করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত বিশ্ব মানবিকতার বহুমাত্রিকতা আমাদের সামনে দারুণভাবে মেলে ধরেছে। একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যারা বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের টাকা লুটপাট করেছে, যারা মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে, যারা নানাবিধ লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত থেকে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে, সেইসব মানুষরূপী অমানুষগুলো এই বিপর্যয়ে একপ্রকার আত্মগোপন করেই ছিল। তাদের কাউকেই তেমন বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
পাশাপাশি ভিন্ন এক চিত্রও দেখা গেছে, যা ছিল ভালবাসা আর মানবিকতায় পরিপূর্ণ।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের মত ‘যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে’ একদল মানুষ। দেশে-বিদেশে এদের সংখ্যাই দেখি বেশী।আমাদের সিডনিতে যুবলীগের নোমান শামীম, চমন, মহি, রুবেল, আলো, হিমেল, নিউজ২৪ এর অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি তানহা, আরিফ, এবং শাকিল, আরমান, কবিরভাইসহ আরো অনেকে মিলে গত একটানা ৪৫ দিন রান্না করে সিডনির শতাধিক বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বিনামূল্যে দুবেলার খাবার তুলে দিয়েছে। এটা এখনো চলমান।
সার্বক্ষণিকভাবে এই উদ্যোগের সাথে আছেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এনায়েতুর রহিম বেলাল ভাই, সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার নির্মাল্য তালুকদার, সহ-সভাপতি ড. লাভলি রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মতিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আলোক, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান হৃদয়, উবায়দুল হক, ডেভিড বালা, সৈয়দা তাজমিরা ভাবীসহ আরো অনেকে। আর সমস্ত আয়োজনের জন্য দলমত নির্বিশেষে সব রকমের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সিডনির বাঙালিরা। সে আরেক উন্মাদনা, যেন সর্বস্ব উজাড় করে দিতে চায়। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথেও যোগাযোগ করেছেন, আমি তাদের সংগঠকদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি।
এই নামগুলোর সাথে আরেকজনের নাম না বললে মানবিকতার কাহিনী অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। সে আমার অনুজসম রবিন। আড়ালে-আবডালে আমি যাকে আদর করে ডাকি ‘পাগলা রবিন’, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
করোনার এই দুর্যোগে রবিনের পাগলামি এবার চরমে উঠেছে। কোথায় নাই সে? কী করছে না? শামীমদের সাথে আছে, পাশাপাশি নিজের সর্বস্ব নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে। কখনো গাড়িভর্তি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বাসায় বাসায় গিয়ে নিজেই পৌছে দিচ্ছে, আবার কখনো নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিচ্ছে মানুষের হাতে। কেবল সিডনি নয়, বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে ও। সাথে লিটন ভাইয়ের গ্যারাজে সকল বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের গাড়ির সব কাজ ফ্রি। আমি ফেসবুকে দেখি আর যুগপৎ অবাক ও বিস্মিত হই!
কালো টাকা অবৈধ সম্পদের প্রতি মায়া বাড়াতে শেখায়, নিজেকে অমানুষে রূপান্তরিত করে। আর আদর্শ মানুষকে ভালবেসে নি:স্ব হতে শেখায়, অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে শেখায়। এবারের করোনাকালে তা আবার প্রমানিত হলো।
সিডনির এইসব মুজিব সৈনিকের একজন সহযোদ্ধা হতে পেরে আমি গর্বিত। করোনার দু:সময়ে মুজিবাদর্শের এইসব মানবিক যোদ্ধাদের প্রতি হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে আমার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।
চরম প্রতিকূলতায় এখনো নষ্ট হয়ে যাইনি, এ আমাদের এক ধরণের অহংকার। সবাইকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল