কোনো কিছু দিয়ে কি তাঁদের ঋণ শোধ করা যায়?

কোনো কিছু দিয়ে কি তাঁদের ঋণ শোধ করা যায়?

সেরীন ফেরদৌস

করোনা ভাইরাস কবলিত কানাডায় মানুষ বাঁচাতে চিকিৎসক, নার্স এবং অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে দিনে-রাতে কাজ করে যাচ্ছেন, লড়াই করে যাচ্ছেন--কোনো কিছু দিয়েই কি তাঁদের ঋণ শোধ করা যায়! বিনিময়ের প্রত্যাশা করে যে স্বাস্থ্যসেবীরা ঝাঁপিয়ে পরেছেন তাও নয়! তবু কাানডার মানুষ, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট হাউজগুলো যেনো সুযোগ খুঁজছে কৃতজ্ঞতা জানানোর, স্বাস্থ্যসেবীদের ধন্যবাদ জানানোর!

তাই বড় বড় চেইন স্টোরগুলো এগিয়ে এসেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও স্বীকৃতি প্রদর্শনের জন্য। তাঁরা এখন স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘অগ্রাধিকারমূলক সেবা’ দিচ্ছে তাদের বড় বড় চেইন স্টোরগুলোতে।

কানাডার স্বাস্থ্যকর্মীরা, সরাসরি করোনা-আক্রান্তের তো বটেই, তার বাইরেও রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে! স্বাস্থ্যখাত যেহেতু সরাসরি মানুষের রোগব্যাধী, শরীর, মন, মৃত্যু ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে, সেখানে কর্মীদের সংযুক্ত হবার ধরণটি আর দশটি খাতের চাইতে একটু আলাদা, তাদের কাজের চাপও অন্যরকম!

নিয়মিত রোগীর প্রাত্যহিকতার বাইরে হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে গোটা দেশের স্বাস্থ্যখাত টালমাটাল এখন! হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, যাঁরা এখনো রোগী হন নি, তাঁদেরকে প্রিভেনশনের চাপ সরাসরি এসে পরেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর এলোমেলো হয়ে গেছে ডাক্তার-নার্সসহ অন্যান্য কর্মীদের নিয়মিত রুটিন!

তাছাড়া, গত কয়েকমাস ধরেই প্রতিটি সপ্তাহ তাদের কাছে অনিশ্চিত কাজের বোঝা নিয়ে হাজির হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। তাঁরা জানে না, কতক্ষণ ধরে বা কতদিন ধরে তাদের টানা স্ট্রেসফুল কাজগুলো করে যেতে হবে! পাশাপাশি নিজ নিজ সংসারের জন্যও বাজার-সদাইসহ নানা কাজগুলো তাঁদের করতে হচ্ছে।

আমরা সবাই-ই জানি, বর্তমানে দোকানগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে লম্বা লম্বা লাইনের ব্যবস্থা করেছে এবং রেশন করে করে অল্প অল্প ক্রেতা দোকানগুলোতে ঢুকতে দিচ্ছে একই সময়ে! এতে অন্যান্য সময়ের চাইতে অনেক বেশি সময় লাগছে কেনাকাটায়।

সামাজিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতায় প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে এসে স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, দ্রুত প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারে, সেজন্যে তাঁদেরকে অগ্রাধিকারের (প্রায়োরিটি অ্যাকসেস) ভিত্তিতে দোকানে প্রবেশ এবং কেনাকাটর সুযোগ দিচ্ছে দোকানগুলো। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে নিজের পরিচয়পত্র দেখানো মাত্র দোকানগুলো তাদের ভেতরে যাবার এবং কেনাকাট সারার সুযোগ করে দেবে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক চেইনস্টোর কস্টকো, লবলস, শপার্স ড্রাগ মার্ট, লনগোস অগ্রাধিকারমূলক সেবা দিতে শুরু করেছে!

কানাডার অন্যতম বৃহৎ চেইন স্টোর লবলজের সিইও গ্যালেন ওয়েস্টন এক ঘোষণায় বলেছেন, এই কঠিন সময়ে যাঁরাই কাজ করছেন, তাদের সকলের প্রতিই আমরা ঋণী থাকব কিন্তু অসম্ভব শারীরিক ও মানসিক চাপের ভেতর দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

তাঁদের প্রতি আমাদের ঋণ আছে! এই ঋণ খানিকটা শোধ করতে চাই তাঁদেরকে জরুরি জিনিস কেনাকাটায় কিছু বাড়তি সুবিধা দেবার মাধ্যমে! আমাদের অন্য ক্রেতারা প্লীজ, এ ব্যাপারে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন আশা করছি!

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এটা খুব কঠিন সময়। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের স্বীকৃতি এবং ছোট্ট করে ধন্যবাদ দিতে চাই এই প্রক্রিয়ায়!

টরন্টোর মেয়র জন টরি অন্যান্য দোকানগুলোকেও আহ্বান জানিয়েছেন যাতে স্বাস্থ্যখাতের কর্মীরা লম্বা লাইন এড়াতে পারে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, এই দুর্দিনে যেসব কর্মী সামনের সারিতে মানুষকে সেবা দিচ্ছেন, খানিকটা বাড়তি সুবিধা দিয়ে যেনো তাদের প্রতি সুবিচার করা হয়।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: কানাডার কমিউনিটি নার্স।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর