এক আল্লাহর বিশ্বাস

এক আল্লাহর বিশ্বাস

অনলাইন ডেস্ক

আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস রাখা ঈমানের মূল বুনিয়াদ। আল্লাহর একত্ববাদে সন্দেহ, সংশয় থাকা মানে ঈমানের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করা। সুতরাং ঈমানকে বিশুদ্ধ করার জন্য তাওহিদের মৌলিক বিষয়াদি জানা ও সেগুলোর প্রতি যথাযথ বিশ্বাস রাখা একান্ত জরুরি।

তাওহিদের মর্মকথা : তাওহিদ অর্থ একত্ববাদ।

আল্লাহ তায়ালা নিজ সত্তায়, গুণাবলিতে ও কর্মে একক ও অদ্বিতীয়। সত্তাগতভাবে তিনি অদ্বিতীয়। দুনিয়ার কোনো বস্তু তাঁর সদৃশ্য নয়। গুণাবলির ক্ষেত্রেও তিনি অদ্বিতীয়।
তাঁর গুণাবলি দুনিয়ার মানুষের গুণাবলির মতো নয়। কর্মেও আল্লাহ তায়ালা একক ও অদ্বিতীয়। একজন ঈমানদারের জন্য এসব বিষয়ের প্রতি ঈমান রাখা জরুরি।

সত্তাগতভাবে আল্লাহ একক : সত্তাগতভাবে আল্লাহ তায়ালা একক ও অদ্বিতীয়। সৃষ্টির কোনো বস্তুর সঙ্গে আল্লাহর সত্তার সাদৃশ্য নেই। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, ‘তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোনো কিছুই তার অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন। ’ (সুরা শূরা : ১১)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘বলুন, তিনি আল্লাহ একক। ’ (সুরা ইখলাস : ১)। আল্লাহ তায়ালা বিদ্যমান রয়েছেন, কিন্তু মানুষের মতো তার দেহ নেই। তিনি আরশের ওপর সমাসীন রয়েছেন, কিন্তু কীভাবে কোন অবস্থায় রয়েছেন তা মানুষের চিন্তা ও বোধগম্যের ঊর্ধ্বে।

অফুরন্ত সওয়াব অর্জনের দিন শুক্রবার

ইন্টারপোলের হাতে গ্রেপ্তার দুই বাংলাদেশি গডফাদার

হোয়াটসঅ্যাপ বিতর্ক : বাড়ছে ‘বিআইপি’ ব্যবহারকারি

আল্লাহ তায়ালার হাত রয়েছে, কিন্তু তার আকার-আকৃতি কেমন তা মানুষের জ্ঞানের ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইহুদিরা বলে আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। এ কথা বলার কারণে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হাত উন্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন। ’ (সুরা মায়েদা : ৬৪)। এই আয়াত দ্বারা আল্লাহর হাত থাকা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তা কেমন তা আল্লাহ ভালো জানেন।

গুণাবলিতে অদ্বিতীয় : কোরআন ও হাদিসে আল্লাহ তায়ালার অনেক গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। এর কিছু গুণ বাহ্যত মানুষের মধ্যেও বিদ্যমান আছে মনে হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার গুণাবলির সঙ্গে মানুষের গুণাবলির সাদৃশ্য নেই। আল্লাহ তায়ালা কথা বলেন, কিন্তু তা মানুষের মতো নয়। কোরআন মাজিদে রয়েছে, ‘আল্লাহ মুসার সঙ্গে কথোপকথন করেছেন সরাসরি। ’ (সুরা নিসা : ১৬৪)। আল্লাহ তায়ালা দেখেন, শুনেন, কথা বলেন, কাজ করেন। তিনি জ্ঞানী, বিজ্ঞ, কৌশল অবলম্বনকারী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী, শাস্তি প্রদানকারী, পুরস্কার দানকারী। কিন্তু এসব গুণাবলিতে আল্লাহ তায়ালা অদ্বিতীয়। কোনো সৃষ্টির সঙ্গে এসব গুণের সাদৃশ্য নেই। আল্লাহর দেখা আর মানুষের দেখা, আল্লাহর শোনা আর মানুষের শোনা এক নয়। মানুষ কান ছাড়া শুনতে পায় না, একসঙ্গে অনেক কথা শুনতে ও বুঝতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কান ব্যতীতই শোনার ক্ষমতা রাখেন। তিনি একই সঙ্গে পৃথিবীর তাবৎ শব্দ শুনতে পান ও বুঝতে পারেন। তার দেখা ও শোনা একক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘দৃষ্টিসমূহ তাকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ। ’ (সুরা আনআম : ১০৩)

কর্মে অদ্বিতীয় : আল্লাহ তায়ালা কর্ম সম্পাদনকারী। চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রসহ সাত আসমান ও সাত জমিন আল্লাহ তায়ালা নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব নিয়ন্ত্রণ করে তিনি ক্লান্ত হন না। যখন যা খুশি তাই করেন। আল্লাহ কোনো কাজে বাধাপ্রাপ্ত হন না। কোনো কাজে কাউকে পরোয়া করেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি যা চান তাই করেন। ’ (সুরা বুরুজ : ১৬)

আল্লাহ তায়ালা বিশ্ব জগৎ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ও পশুপাখি সৃষ্টি করেছেন। গাছপালা তরুলতা সৃষ্টি করেছেন। ফল-ফসলে পৃথিবী সাজান। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্ম ও মৃত্যু দেন। এসব কর্মে আল্লাহ তায়ালা একক। তাকে ছাড়া কেউ এসব করতে পারে না। তার ইচ্ছা ব্যতীত কারও মৃত্যু হয় না। আল্লাহর সৃষ্টি করা বিভিন্ন উপাদান একত্রিত করে মানুষ নতুন বস্তু আবিষ্কার করে মাত্র। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই সে সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমিনে রয়েছে সে সমস্ত। ’ (সুরা বাকরা : ২৯)

আল্লাহ একক মাবুদ : ইবাদত পাওয়ার হকদার একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ব্যতীত দৃশ্য বা অদৃশ্য কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। গুণাবলি ও সত্তাগতভাবে যেমন আল্লাহ তায়ালা অদ্বিতীয় ইবাদত পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি অদ্বিতীয়। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদের অসংখ্য আয়াতে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই। ’ (সুরা বাকারা : ১৬৩)

ঈমানের জন্য শর্ত হলো তাওহিদ বা একত্ববাদ। তাওহিদের বিশ্বাস ব্যতীত শুধুমাত্র আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে ঈমান আনলে কেউ ঈমানদার হয় না। মক্কার মুশরিক লোকেরা আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও গুণাবলির প্রতি বিশ্বাস রাখত, কিন্তু আল্লাহকে এসব গুণাবলিতে একক মনে করত না। তারা আল্লাহকে মাবুদ হিসেবে স্বীকৃতি দিত, কিন্তু একক মাবুদ হিসেবে মানত না। তারা মনে করত বিভিন্ন কাজে ও গুণাবলিতে আল্লাহর সদৃশ্য রয়েছে। অথচ কোরআনে আল্লাহ তায়ালা অনেক আয়াতে উল্লেখ করেছেন কেউ তার সমকক্ষ বা সদৃশ্য নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তার সমতুল্য কেউ নেই। ’ (সুরা ইখলাস : ৪)। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের কাফের হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। নবীজি (সা.) তাদের মূর্তি ও দেবদেবীর পূজা পরিত্যাগ করে তাওহিদের পথে চলার আহ্বান করেছেন।

আল্লাহ একক বিধানদাতা : আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং মানবজাতির জন্য বিধান প্রণয়ন করে দিয়েছেন। যুগে যুগে নবীগণ আল্লাহর সেই বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহপ্রদত্ত সেই বিধান এতটাই পরিপূর্ণ যে, মানবজীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় তাতে বিদ্যমান রয়েছে। কেউ যদি মনে করে আধুনিক যুগে চৌদ্দশ বছরের পুরনো কোরআনের বিধান অচল অথবা অপূর্ণ তাহলে তার ঈমান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শুনে রাখ, তারই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। ’ (সুরা আরাফ : ৫৪)। এসব আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র বিধানদাতা। সুতরাং একজন ঈমানদারের কর্তব্য হলো এর প্রতি ঈমান রাখা এবং বাস্তব জীবনে আল্লাহর বিধানকে অনুসরণ করা।

news24bd.tv /আলী