসনসের সূচনা হয়।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের প্রাক্তন স্টিরিওট্যাকটিক ও ফাংশনাল নিউরোসার্জন ও মেদান্ত হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় হেলথটেক অনলাইনকে জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রিচার্জেবেল ব্রেন পেসমেকার বা ডিপ ব্রেন স্টিমুলেটর (ডিবিএস) নামক এক বিশেষ ডিভাইসের সাহায্যে পার্কিনসনসের অনেক সমস্যা দূর করা যায়। আমেরিকায় প্রথম এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। তাতে উল্লেখযোগ্য ভাল ফল পাওয়ার পর এই চিকিৎসা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে‌ছে। রোগীকে জাগিয়ে রাখা অবস্থায় এই ব্রেন পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয় বলে জানালেন অনির্বাণদীপ। এই সার্জারির কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই রোগী কিছুটা সচল হয়ে যান। এমনকি পরদিন থেকে কোনও সাহায্য ছাড়াই হাঁটাচলা করতে পারেন।  
এছাড়া মস্তিষ্কের এই জটিল সমস্যায় অনেক রোগীকেই প্রতি দিন গোটা ২০ ওষুধ খেতে হয়। এমন রোগীও আছেন, যাঁদের ৩৫টা পর্যন্ত ওষুধ খেতে হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেতে খেতে অনেক সময় তার কার্যকারিতাও কমে যায়। তেমন অবস্থায় রোগীকে সুস্থ করতে চিকিৎসকরা বাইল্যাটারাল সাব থ্যালামিক নিউক্লিয়াস ডিপ ব্রেন স্টিমুলেটর (ডিবিএস) প্রতিস্থাপন করেন।  
মস্তিষ্কের এই জটিল সমস্যা অন্য ভাবেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। তার সহজ সমাধান রয়েছে রোজকার খাবারদাবারের মধ্যেই। পার্কিনসনসের আশঙ্কা কমাতে ডায়েটে রাখুন অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যুক্ত খাবার। নানা রকমের এবং নানা রঙের ফল, মরসুমের শাকসব্জি, বাদাম আর মাছ। ওজন ঠিক রাখতে নিয়মিত যোগাসন বা ব্যায়াম করতে হবে।  

news24bd.tv/ ডিডি