এখনো নড়াইলের সেই ধূপের গন্ধ পাই

এখনো নড়াইলের সেই ধূপের গন্ধ পাই

লাকমিনা জেসমিন সোমা

চিত্রার বুকে সন্ধ্যা নামে। নদী পাড়ের দোকানগুলোতে জ্বলে ওঠে মোমবাতি। দোকানিদের ক্যাশের বাক্সে তখন বাড়তি আরাধনা। মহাজনের মুদিখানায় খুব যত্নে জ্বলতে থাকে ধুপকাঠি।

আশপাশের মন্ডপ থেকে অলিগলি বেয়ে নাকে এসে লাগে ধুপের গন্ধ। শঙ্খ, কাসর আর ঢাকের তালে নেচে ওঠে মন।

এমন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা যায়? নাহ! আর তাই পাল্টে যেতো আমার গন্তব্য। বাড়ি না ফিরে চুপিচুপি মন্ডপের দিকে হাটতাম।

তখনও কাঁধে স্কুল ব্যাগ।

প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে মন্ত্র-মুগ্ধ হয়ে দেখতাম মা-দূর্গার রুপ।


 আরও পড়ুন: ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা


ছোটবেলা থেকেই আমার ভিষণ আক্ষেপ, ভিষণ হিংসা সনাতন ধর্মের বন্ধুদের নিয়ে। বছরজুড়ে ওদের কত পূজা, কত উৎসব! আর আমাদের মাত্র দুইটা ঈদ!

মন্ডপ থেকে সোজা চলে যেতাম আব্বুর কাছে। নদীর কূল ঘেষে গড়ে ওঠা ছোট্ট জেলা শহর, ছোট্ট বাজার। কলেজ রোডে সারি-সারি দোকানের একটাতে আব্বুর ওষুধের ফার্মেসী। সকাল-সন্ধা, রাত-বেরাতে আমার সব আবদার, সব আক্ষেপের জায়গা ছিলো ওটা-ই।

আব্বুর হাত ধরে এবার আর চুরি করে না, হেসে-খেলেই মন্ডপে যেতাম। নবমী-দশমীর দিন মন্ডপ ঘিরে বসা মেলায় কিছু কেনারও সুযোগ থাকতো।

তার মধ্যে আমার প্রথম পছন্দ ‘পাপড় ভাজা’। অবশ্য এই আবদার তোলার সাথে সাথে আব্বু একটা ধমক দিতো। তার মতে, কালো পোড়া তেলে ভাজা ওগুলো শকুনের ডিম।  

এমনভাবে বলতো, যেন কোনভাবেই ওটা কিনে দিবে না। কিন্তু প্রত্যেকবারই আবদার পূরণ হতো। শুধু তাই না শেষ পযর্ন্ত আপেল সাইজের বেলুন, চরকা এবং দুই-একটা মাটির খেলানাও কেনার সুযোগ পেতাম।

প্রতিমা বিসর্জের দিন আমার ভিড় ঠেলা লাগতো না। আব্বুর দোকানের পাশেই দিলিপ কাকুর মুদি-দোকানে চলে যেতাম। তার দোকানের পেছনে একটা ঝুল বারান্দা। একেবারে চিত্রা-নদীর উপর।

ওখানে দাড়িয়ে নিরাপদে কাছ থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে পেতাম।
এখনো পূজা এলেই নড়াইলের সেই ধূপের গন্ধ পাই।

চিত্রার পাড়ে ছোট্ট জেলা শহর, নদী কূলের দোকানপাট, বাতাসে ভেসে বেড়ানো উলু ধ্বনি, পূজা মন্ডপ, পাপড় ভাজা… আহা! মনে পড়ছে খুব….আজ মন পুড়ছে খুব!

news24bd.tv নাজিম

সম্পর্কিত খবর