মা জায়নামাজেই ঘুমিয়ে যেতেন

মা জায়নামাজেই ঘুমিয়ে যেতেন

অনলাইন ডেস্ক

প্রতিদিন ভোরে প্রায় একই সময়ে ঘুম ভাঙে আমার। এটা একটা অভ্যাস। মানুষ অভ্যাসের দাস। আমার কখনো এলার্ম দরকার হয় না।

আমি যখন বিদেশে হোটেলে থাকি, আমার ওয়েকআপ কল লাগে না। আমি আমার মস্তিস্ককে বলে রাখি আমি ভোর চারটায় উঠব, এক ঘন্টায় রেডি হবো, তারপর সময়মতো এয়ারপোর্ট পৌঁছে যাব।

মস্তিস্ক আমার কথা শোনে। আমি ঠিকঠাক মতো উঠে যাই।

মস্তিষ্কের চীপে অটো এলার্ম হয়ে যায়। আমার কখনো দেরির কারণে বা সময়মতো রেডি হতে পারিনি বলে ফ্লাইট মিস হয়নি।

যখনই আমার কোথাও যাওয়া থাকে আমি চেষ্টা করি এভিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী অন্ততঃ আড়াই তিন ঘন্টা আগে এয়ারপোর্ট পৌঁছে যেতে।

সময়মতো চেক ইন করতে। আমার ছেলে মেয়েরা এটা নিয়ে মজা করে। কিন্তু তারা জানে বাবাকে ঠিক সময়মতো পৌঁছে দিতে হবে তাই তারা দু’জনই স্টান্ডবাই থাকে।  

ফ্লাইটের প্রসঙ্গ আসতেই মনটা কেমন আনমনা হয়ে গেলো হঠাৎ। ঠিক এ রকম সময়ে প্রতিবছর আমার দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি থাকে। ফেব্রুয়ারীর ১ তারিখ থেকে বইমেলা শুরু হয়। নতুন বই, তার ঘ্রাণ, লেখক, প্রকাশক, পাঠক। সারা বছরের অপেক্ষা থাকে আমার।  

এ বছরও অনন্যা থেকে দুটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু বইমেলা হচ্ছে না! হয়ত না হওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। আবার এটাও ঠিক যে বইমেলা এবং প্রকাশনা শিল্পের সাথে হাজার হাজার মানুষ জড়িত। এই মহামারির জন্য অনেকেরই টিকে থাকা কঠিন হবে।  


২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই সংকট ঘনিভূত হচ্ছে: নুরুল আম্বিয়া


প্রতিবছর দেশে যাওয়ার পথে ফাউ হিসাবে কোথাও না কোথাও দু’চারদিন ঢুঁ দিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আমার। সেটা হতে পারে লন্ডন, প্যারিস, দুবাই, হংকং, ইস্তাম্বুল বা ফ্রাঙ্কফার্ট।

বেশি মন আকুপাকু করলে ডিরেক্ট ঢাকা। বই মেলা শেষ করে হাতে কিছু সময় রাখি আমি। তখন কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। কখনো কোলকাতা, কখনো কুয়ালালামপুর, কখনো ব্যাংকক, কখনো কাঠমুন্ড। বরিশালতো আছেই। কিন্তু এবার যে কখন যেতে পারব জানি না।  

পৃথিবীটা কবে আবার সুন্দর হবে! স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পাবে! আবার বরিশাল যাব, বইমেলায় ঘুরব, অটোগ্রাফ দেবো। কত স্বপ্ন দেখি আমি। প্রতিদিন স্বপ্ন বুনি। আবার এটাও মনে হয় এই যে এখনও বেঁচে আছি সেটাই বিস্ময়কর! 

কতজনইতো চলে গেছে। মহামারি কেড়ে নিয়েছে প্রিয়জন। আজও ভোরে ঘুম ভেঙ্গে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে পৃথিবীর জন্য, যারা হাসপাতালে আছে তাদের সুস্থ্যতার জন্য, বাবা মা, ভাই বোন, আত্মীয়, মুরুব্বি, বন্ধু যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন সবার জন্য প্রার্থনা করেছি। সবসময়ই করি।  

আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের জন্য প্রার্থনা করি। স্ত্রী, সন্তান , বন্ধু, আত্মীয় পরিজন সবাইকে ভালবাসি আমি। যারা আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে তাদেরও ভালবাসি। আমার ফেসবুক বন্ধুরা যাদের কখনো দেখিনি, কখনো দেখা হবে না জেনে রাখ তোমাদেরও ভালবাসি।  
 
ফজর নামাজ শেষ করে ঘড়ি দেখি, পৌনে সাতটা। জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি, আধো আলো আধো অন্ধকার বাইরে। পৌনে আটটায় সূর্যোদয় হবে। কিন্তু আজ সূর্য উঠবে না। সারাদিন মেঘলা দিন থাকবে।

সন্ধ্যায় স্নো হওয়ার সম্ভবনা আছে। বাইরে এক অপার্থিব দৃশ্য। কেমন থমকে আছে সবকিছু। ভোরের পাখীদের কুহুতান নাই, পাছের পাতারা নড়ছে না, গাছে পাতাই নেই, দূরে হাইওয়েতে গাড়ির শো শো শব্দ নাই, কবুতরগুলো বারান্দার জানালায় নিঃসার ঝিমুচ্ছে। লোকালয়ে দু’একটা গাড়ির শব্দ শোনা যায়।  

আর ঠিক তখনই মায়ের মুখটা ভেসে উঠে। মা এমনি শীতের দিনে ঘুম থেকে উঠতেন। দূরে মসজিদে আজানের ধ্বনি শুনতে পেতাম। ভোরের নৈশব্দকে বিদীর্ন করে সুমুধুর সুরে ভেসে আসত, আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম..।  

মা উজু করে নামাজে বসে যেতেন। আমি মায়ের কাছে ঘুমাতাম। মা পাশে নাই আমি টের পেতাম। কখনো কখনো মা নামাজ শেষে জায়নমাজেই ঘুমিয়ে যেতেন…

news24bd.tv আয়শা