শেরপুরে দেরিতে উত্তরপত্র ও প্রশ্ন সরবরাহ করায় ২ শিক্ষককে অব্যাহতি

শেরপুরে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার হলে সময়মতো উত্তরপত্র ও প্রশ্ন না দেওয়া এবং আগেই উত্তরপত্র নেওয়ার প্রতিবাদে একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

শেরপুরে দেরিতে উত্তরপত্র ও প্রশ্ন সরবরাহ করায় ২ শিক্ষককে অব্যাহতি

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার হলে সময়মতো উত্তরপত্র ও প্রশ্ন না দেওয়া এবং আগেই উত্তরপত্র নেওয়ার প্রতিবাদে একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টির সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে অবস্থান শুরু করলে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসে তারা বাড়ি ফেরেন। এদিকে এ ঘটনায় ইতোমধ্যে দুই শিক্ষককে পরীক্ষা কেন্দ্রের হলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শেরপুর মডেল গার্লস স্কুল কেন্দ্রের ২০১ নম্বর কক্ষে শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল গার্লস স্কুলের ৪৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই কক্ষে প্রশ্নপত্র সকাল ১০টায় দেওয়ার কথা থাকলেও বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে ১৭ মিনিট পর। আর লিখিত উত্তরপত্র ১০টা ৩০ মিনিট এবং লিখিত প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে ১০টা ৫২ মিনিটে। অথচ উত্তরপত্র নেওয়া হয়েছে ঠিক ১টার সময়।

পরীক্ষা চলাকালে ওই কক্ষের পর্যবেক্ষক শাহাদাৎ হোসেন এবং নাজির আহমেদের অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তোলে পরীক্ষার্থীরা। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পরীক্ষার শেষে কেন্দ্রে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে অবস্থান নেন তারা।

পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে যান শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান। তিনি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। ওইসময় তার আশ্বাসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বাড়িতে ফিরে যান।

২০১ নম্বর কক্ষের পরীক্ষার্থী ও শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোজা জান্নাত জানান, ওই স্যারদের জন্য পরীক্ষার হলে আমাদের আধা ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। অথচ আমাদের বাড়তি সময়ও দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রিপারেশন ভালো থাকলেও আমরা সময়ের অভাবে পুরোটা লিখতে পারিনি। এ দোষ তো আমাদের নয়, তাহলে আমরা কেন ভুক্তভোগী হবো? আমরা এ কেন্দ্র পরিবর্তন চাই এবং জড়িত শিক্ষকদের অব্যাহতি চাই।

আরেক শিক্ষার্থী আফিয়া আফরিন নুন বলে, স্যাররা খাতা ও প্রশ্ন দিয়েছেন দেরিতে। এতে আমাদের সময় নষ্ট হয়েছে ৩২ মিনিট। যে কারণে আমরা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরগুলো ঠিকভাবে লিখতে পারিনি। আমরা সময় বাড়িয়ে চাইলেও দেননি। উল্টো স্যাররা আমাদের সঙ্গে তুই তুকারি করেছেন। এজন্য হলে অনেকেই কান্নাকাটি করেছে। পরীক্ষার সময় বাড়তি কাগজও দরকার হলে সেটিও নিজে উঠে গিয়ে আনতে হয়েছে। কেউ এসে এগিয়ে দেননি।

ওইসময় কেন্দ্রভিত্তিক সমস্যা নিরসন, কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষককে বাতিল এবং কেন্দ্র বাতিল করে অন্য কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান অভিভাবকরাও।

অভিভাবক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ১০ বছর অপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছি। এখন স্যারদের অবহেলার কারণে তাদের রেজাল্ট বিপর্যয় হলে এর দায় কে নেবে?

আরেক অভিভাবক গরীবে নেওয়াজ বলেন, এই পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর ১০ বছরের পড়াশোনার ফল। শিক্ষকদের কারণে এই ফল বিপর্যয় হলে তার দায় নেবে কে? অভিভাবক মাসুদ হাসান বাদল বলেন, সময়ক্ষেপণের কারণে শিক্ষার্থীদের ফল খারাপ হলে সেটির প্রভাব তার সামনের পরীক্ষাগুলোতে এবং শিক্ষাজীবনেও পড়বে। কোনো শিক্ষার্থী যদি আজকের আচরণে কঠিন কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সেটির দায় কি আমরা কেউ এড়াতে পারব?

আরও পড়ুন: দুপুরের পর রাতেও চবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

শেরপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. চাঁন মিয়া বলেন, মডেল গার্লস ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের একটি কক্ষে কিছু সমস্যা হয়েছে শুনেছি। বিষয়টি আমরা আইনানুগভাবে সমাধানের চেষ্টা করব।

এসএসসি পরীক্ষার ওই কেন্দ্রের সচিবের দায়িত্বে থাকা এ্যানি সুরাইয়া মিলোজ বলেন, এমন ঘটনা যাতে আর কোথাও না ঘটে সেজন্য ওই কক্ষের দায়িত্বে থাকা দুই শিক্ষকের অব্যাহতির জন্য উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রের সব দায়িত্ব থেকে ওই কক্ষের দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনা তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে দুই শিক্ষকসহ আরও কারো দায়িত্বে অবহেলার বিষয় প্রমাণ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসাথে ওই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

news24bd.tv/ab