মনোলিথ সুন্দরের স্পর্শ দিচ্ছে

মনোলিথ সুন্দরের স্পর্শ দিচ্ছে

তসলিমা নাসরিন

যখন জিহাদিরা বৈধ ভাবে লাখো মানুষ জড়ো করে বাংলাদেশের শহরে বন্দরে গ্রামে গঞ্জে জিহাদী দাওয়াত দিচ্ছে আর শিল্প সাহিত্য, মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতা, নারীর অধিকার, মানবাধিকার  ইত্যাদির কবর দিয়ে দিচ্ছে, যখন আফগানিস্তানে নারী-সাংবাদিককে খুন করা হচ্ছে, যখন পাকিস্তানে খ্রীষ্টান মেয়েকে খুন করা হচ্ছে যেহেতু মেয়েটির বাবা-মা এক মুসলমান ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়েতে রাজি হয়নি --- তখন ১০ ফুট উঁচু রূপোলি ইস্পাতস্তম্ভ দেখা যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার অরণ্যের ভেতর, পাহাড়ের চুড়োয়, মরুভূমির মধ্যে, জনপদে --  কেউ জানে না কে কখন পুঁতলো রহস্যময় মনোলিথ।

অনেকে ভাবছে বুঝি অন্য গ্রহের কেউ এসব কীর্তি করছে।

মনোলিথের ধারণাটা এসেছে  ১৯৬৮ সালে নির্মিত আর্থার সি ক্লার্কের লেখা স্টেনলি কুব্রিকের ২০০১ঃ এ স্পেস ওডিসি সায়েন্স ফিকশান ছবি থেকে। আমেরিকার ইউটায়  ওই ছবির মনোলিথের মতো একটা মনোলিথ দাঁড় করা হয়েছিল ২০১৬ সালে, পরে উঠিয়েও নেওয়া হয়েছিল।

কে দাঁড় করেছিল, কে উঠিয়ে নিয়েছিল কেউ জানে না। হঠাৎ কিছুদিন আগে হেলিকপ্টারে চড়ে ভেড়া গুনতে গিয়ে এক বিজ্ঞানীর চোখে পড়লো লাল বালির ওপর চকচকে রূপোলী মনোলিথ। ব্যস, খবর বের হলো, মিডল অব নোহোয়ারে কেউ মনোলিথ পুঁতে রেখেছে। বেশিরভাগ মানুষ ভেবেই নিয়েছে স্পেস অডিসি ছবির মতো অন্য গ্রহের কেউ কাজটি করেছে।
এরপর তো রহস্য ছড়িয়ে পড়তে লাগলো দিকে দিকে। ইউরোপের বেলজিয়াম, চেক রিপাবলিক, ফিনল্যাণ্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোলাণ্ড, রুমানিয়া, রাশা, স্লোভেনিয়া, স্পেন , সুইডেন, সুইৎজারল্যাণ্ড, ইংল্যান্ড, ইউক্রেইনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ প্রত্যক্ষ করলো রূপোলী মনোলিথ। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায়, কলোরাডোয়, মিশিগ্যানে, নেব্রাস্কায়, নেভাদায়, নিউ মেক্সিকোয়, নর্থ ক্যারলাইনায়, পেন্সিলভেনিয়ায়, টেক্সাসে, ওয়াশিংটন ডিসিতে যেখানে কিছুই ছিল না, ম্যাজিকের মতো সেখানে মনোলিথ খাড়া। অস্ট্রেলিয়াতেও। লাতিন আমেরিকার কলোম্বিয়া, প্যারাগুয়ে, পানামায় কথা নেই বার্তা নেই মনোলিথ।

অন্য গ্রহ থেকে পৃথিবীর  চারদিকে মনোলিথ ফেলা হচ্ছে, মানুষ এরকম ভাবতে পছন্দ করে। কিন্তু আমার মনে হয় বিভিন্ন শহরের শিল্পীরা এই রহস্যময় কাজটি করছে, কাউকে না জানিয়ে, কেউ যেন না দেখে, কেউ যেন না বোঝে, চুপ চুপ করে অদ্ভুত কোনও জায়গায় গিয়ে পুঁতে  আসছে মনোলিথ।

পথচারীরা যখন দেখবে, থমকে দাঁড়াবে, ভেবে কূল পাবে না এ কোত্থেকে এল।

সারা পৃথিবীতে ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তার চেয়ে কত ভালো যে সারা পৃথিবীতে এক রহস্যে ঘেরা মনোলিথ গাঁথা হয়ে যাচ্ছে, কেউ জানে না কে বা কারা এর পেছনে। কেউ এখনও জানায়নি কে করছে এসব, এই না জানানোটাই ব্যাপারটায় রহস্যের সঙ্গে সৌন্দর্য যোগ করেছে।

আরও পড়ুন: সিনহা হত্যা: ওসি প্রদীপসহ ১৫ জন অভিযুক্ত

অহেতুক টাকা নেয় হাসাপাতাল !

মানুষের অসভ্যতা, বর্বরতা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। ভাইরাস, রোগশোক,  মৃত্যুও    ছড়িয়ে গেছে। মনোলিথও সর্বত্র ছড়িয়েছে। অসুন্দর যখন গ্রাস করে নিচ্ছে, তখন সুন্দর তার পরশ দিচ্ছে আমাদের।

news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর