বেলকুচিতে দুই সন্তানসহ মাকে হত্যা, মামার মৃত্যুদণ্ড

বেলকুচিতে দুই সন্তানসহ মাকে হত্যা, মামার মৃত্যুদণ্ড

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে দুই শিশু সন্তানসহ মাকে হত্যার দায়ে সৎ মামাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডাদেশও দেয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে-খোদা মো. নাজির আসামির উপস্থিতিতে এ দণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আইয়ুব আলী ওরফে সাগর (৩১) উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাঁতী গ্রামের মৃত মকছেদ মোল্লার ছেলে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১ অক্টোবর বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামের নিজ ঘর থেকে সুলতান আলীর স্ত্রী রওশন আরা খাতুন (৩০), তার শিশু ছেলে জিহাদ হোসেন (১০) ও মাহিনের (৩) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রওশন আরার ভাই নুরুজ্জামাল অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং একমাত্র আসামি আইয়ুব আলী সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আইয়ুব আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

জবানবন্দিতে আইয়ুব বলেন, ভুক্তভোগী রওশন তার সৎ ভাগনি। তাঁতের পেশার আয় দিয়ে সংসার না চলায় দেড় বছরে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেন আইয়ুব আলী। কিন্তু ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে আইয়ুব আলী হতাশাগ্রস্ত হয়ে তার সৎ ভাগনি রওশন আরার দ্বারস্থ হন।

২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি রওশন আরার কাছে এসে টাকা ধার চান। কিন্তু রওশন আরা বলেন, তার কাছে টাকা নেই। আসামি আইয়ুব আলী রওশন আরার ঘরের মধ্যে থাকা চারটি ট্রাঙ্ক দেখে ধারণা করেন এর ভেতরে টাকা আছে। তাই তিনি চুরির সিদ্ধান্ত নেন।

দুদিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর আবারও তিনি সৎ ভাগনি রওশনের বাড়িতে যান। রাতে তাদের বাড়িতে থেকেও যান। সবাই এক সঙ্গে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার পর আইয়ুব আলী চাবি নিয়ে ট্রাঙ্কের বাক্স খুলে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে রওশন আরা নড়াচড়া করলে আইয়ুব আলী ভাবেন হয়তো চুরি দেখে ফেলেছেন। তখনই পাথরের শীল দিয়ে ভাগনির বুকে সজোরে আঘাত ও পরে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর তিন বছর বয়সী ছোট শিশু মাহিন জেগে উঠলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং অপর শিশু জিহাদ জেগে উঠলে তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আইয়ুব।

তিনটি হত্যার পর ঘরের চারটি ট্রাঙ্ক খুলে টাকা খুঁজতে থাকেন। কোনো টাকা-পয়সা না পেয়ে ভোরে আইয়ুব আলী বাইরের দরজায় শেকল দিয়ে পালিয়ে যান।

এ মামলায় ১৩জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত এ দণ্ডাদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষে সরকারী কৌশলী এ্যাড. আব্দুর রহমান ও আসামী পক্ষে এ্যাড. নুরে আলম সিদ্দিকী মামলাটি পরিচালনা করেন।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক