পাগলা মসজিদে তিন মাসে জমেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা

সংগৃহীত ছবি

পাগলা মসজিদে তিন মাসে জমেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা

অনলাইন ডেস্ক

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার পাওয়া গেল ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এর আগে এত টাকা আর কখনো পাওয়া যায়নি।

শনিবার সকাল থেকে টানা ১৫ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস গণনা শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মসজিদের পক্ষ থেকে জানানো হয় টাকার পরিমাণ। তাছাড়া কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কাজী মহুয়া মমতাজও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক। এ কর্মকর্তা আরও জানান, দেশি নগদ টাকা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও পাওয়া গেছে সিন্দুকে।

তিন মাস ২০ দিন পর আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খোলা হয় মসজিদের নয়টি দানবাক্স বা সিন্দুক। জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের তত্ত্বাবধানে সিন্দুকগুলো খোলা হয়।

এসময় দানবাক্স খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়কসহ বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। দানবাক্স খোলা ও গণনাকে ঘিরে মসজিদসহ আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আড়াই শ লোক সকাল থেকে রাত অবধি টাকাগুলো গুনে শেষ করেন।

জানা গেছে, এর আগে গত ১৯ আগস্ট আরেকবার মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। সেদিন পাওয়া যায় ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এছাড়া গত ৬ মে খোলা হয়েছিল দানবাক্স। তখন সেখানে পাওয়া যায় ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।  

সকালে নয়টি সিন্দুক খোলার পর টাকাগুলো বস্তাবন্দী করা হয়। এতে প্রয়োজন পড়ে ২৩টি বস্তা। পরে বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সারাদিন চলে গণনাপর্ব। টাকা গণনায় সহযোগিতা করে রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় মাদরাসার ১৩৮ জনসহ মোট ২৫০ জন। প্রসঙ্গত, পাগলা মসজিদের টাকা রূপালী ব্যাংকে রাখা হয়ে থাকে।

মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র।

স্থানীয়রা জানায়, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে থাকে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসে পাগলা মসজিদে। দান করে মোটা অংকের টাকা।

মসজিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের সহযোগিতা করা হয়। তাছাড়া ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।

মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দানের টাকায়  মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৩০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরও নানা আয়োজন। কমপ্লেক্সের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ।

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের সাথে পাগলা মসজিদের পরিধির সঙ্গে বেড়েছে খ্যাতিও।

এই রকম আরও টপিক