‘অস্টিওপোরোসিস’ থেকে মুক্তি পেতে দরকার সচেতনতা

‘অস্টিওপোরোসিস’ থেকে মুক্তি পেতে দরকার সচেতনতা

অধ্যাপক ডা. মো. শাহ্ আলম

প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ২০ অক্টোবর পালিত হলো বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস। ‘অস্টিও’ মানে হাড় এবং ‘পোরোসিসি’ মানে ঝাঁঝড়া বা ছিদ্র হওয়া। হাড়ের ছিদ্র বা ঘনত্ব কমে যাওয়াকে হাড়ের ক্ষয় রোগ বা অস্টিওপোরোসিস বলে। এ রোগটি সব বয়সী লোকেরই হতে পারে।

তবে ৪০-৫০ উর্দ্ধদের আশঙ্কা একটু বেশি থাকে। পুরুষের তুলনায় নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন।

অস্টিওপোরোসিস বিষয়ে লিখেছেন বাংলাদেশ স্পাইন এন্ড অর্থোপেডিক হাসপাতাল লিমিটেডের চিফ কলসালটেন্ট সার্জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শাহ্ আলম 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৫ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত। ঋতুশ্রাব বন্ধ হওয়া ৩০-৪০ ভাগ নারীদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি, যাকে বলে পোস্টম্যানোপোজাল।

এছাড়াও হরমোন জনিত সমস্যা, অতিমাত্রায় স্টেরয়েড প্রয়োগ, তৈলাক্ত বা শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, ধুমপান ইত্যাদি কারণে এ রোগ বাড়ছে।

সামান্য কারণেই হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে
সারা বিশ্বে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। প্রতিদিনই এ সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বাইরে থেকে বোঝা যায় না বলে একে সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়। শারীরিক চাকচিক্য দেখে কোন ভাবেই বুঝবেন না যে, আপনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক সময় সামান্য হোঁচটেই হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। বিশ্বে প্রতি ৩ সেকেন্ডে ১ জনের হার ভেঙ্গে যাবার ঘটনা ঘটছে। আর একটি হাড় ভাঙ্গার সাথে সাথে অন্যান্য জটিলতায় বিশ্বে প্রতি ৯ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে।  

যখন হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে
অস্টিওপোরোসিস হলে হাড় ভাঙ্গার প্রবণতা সবচাইতে বেশি লক্ষ করা যায় নিতম্বে অর্থাৎ হিপ জয়েন্টে। এর পর মেরুদন্ডের হাড় বেশি ভেঙ্গে যায়। সেই সাথে কবজি ও কাধের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে।  
সমস্যা হলো, কোন একটি হাড় ভেঙ্গে গেলে অন্য আরো একটি হার ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। নিতম্বে অর্থাৎ হিপ জয়েন্টে হাড় ভেঙ্গে গেলে ২৫ শতাংশ লোক নানাবিধ জটিলতায় মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এর সংখ্যা স্তন ক্যান্সার ও হৃদরোগে মৃত্যুর চেয়েও বেশি। সারা বিশ্বে প্রায় প্রায় ৫০ কোটি মানুষ অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত।

বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস
অস্টিওপোরোসিসের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ১৯৯৬ সালে ইউনাইটেড কিংডমে (ইউকে) প্রথম অস্টিওপোরোসিস দিবস হিসেবে ২০ অক্টোবর উৎযাপন করা হয়। ১৯৯৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্টিওপোরোসিস ডে হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ও অন্যান্য সংস্থাকে এই রোগের ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য উৎসাহিত করে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্খা সারা বিশ্বের মানুষকে অস্টিওপোরোসিসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করতে, ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ৮০০র মত বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সংস্থা ও এনজিও সম্পৃক্ত হয়ে একযোগে ২০ অক্টোবর ‘বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস’ পালন করে আসছে।


বাংলাদেশ স্পাইন এন্ড অর্থোপেডিক হাসপাতাল ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে। আমাদের মূল লক্ষ্য, এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ করাসহ অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান সম্পর্কে ধারণা দেয়া।
করণীয়
অস্টিওপোরোসিস হলে ভয়ের কিছু নেই। ওষুধের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপ্রচারের প্রয়োজন হয়। তবে সচেতনতাই পারে এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে।  
এজন্য কিছু করণীয় হলো :

  • আমাদের খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। তৈলাক্ত ও শর্করা জাতীয় খাবার পরিমিত খেতে হবে।  
  • নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। নিজেকে আরো কর্মঠ করতে হবে। কায়িক শ্রমের কর্মঘন্টা বাড়াতে হবে। দিনে কমপক্ষে ১ ঘন্টা ব্যায়াম করতে হবে।  
  • সপ্তাহে ৪-৫ দিন (সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে) কমপক্ষে আধা ঘন্টা করে হলেও সূর্যের আলো শরীরে লাগান। এতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়।
  • ধুমপান ও মদ্যপান থেকে নিজেকে ও অন্যকে বিরত রাখুন।
  • ছোট মাছ ও সবজি খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করুন।
  • প্রতিদিন টাটকা ফলমূল খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।