রোহিঙ্গা তাড়িয়ে এবার সীমান্তে বেড়া দিচ্ছে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা তাড়িয়ে এবার সীমান্তে বেড়া দিচ্ছে মিয়ানমার

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক:

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে বাংলাদেশের সাথে ১৭০ কিলোমিটার সীমান্তের বাকি থাকা ৪০ কিলোমিটার দ্রুত কাটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জ থায়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে দেশটির দৈনিক 'দ্য ইরাওয়াদি'।

দ্য ইরাওয়াদিকে তিনি জানান, বেড়া নির্মাণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে চলতি অর্থবছরে কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। তবে যেকোনো উপায়ে এই বেড়া নির্মাণ করা হবে।

এজন্য আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। আমরা জানি না টাকা কোথা থেকে আসবে, তবে যে কোন উপায়ে এ বেড়া নির্মাণ করা হবে। গত বুধবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির কার্যালয়ে রাখাইন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি এ কথা জানান।

ওই দিন সুচির কার্যালয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয় যেখানে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট, স্টেট কাউন্সিলর সুচি, ডিফেন্স ও নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যসহ সরকার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

মিয়ানমারের উচ্চ কক্ষের আইনপ্রণেতা ও আরাকান ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) নেতা ইউ কিন মং ইরাওয়াদিকে বলেন, সংসদে বেড়া দেওয়ার জন্য বাজেটের বিষয়টি উত্থাপন করতে তা পাস হবে। তিনি বলেন, বেড়া দেওয়া জরুরি। আমাদের সীমান্তে বেড়া অত্যন্ত দুর্বল হওয়াতেই সমস্যা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় মিয়ানমার সীমান্তের বেড়া অত্যন্ত নিম্নমানের। এগুলো ভেঙে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্তে জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের উদ্দেশ্য মূলত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন রোধ করতে এবং তাদের রাখাইন রাজ্যছাড়া করতে। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলাকালে এই কাঁটাতারের বেড়া কেটে দেওয়া হয় যাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে পারে। এবার রোহিঙ্গা নির্মূলের চূড়ান্ত অভিযান চলছে। প্রায় কাজ তারা এগিয়ে এনেছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। অল্প কিছু আছে তাদেরকেও বেড়া নির্মানের আগেই অত্যাচার করে বের করে দেবে অথবা হত্যা করে ফেলবে।  

এদিকে, আন্তর্জাতিক কোনো চাপকে গ্রাহ্যই করছে না মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের তারা অনুপ্রবেশকারী মনে করে। আর তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়ে সীমান্ত সিল করে দিতে চায় মিয়ানমার।

রাখাইনে ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গার বাস ছিল। এখন তার প্রায় সাত লাখই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাকিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।  

গত বছর মিয়ানমারে অভিযানের সময় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। চলতি বছর ২৫ আগস্ট অভিযানের পর এই সংখ্যা দুই লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর তার আগে থেকেই প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বৈধ-অবৈধভাবে বাংলাদেশে ছিল। ২০০৫ সালের পর বারবার আশ্বাস দিয়েও বাংলাদেশ থেকে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমার আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত নেয়নি।  

বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা বাস করছে। অনেকেই সেখানে গেছে বাংলাদেশি পরিচয়ে। অর্থাৎ, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা নির্মূলে মিয়ানমার তার লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। 'এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। এসময় রোহিঙ্গারা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করে।

সম্পর্কিত খবর