তৃতীয়বার মিসরের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে সিসি

সংগৃহীত ছবি

তৃতীয়বার মিসরের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে সিসি

অনলাইন ডেস্ক

টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার পথে মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ এল-সিসি। সুস্পষ্ট কোনো প্রতিযোগী না থাকায় রোববার (১০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য দেশটির জাতীয় নির্বাচনে সিসির জয় প্রায় সুনিশ্চিত।

নির্বাচিত হলে সিসিকে বেশকিছু সংকটের মোকাবিলা করতে হবে। একদিকে যেমন মিসরের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে, ঠিক তেমনি মিসর থেকে ইউরোপগামী অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

মিসরের দুর্বল অবস্থান আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে- এই ভেবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঘুম এখন হারাম হওয়ার পথে।

২০২২ সালে মিসরের সরকারি ঋণ ছিল জিডিপির ৮৮ শতাংশ, যা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোর গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। গত জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত মিসরে মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ছিল ৩৫ শতাংশের বেশি। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই আয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এবং মানুষ সস্তা খাবার ও অন্যান্য পণ্য কেনার মধ্য দিয়ে তাদের খরচ বাচানোর চেষ্টা করছে।

এতোকিছুর পরও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সিসির জয়কে অবশ্যম্ভাবী মনে করছেন। জেনে নেওয়া যাক কী কী কারণে সিসি জিততে চলেছেন আজকের নির্বাচনে:

৯ বছরে পোক্ত করেছেন নিজের অবস্থান

বিগত ৯ বছর ধরে সিসি মিসরের সর্বময় ক্ষমতার আসনে অধিষ্টিত আছেন। এই সময়কালে তিনি তার অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। হিশাম কাসেমের মতো যারাই তার সমালোচনা করেছেন সবাইকে তিনি জেলে পাঠিয়েছেন। এমনকি ২০১৯ সালে এক সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদ ছয় বছরে উন্নীত করেছেন। দেশের রাজনীতিকে কুক্ষিগত করার অভিযোগ তুলে সিসির প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী আহমেদ এল-তানতাবী গত অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে নেন। যার ফলে আজকের নির্বাচনে মূলত সিসির প্রতিপক্ষ বলতে আর কেউই অবশিষ্ট নেই।

অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে পারেন সিসি

মিসরের অর্থনীতি চরম সংকটের মুখে পতিত হয়েছে। দেশের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের যোগান দিতে পারছে না মিসরের সরকার। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের স্বল্পতা দেখা দেওয়ার পর থেকে মিসরে অস্তিত্বের সংকট শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, মিসরের দারিদ্র্যতার হার বর্তমানে ৩০ শতাংশের বেশি। দ্রব্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অনেক পরিবারকে পথে বসিয়েছে। ডলারের বিপরীতে মিসরীয় পাউন্ডের দাম অর্ধেকেরও বেশি নেমে গিয়েছে, রাষ্ট্রীয় ঋণের পরিমাণ ৪২.২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলিয়ে, মিসরের অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের প্রয়োজন, যা সিসির মাঝেই পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।

আঞ্চলিক প্রভাব ও ভারসাম্য

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে মিসরের প্রভাব বিগত কয়েক বছরে বেশ খানিকটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পাশের দেশ লিবিয়া ও সুদানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য রাষ্ট্র প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। তবে অনেকেই মনে করেন, মিসর সফলভাবে বিভিন্ন সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীকে দমন করেছে এবং এখনো দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার লড়াইয়ে একটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা সংক্রান্ত চুক্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে মিসরের সালিশি ভূমিকা পালনকে উদাহরণ হিসেবেও দেখাতে চান অনেকে। মধ্যপ্রাচ্যে মিসরের এই শক্ত অবস্থানের পেছনে তাই রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সিসির ভূমিকা অনস্বীকার্য বলেই মনে করছেন রাজনীতি বিশারদেরা।

অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগতে থাকা একটি দেশকে এবং যুদ্ধ দ্বারা জর্জরিত একটি অঞ্চলকে তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সিসি কিভাবে নেতৃত্ব দেবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

news24bd.tv/ab