নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাস মোড়ে আয়োজিত লটারির ফাঁদে পড়েছে সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনার লাখো মানুষ। বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগঞ্জে ‘দৈনিক র্যাফেল ড্র’ নামে জুয়ার ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আয়োজকরা প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে অর্ধকোটি টাকা।
বনপাড়া বাইপাস মোড়ে এক মাস আগে গ্রামীণ পল্লী মেলার নামে জুয়ার আসর বসানো হয়েছিল।
প্রশাসনের নাগের ডগায় বসে এমন কর্মকাণ্ড চালালেও প্রশাসন রয়েছে নিশ্চুপ। উচ্চ আদালতের অনুমতি থাকায় তাদের এই নিরবতা বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড়ে এই ইনডোর গেমের নামে চালিয়ে যাচ্ছেন এই রমরমা জুয়া আর অশ্লীল নাচ-গানের আসর। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে স্থানীয়রা মেলা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে ইনডোর গেম ও গ্রামীণ যাত্রা পালার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এই অনুমতির বলে তিনি র্যাফেল ড্র-এর নামে শতাধিক ভ্যান, অটোরিকশায় মাইক টাঙিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে লোভনীয় উপহারের ঘোষণা দিয়ে ২০ টাকা করে টিকিট বিক্রি করছেন। লটারি বিক্রি উপজেলার সীমা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার, ঈশ্বরদী, চাটমোহর উপজেলায় পৌঁছে গেছে।
শুধু তাই নয় এই অনুমতির বলে তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মেলার প্যান্ডেলে হাউজি খেলা শুরু করেন। এছাড়াও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ডাব্বু, তাসসহ বিভিন্ন জুয়ার আসর। রাত ১২টার পরে চলে গ্রামীণ যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য। এসব দেখেও প্রশাসন না দেখার ভান করছে। ফলে জুয়ার আসরে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ। ফলে এলাকায় ছিচকে চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাতের অন্ধকারেই নয় এখন দিনে দুপুরেও এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও যাত্রা ও অশ্লীল গান চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে অসংখ্য বড় বড় মাইক। এতে মাইকের তীব্র শব্দে আগামী আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু এসএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।
উপজেলার কালিকাপুর এলাকার ভ্যানচালক নবীর উদ্দীন জানান, সরাদিন ভ্যান চালিয়ে মাত্র দুশ টাকা রোজগার করেন তিনি। তিনি রোজগারের টাকা দিয়ে ১০টি লটারির টিকিট কিনে মেলার মাঠেই বসে থাকেন লটারি ড্র হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
এদিকে সারাদিনের রোজগারের টাকা দিয়ে টিকিট কেনার ফলে পরিবারের সদস্যদের জন্য চাল-ডালও কেনা হলো না তার।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কাদের মিয়া জানান, তার কাছে কাজ করা শ্রমিকরা সন্ধ্যার পর আর দোকানে কাজ করতে চায় না। কোনো রকমে তাদের আটকিয়ে রাখলেও দোকান বন্ধের পর তারা চলে যায় জুয়ার মাঠে। সারাদিনের আয় রোজগার সব ঢেলে দিয়ে আসে জুয়ার পেছনে। তাদের মতো খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রেণির মানুষই বেশি কিনছে লটারি। কিছুই না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, মেলার মাইকের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় রাতে এমন শব্দের কারণে কেউ সঠিকভাবে ঘুমাতেও পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্বাধীনতা উদযাপন মেলার পরিচালক জাঙ্গাঙ্গীর হোসেন ভূইয়া সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাংবাদিকের চোখে সবই অবৈধ। তারা ভালো কিছুই দেখতে পায় না। উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে মেলা চালানো হচ্ছে, এটা চলবে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খান বলেন, তাদের হাতে উচ্চ আদালতের অর্ডারের কপি দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, তারা এ বিষয়ে অসহায়। আরো কিছু জানতে চাইলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানান।
বড়াইগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বলেন, আদালতের আদেশ থাকায় তারা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছেন না।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)
