সঠিক চিকিৎসা নিন দাঁত ভালো রাখুন, সুস্থ থাকুন

সঠিক চিকিৎসা নিন দাঁত ভালো রাখুন, সুস্থ থাকুন

মুখের সমস্যা থেকে কী কী রোগ হতে পারে?
মুখের ভেতর নানা সমস্যা হতে পারে, যার মধ্যে দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ, মাড়ির রোগ বা পেরিওডেন্টাল ডিজিজ, মুখের ক্ষত বা ঘা, আঁকাবাঁকা দাঁত, মুখের ক্যান্সার ইত্যাদি। এসব রোগ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা করলে বেশির ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যায়; কিছু রোগ হয়তো জটিলতা তৈরি করে।

আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করা কতটুকু সম্ভব?
যে কোন ধরণের আঁকাবাঁকা দাঁতেরই চিকিৎসা সম্ভব। সাধারণত চার বছর থেকেই আঁকাবাঁকা দাঁতের চিকিৎসা শুরু হয়।

তবে ১২ বছর বয়স থেকে দুধদাঁত পড়ে নতুন দাঁত উঠলে তখন এর চিকিৎসা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। যাঁদের বয়স হয়েছে, তাঁরাও চিকিৎসা করাতে পারবেন। কেননা দুধদাঁত পড়ে আবার ওঠার পর এর গ্রোথ প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে এক্স-রের মাধ্যমে আঁকাবাঁকা দাঁত শনাক্ত করা হয়।
যেসব দাঁত অতিরিক্ত সেগুলো তুলে ফেলতে হয়। এ ছাড়া কিছু স্থায়ী দাঁত, যা অন্য একটি বা দুটি দাঁতের ওপরে বা নিচে অবস্থান করে, সেগুলোও প্রয়োজনবোধে তুলে ফেলতে হয়। নচেৎ খাদ্যদ্রব্য চিবানোয় ঝামেলা তৈরি হয় এবং দাঁত অসমান থাকায় খাদ্যকণাও জমা হয়।

দাঁত শিরশির করার কারণ কী এবং এর চিকিৎসা কী? 
একটি, দুটি দাঁত বা অনেকগুলো দাঁত কখনো শিরশির করতেই পারে। এই অবস্থাকে বলে ডেন্টাল এট্রিশন। এর মূল কারণ হচ্ছে দাঁতের ওপরের সবচেয়ে শক্ত আবরণ বা এনামেল ক্ষয় হয়ে যাওয়া। কোনো কারণে এই এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হলে দাঁতের পরবর্তী অংশ ডেন্টিন বেরিয়ে আসে। এর নিচের অংশই নার্ভ, আর্টারি, ব্লাড ভেসেলস ইত্যাদি থাকে বলে তখন দাঁতটি খুব স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। ওই সময় ঠাণ্ডা বা গরম পদার্থ লাগার ফলে দাঁত শিরশির করতে পারে।
এক্স-রের মাধ্যমে অথবা অনেক সময় খালি চোখেই মাড়ি ও দাঁতের অবস্থান, গর্ত বা ফাটল ইত্যাদি শনাক্ত করা যায়। তখন চিকিৎসা হিসেবে মাড়ি ও দাঁতের সংযোগস্থল থেকে পাথর বা ডেন্টাল প্লাক, খাদ্যকণা পরিষ্কার করতে হয় আল্ট্রাসনিক স্কেলিংয়ের মাধ্যমে। ক্ষয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া ‘লাইট কিউর ফিলিং’ দিয়ে ভর্তি করে দিলে আবার পূরণ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে গ্লাস আইনোমার ফিলিং দিয়েও দাঁতটি ভর্তি করা যায়। তবে অতিরিক্ত ক্ষয়ে যাওয়া বা গর্ত হয়ে যাওয়া দাঁতে রুট ক্যানেল করতে হয়। অনেক সময় দাঁত ব্রাশের সঙ্গে পটাশিয়াম নাইট্রেট সংযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলেও দাঁতের শিরশির ভাব ধীরে ধীরে কমে। শিরশির করা দাঁতের জন্য আমাদের দেশে অনেক ভালো মানের টুথপেস্ট রয়েছে।

দাঁতে পাথর জমবেই—এমন কোনো কথা কি আছে?
না। ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার করলে বা নিয়মিত বৈজ্ঞানিক উপায়ে দাঁত ব্রাশ করলে সাধারনত পাথর জমার আশঙ্কা থাকে না। তবে দাঁতে ময়লা জমতে পারে। দাঁতের গোড়ায় রয়ে যাওয়া আজকের খাবারই কিন্তু আগামী দিন ময়লা বা পাথরে পরিণত হয়।  

দাঁতে কি আসলে পোকা হয়?
এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আমরা যেটা জানি তা হলো, মাইক্রোস্কোপিক অর্থাৎ জীবাণু। কিন্তু প্রচলিত পোকার ব্যাপারটি কুসংস্কার; আদৌ এর কোনো প্রমাণ নেই। একটা সময় মানুষকে তুলার মধ্যে পোকা দেখিয়ে ধোঁকা বা প্রবঞ্চনা দেওয়া হতো, এগুলোর অবশ্য এখন অস্তিত্ব নেই।  

অনেকে দাঁতের চিকিৎসা করাতে চায় না।
দাঁতের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল মনে করে অনেকে এই ভুলটা করে থাকে। অনেকে নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে রোগটিকে বয়ে বেড়ান। এতে দাঁতের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। সবার জানা দরকার, বর্তমানে বাংলাদেশে ২৪টি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি সরকারি। এগুলোতে বলতে গেলে বিনা মূল্যে বা নামমাত্র ১০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেও ডেন্টাল বিভাগ রয়েছে, যেখানে কম খরচে অনেক উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তাই আমি পরামর্শ দেব, কালক্ষেপণ না করে প্রকৃত চিকিৎসক দিয়েই দাঁতের চিকিৎসা করান, দাঁত ভালো রাখুন, নিজে সুস্থ থাকুন।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, সিটি ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা।

news24bd.tv/health

এই রকম আরও টপিক