বিএনপির লাভ ক্ষতি !

বিএনপি-ফাইল ছবি।

বিএনপির লাভ ক্ষতি !

অনলাইন ডেস্ক

টানা ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এর মধ্যে এক যুগেরও বেশি সময় কেটেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। গত দেড় বছর দলটি ছিল সরকারকে পদত্যাগ করানোর বিভিন্ন কর্মসূচিতে। ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছেড়েছে বিএনপি।

এরপর দীর্ঘ আন্দোলনে সরকারের পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এর কোনোটিতেই সফল হয়নি দলটি। অন্যদিকে বিএনপি এবং তার মিত্র জোটের বর্জনের মধ্যেই টানা চতুর্থবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ফলে নির্দিষ্ট মেয়াদ সরকার ক্ষমতায় থাকলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি আরও কোনঠাসা হবে। এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেক বলছেন , বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সরকার বিরোধী লড়াই করলে ভালো  হতো।
ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতো। কোন অনিয়ম দেখলে ভিডিও করে সেসব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ার পাশাপাশি আন্দোলন জোরদার করতে পারতো। উল্টোদিকে আরেকদল বলছেন,বিএনপি প্রহসনের নির্বাচনে না গিয়ে ভালোই করেছে।  আপোসহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এসব নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিবিসি বাংলা একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি। কিন্তু রাজপথ ওইভাবে গরম করতে পারছিল না।

আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ নয়, ভারত; মন্তব্য রিজভীর

নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে দলটি কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দেয়। নির্বাচনের পর বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো কালোপতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা এবং সারাদেশে। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েও সফলতা পায়নি। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর বিএনপির কতোটা লাভ ক্ষতি হলো এ প্রশ্ন দেখা দেয়।

যদিও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জয়লাভ করেছে। নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখানোর পরও এ নির্বাচন দেশের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ”

তিনি বলেন, "নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে, প্রতিহত করেনি। বিএনপি যদি নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইতো, তাহলে নির্বাচন হতো না। সাতই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ২০০ পার্সেন্ট সঠিক ছিল। ”

কিন্তু বাস্তবে নির্বাচনের পর শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক জোটের সদস্যদের সাথে বৈঠক করেছে বিএনপি। আন্দোলনের ব্যর্থতা ও নির্বাচনের পর সরকার গঠন হওয়া নিয়ে নানা ধরনের মূল্যায়নও করেছেন বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা।

দলের অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশি প্রত্যাশা করেছিল বিএনপি। স্যাংশন দিবে। ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশনের পথ তৈরি করে দিবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিটার হাসও  শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নতুন সরকারকে।

আরও পড়ুন:ভারতকে যে বিষয়ে ভাবতে বললেন মঈন খান

বিদেশি হস্তক্ষেপে বিএনপি ছিল যেন দর্শক

একদিকে ভারত, চীন ও রাশিয়া। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ভিন্ন অবস্থানের বিষয়টি ছিল এবার চোখে পড়ার মতো ছিল।  ভারত প্রকাশ্যে সরকারের স্থিতিশীলতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

এই দ্বিমুখী পরিস্থিতি যেমন ভারত, চীন, রাশিয়া অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ভূরাজনীতি জটিল জায়গায় যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, যত দিন চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বোঝাপড়া না হচ্ছে, তত দিন ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক রাখতেই হবে। আপাতদৃষ্টে বিএনপির আন্দোলন বা ভবিষ্যৎ এই ফাঁদে পড়ে গেছে। বিএনপির ব্যর্থতার চার কারণ :

ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ছিল দুরত্ব

ভোটের হিসাবে ইসলামপন্থী বা এই ভাবধারার লোকজনের একটি অংশকে বিএনপির জনসমর্থনের মূল ভিত্তি বলে মনে করা হয়।  গত কয়েক বছরে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ইসলামি অনেকগুলো দল বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যায়। আবার কোনো কোনো দলকে এড়াতে গিয়ে বিএনপি জোট ভেঙে দেয়। বিপরীতে আওয়ামী লীগ নানা কৌশলে অনেক ইসলামি দলকে কাছে টেনেছে। এর ফলে বিএনপি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার কথা বললেও সে অর্থে আন্দোলন সামগ্রিক রূপ পায়নি। জামায়াতে ইসলামি আন্দোলনে কোনো সাহায্যই করেনি বিএনপিকে।

মাঠপর্যায়ে দলটি সংগঠিত ছিল না

বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনে আত্মত্যাগী নেতাকর্মীর অভাব ছিল। সংগঠিতও ছিল না। বরং অনেক জায়গাতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী  ও নতুন দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনের যোগ দেওয়ার প্রবণতা ছিল।

না ছিল রাজপথে না ছিল কূটনীতিতে এগিয়ে

বিএনপি রাজপথে আন্দোলন যেমন সফল করতে পারেনি তেমনই অন্যদেশের সঙ্গে কূটনীতিতেও পিছিয়ে ছিল। যেমন চীন ছিল বিএনপির শুরুর দিকের পুরনো বন্ধু। সেই বন্ধুকে অনেক আগেই হাতছাড়া করেছে বিএনপি।

ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে দলের সমর্থন বাড়ালেও ভারতের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা কখনোই করেনি দলটি। অথচ প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারত একটি ফ্যাক্টর।

ফিলিস্তিনি হত্যার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানালেও বিএনপি জানায়নি। এতে অনেক নীরিহ মুসলিম সমর্থক অবাক হয়েছেন।

news24bd.tv/ডিডি