অনুমতির শর্ত মানছে না মাটি ব্যবসায়ী, নিশ্চুপ প্রশাসন

৮৮ শতকের পরিবর্তে প্রায় ২০০ শতকের বেশি কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছে।

অনুমতির শর্ত মানছে না মাটি ব্যবসায়ী, নিশ্চুপ প্রশাসন

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ তার পুকুর পুনঃখননের অনুমতির জন্য আবেদন করেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে। বহরপুর ইউনিয়নের ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সুবাহান ওই পুকুরের বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেন এসি-ল্যান্ড হাসিবুল হাসানকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি সমান্তরাল ভূমি কিন্তু বাস্তবে কচুরিপানা, কাদা এবং জলাবদ্ধ একটি জায়গা। ওই জমি পুকুর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এমন তথ্য প্রতিবেদনে ছিল না।

কিন্তু পুকুর হিসেবে মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদের কাছ থেকে ৪/৫ বছরের খাজনা নিয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. সুবাহান। পরবর্তীতে মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ সংস্কারের নামে আবাদি জমিটিতে পুকুর খনন করছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৮ শতকের পুকুর পুনঃখননের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে কোন পুকুরের অস্তিত্ব নেই।

এছাড়াও ৮৮ শতকের পরিবর্তে প্রায় ২০০ শতকের বেশি কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছে।

অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বর্ণিত জমিতে পুকুর খনন করতে হবে। গভীরতার ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা মানতে হবে। সরকারি বা মালিকানাধীন জমিতে প্রবেশ করা যাবে না। পরিবেশ বা কৃষি জমির কোনরূপ ক্ষতি করা যাবে না। খনন কালে পার্শ্ববর্তী রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও গাছপালা বিনষ্ট করা যাবে না এবং সাধারণের যাতায়াতের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। পুকুর খনন কাজের জন্য অন্য কোন দপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন হলে তা সংগ্রহ করতে হবে। তবে পুকুর খননকারী এসবের একটি শর্তও মানেননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বহরপুর ইউনিয়নের তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদের আবাদি জমিতে চলছে নতুন পুকুর খনন। সরকারি রেকর্ডে এটি আবাদি শ্রেণীর জমি। কিন্তু ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাকে বাড়তি টাকা দিয়ে মাটি ব্যবসায়ী এই পুকুর খননের অনুমতি পেয়েছেন।

এ সময় কৃষক মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ কে না পাওয়া গেলেও সেখানে মাটি ব্যবসায়ী মো. জুয়েলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী ৪০ টাকা শতাংশ খাজনা দিয়ে মাটি কাটার অনুমতি নিয়েছি। এটা আমাদের ব্যবসা। জমির মালিককে এককালীন মোটা অংকের টাকা দিয়েছি। আপনারা নিউজ করলে আমাদের ক্ষতি হয়। সেদিনের নিউজের কারণে আমাদের গাড়ি ধরে নিয়ে গিয়েছিলো প্রশাসন। কিছু খরচ করে ছাড়াতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের তারে ঘুড়ি পেঁচানোর ঘটনায় আটক ৬

৮৮ শতকের অনুমতি চেয়ে এত বড় পুকুর কাটছেন কেনো জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, আরও বেশি জমির জন্য অনুমতি চাইলে সারাজীবন এই খাজনা বহন করতে হবে। তাই এই পন্থা অবলম্বন করা।

ফসলি জমির খাজনা পুকুর হিসেবে আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বহরপুর ইউনিয়নের ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সুবাহান কোন উত্তর না দিয়ে ফোন রেখে দেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবুল হাসান বলেন, মাটি কাটার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সেই সকল শর্ত অমান্য করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী খন্দকার রাহাত ফেরদৌস বলেন, মাটি ব্যবসায়ীরা অবাধে সড়ক ব্যবহার করছে। যার ফলে প্রতিটি সড়ক মাটি ফেলে চলাচলের অনুপযোগী করেছে। তারা কখনো আমাদের অনুমতি নেয় না। যেহেতু আমরা গাড়ি আটক করতে পারি না তাই আগামী মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি তুলবো।

news24bd.tv/ab