মানবজাতির শীর্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্বের মামলা!

মানবজাতির শীর্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্বের মামলা!

মিল্লাত হোসেন

মানবপ্রগতির উচ্চসীমা (Parameters) গুলোকে মানবজাতির শীর্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক স্বত্ব (Cardinal Intellectual Properties of Humankind), সংক্ষেপে CIPH বলে ঘোষণা করা প্রয়োজন।  

ঠিক কোন জিনিসগুলো CIPH বলে গণ্য হতে পারে, তা কয়েকটি উদাহরণ দিলে বোঝা সহজতর হতে পারে। যেমন- 

করোনার টিকা; ড্রোনপ্রযুক্তি; চন্দ্রাভিযান; পরমাণু শক্তি; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা; রকেট সাইন্স; আন্তঃগ্রহাভিযান (মঙ্গল); জিন সম্পাদনা; ন্যানো প্রযুক্তি; 5G; দূরঅনুধাবন; আন্তঃনাক্ষত্রিক যোগাযোগ (ভয়েজার-১, ২) ইত্যাদি।

প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তার চন্দ্রাবতরণের টেকনিক্যাল Know-how রাশিয়া বা চীনকে; চীন তার 5G সংক্রান্ত জ্ঞান যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানিকে; ফাইজার/মডার্না/সিনোভ্যাক করোনার টিকা বানানোর পদ্ধতি বাংলাদেশের স্কয়ার ফার্মাকে দেবে? তাও মিনি মাগনায়!

মনে হয়, না।

এমনটা করতে বাধ্য করলে বরং বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা, মেধা, শ্রম ঢেলে গড়া অতিকায় প্রকল্প (Mega Project) গ্রহণের চলটাই উঠে যেতে পারে। ফলে, মানবপ্রগতিই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

কারণ, আশরাফুল মাখলুকাত বা অমৃতস্য পুত্রা বলে যতোই মহিমান্বিত করা হোক না কেন- প্রকৃতিগতভাবে মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় প্রাণী (Competitive Animal)। প্রতিযোগিতা না থাকলে সে নিজের বিকাশেও তেমন উৎসাহ পায় না।

অবশ্য, এটাও ঠিক যে- মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত বা Most able creature; সক্ষমতায় নিকটবর্তী প্রাণীটির থেকেও কোটিগুণ এগিয়ে থাকা জানোয়ার!

সেক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত উপায় হলো- সমস্ত technical know-how একটা জায়গায় জড়ো করার উপায় বের করা।

তেমন একটি উপায় হতে পারে বিষয়টি দেখভালের জন্য এমন একটা অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা (Superb State) গঠন করা, যার থাকবে সার্বভৌম ভৌগোলিক অধিক্ষেত্র। এর জল-স্থল-ভূগর্ভ-আকাশের উপর কোন দেশ/জাতীয়তা/সংস্থা'র কোন ধরনেরই অধিকার থাকবে না; অথচ সারা বিশ্বে থাকবে যার কার্যকর বৌদ্ধিক এখতিয়ার (Effective Constructive Jurisdiction)।  


আরও পড়ুন:

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে হামলা সংবিধান, রাষ্ট্র ও জনগণের ওপরে হামলা: আইজিপি

করোনায় দেশে মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়াল

বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে নিয়ে সাকিবের আবেগঘন পোস্ট

শুভ-ফারিয়ার করোনা শনাক্ত, আইসোলেশনে শিহাব

জম্মু-কাশ্মীরে গোলাগুলি, ৫ পাক সেনা নিহত


এহেন অতিরাষ্ট্রটির ভূখণ্ডসহ সকল সম্পদ পুরো মানবজাতি মিলে আনুপাতিক হারে সরবরাহ করবে। যা এমনকী পৃথিবীর বাইরে যেমন- মহাশূন্যে, চাঁদে অন্য কোনো গ্রহে বা ভিন্ন কোনো সৌরজগতেও হতে পারে। একই সাথে এ সকল স্থানেই মানবজ্ঞানের সমান্তরাল মহাফেজখানা থাকবে, যেসব স্থানে সমস্ত Know-how এর প্রতিলিপি জমা থাকবে। যাতে পৃথিবী, চাঁদ কিংবা আমাদের আস্ত সৌরজগতটাতেই যদি কেয়ামত নাজেল হয়, তাতেও যেন মানুষের অর্জিত জ্ঞানসম্ভার অক্ষত থাকে।

সারা বিশ্ব থেকে এই অতিরাষ্ট্রের নাগরিক বেছে নেয়া হবে। কেউ একবার সম্মত হয়ে সংস্থার নাগরিকত্ব গ্রহণ করামাত্রই সেই ব্যক্তি নিজ দেশ/জাতীয়তা হারিয়ে বিশ্বনাগরিক হয়ে উঠবেন। কিন্তু তার জীবনসঙ্গী বা সন্তান বা পরিবারের সদস্যদের কারোরই এই ভূখণ্ড/রাষ্ট্রসত্তায় প্রবেশাধিকার থাকবে না। মানবপ্রগতির সর্বোচ্চ স্তরের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে এর উত্তরোত্তর বিকাশের তরে শহীদ হওয়াই হবে তার মোক্ষধাম।  

এই ভাবনাটা যে খুব সৃষ্টিছাড়া আর ইউটোপীয়- এমন না। রোমান ক্যাথলিক Popedom এর চেয়ে rigorous & regimented সংগঠন।

কালক্রমে Super State ও CIPH এর ধারণা কার্যক্রম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তারপরের ধাপ হবে, একবার কোনো জ্ঞান CIPH বলে স্বীকৃত হলে সেটা আর কোন ভাবেই মানবজাতির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। পারমাণবিক বোমা, ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এই ধরনের জিনিসগুলোর ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হতে পারে। এরপর থেকে কেবল এসবের ইতিবাচক বিকাশই হবে সংস্থাটির ব্রত।

লেখক: মিল্লাত হোসেন, বিচারক

(মত ভিন্ন মত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম