যে কারণে খুন করা হয় রাজীবকে!

যে কারণে খুন করা হয় রাজীবকে!

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, গাজীপুর:

কোনোভাবেই রহস্য উম্মোচিত হচ্ছিল না গাজীপুরের কাপাসিয়ার আলোচিত রাজীব হত্যার। কেন কি কারণে রাজীবকে হত্যা করা হয় তারও কোনো কূলকিনারা মিলছিল না। অবশেষে হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পর মূল হোতা শাহীনকে গ্রেপ্তার করে খুনের রহস্য উম্মোচিত করে পুলিশ।

গত রোববার বিকেলে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নরসিংদীর পলাশের চরসিন্দুর বাজার থেকে শাহীনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই হত্যা করেছে বলে পুলিশকে জানায়। কাপাসিয়া উপজেলা শহরে মাদক ব্যবসা, পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতানোসহ নানা অপরাধের বিষয় জেনে ফেলার কারণেই রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে বলে শাহীন জানায়।  

শাহীন কাপাসিয়া থানার সোর্স হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দেখায়ে একের পর এক অপরাধ করে বেড়াতো। সে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ, আদালতপাড়া, জুনিয়া, সাফাইশ্রীসহ কয়েকটি এলাকায় অপরাধের রামরাজত্ব কায়েম করতো বলে জানা গেছে।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধাড়াল দা ও আলামত উদ্ধার করতে শীতলক্ষ্যা নদীর সাফাইশ্রী মঠখোলা এলাকায় গাজীপুরের ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল দীর্ঘ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।  

গ্রেপ্তারকৃত শাহীন ইসলাম (৩৪) নরসিংদীর মনোহরদীর চালাকচর এলাকার শহীদুল্লার ছেলে বলে জানা গেছে। সে কাপাসিয়ার সাফাইশ্রীর নানা আব্দুল রশিদের বাড়িতে বসবাস করে থানা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। তার মা কাপাসিয়া থানায় রান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। শাহীনের বিরুদ্ধে মনোহরদী থানায় ডাকাতিসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফজাল হোসাইন বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর সকালে কাপাসিয়ার সাফাইশ্রী এলাকার শ্মশানঘাটে এক অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। লাশের সন্ধান পাওয়ার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর জানা যায় মরদেহটি সাফাইশ্রী এলাকার সুভাষ চন্দ্র ধরের ছেলে রাজীব ধরের (৩৩)। সে ইস্টার্ন ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ড্রাইভারদের দেখাশোনা করত। কয়েকমাস আগে চাকরি থেকে বরখাস্থের পর বাল্যবন্ধু শাহীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এ ঘটনায় রাজিবের মা প্রতিভা রাণী ধর অজ্ঞাত নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা (নম্বর- ১০) দায়ের করেন। এরপর ছায়া তদন্তে নামে কাপাসিয়া থানা পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও র‌্যাপিট এ্যাকশন বেটালিয়ন (র‌্যাব)। সকল সংস্থা হত্যার রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হলেও ক্লুলেস মামলাটি আলোর মুখ দেখায় কাপাসিয়া থানার পরিদশর্ক (তদন্ত) আফজাল হোসাইন।

ঘাতক শাহিনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, চাকরি থেকে বরখাস্থ হওয়ার পর নিজের গ্রামে ফিরে নেশায় জড়িয়ে পড়ে নিহত রাজীব। নেশার সূত্রে ঘাতক শাহিন ও রাজীবের মধ্যে ঘনিষ্টতা হয়। শাহীন ও রাজীব এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ছিল। অন্যদের মেরে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদক ও টাকা কেড়ে নিত। তাদের দলের আরও কয়েকজন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এরাই এলাকায় একটি বেনামি গ্যাং তৈরি করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে হিংস্র ও বদমেজাজি শাহীনের নিত্যদিনের কাজই ছিল নানা অপরাধ। সে পুলিশের সোর্স থাকার সুবাধে এলাকায় অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা এলাকার নিরীহ মানুষ ও মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশী হয়রানিতে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। এমনকি পুলিশের ভয় দেখিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও টাকা, মাদক কেড়ে নিত। তারা খুবই হিংস্র প্রকৃতির ও পুলিশের সোর্স হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলত না।

এরই প্রেক্ষিতে শাহীনের সকল অপকর্ম রাজীবের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ভাটা পড়ে শাহিনের রাজত্বে। সেই সঙ্গে ফাটল ধরে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে। এ জন্য বেশ ক্ষুব্ধ ছিল শাহীন। অন্যদিকে শাহিনের আপন ছোট ভাই ওসমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায় রাজীবের। ওসমানও বড় ভাইয়ের মতোই হিংস্র প্রকৃতির। ওসমান ও রাজীব প্রতিনিয়ত এক সঙ্গে গাঁজা, ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি নানা অপকর্ম শুরু করে। নিজের বন্ধু ছোট ভাইয়ের নেশার পার্টনার, এটি মানতে পারছিল না শাহিন। এ নিয়ে অপর সহযোগীদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাজীবকে হত্যার।  

পুনরায় রাজিবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতির চেষ্টা চালায় শাহিন। পরিকল্পনা মতো গত ১১ ডিসেম্বর দিনভর রাজীবের সঙ্গে সময় কাটিয়ে হোটেলে খাবার খেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় শাহিন। সেই ঘরের কক্ষে ছিল শাহীনের আরেক সহযোগী বাসু। যার জন্য দুজন বাইরে থেকে খাবার পার্সেল করে নিয়ে যায়। অল্পক্ষণ আড্ডা দিয়ে রাজিব নিজের বাড়িতে চলে যায়। আর রাত সাড়ে ১২টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের সাফা-মারওয়া জেনারেল হাসপাতালের ঘাটে গিয়ে রাম দা ধার দিতে থাকে শাহিন।

দা ধারানোর বিষয়টি দেখতে পায় এলাকার তন্ময়, পবিত্র ও সুমন। তখন শাহীন তাদের শ্বাসায়ে চলে যেতে বলে। পরে রাতে শাহীন রাজীবকে বাসা থেকে ডেকে নেয় শ্মাশানঘাটে। ওখানে শাহীন তার অন্য সহযোগি ও রাজীবকে নিয়ে মাদক সেবন করে। এ সময় শাহীন রাজীবকে বারবার বলে তোকে আজ মেরে ফেলব। উত্তরে রাজীব বলে তুই আমার বন্ধু। এমন কাজ কখনোই করতে পারবি না জানি। পরে রাত পৌনে ২টার দিকে শাহীন ধাড়াল দা দিয়ে রাজীবকে এলোপাথারী কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে চলে যায়। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। ঘটনার দুদিন পর মৃতদেহ শনাক্তের বিষয়টি জানতে পেরে শাহীন আত্মগোপনে চলে যায়।

এদিকে নিহত রাজীবের মা প্রতিভা রাণী ধর ও জেঠাতো ভাই বাসুদেব ধর বলেন, আমরা রাজীব হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে চাই এবং দৃষ্টান্তমূল বিচার দাবি করছি।


এবার ‘ওলে ওলে’ গান নিয়ে হাজির হিরো আলম (ভিডিও)

সৌদি আরবে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত

এবার চালকবিহীন যুদ্ধ হেলিকপ্টার তৈরি করল তুরস্ক

সাংবাদিকদের জন্য ইউএসএআইডির সিরিজ কর্মশালা


নিউজ টোয়েন্টিফোর / কামরুল