২০ বছর ধরে গরীবদের একবেলা ফ্রি খাওয়ান হোটেল ব্যবসায়ী আজগর

২০ বছর ধরে গরীবদের একবেলা ফ্রি খাওয়ান হোটেল ব্যবসায়ী আজগর

Other

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দুপুরে গরীব ও অসহায় মানুষদেরকে একবেলা ফ্রি খাওয়ান নওগাঁর হোটেল ব্যবসায়ী আলী আজগর। চেষ্টা শ্রম এবং সাধনার মাধ্যমে জয় করা যায় সেটাই প্রমান করেছেন তিনি। নিজে এক সময় গরীব ছিলেন বলে গরীব, অসহায়, ভিক্ষুক, এতিম ও ভবঘুরে মানুষদের একবেলা পেটভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। বিনিময়ে টাকা নেন না।

এতে গরীববান্ধব হিসেবে এলাকায় তার বেশ সুনাম ছড়িয়েছে তার।  

তার বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার মহেষচন্দ্রপুর গ্রামে। বর্তমানে জমি কিনে নওগাঁ শহরের চশরামচন্দ্র মহল্লায় বসবাস করছেন। নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আদালত চত্বরের গেটের প্রধান ফটকের বিপরীতে রাস্তার পশ্চিম পাশে হাজী নজিপুর হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস নামে দোকানটি তার।

news24bd.tv

হোটেল মালিক আলী আজগর বলেন, খুব অভাবের মধ্যদিয়ে কোনো রকমে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। বাবা দুটি বিয়ে করেন প্রথম পক্ষের চারটি মেয়ে আর ২য় বিয়ে করেন আমার মাকে। তার ছয় ছেলে সন্তান। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আমি ছোট। বয়স যখন ১৫ বছর তখন বাবা মারা যান। এরপর ২৪ বছর বয়সে আমি বিয়ে করি। এক বছর পর আমাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান আসে। অভাবের সংসার অন্যদিকে আমাদের যৌথ পরিবারে ভাই বোনদের নিয়ে পারিবারিক নানা কলোহ লেগেই থাকত। এরই এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালে মা এবং ভাই বোনদের ওপর অভিমান করে স্ত্রী ও ৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে নওগাঁতে এসে মল্লিকা নামে এক হোটেলে ২৫ টাকা বেতনে দিন কাজ শুরু করি। বেশ কয়েক বছর হোটেলে কাজ করলাম। হঠাৎ একদিন হোটেল মালিক নওগাঁর পত্নীতলার আলীম উদ্দিন তার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

news24bd.tv

আরও পড়ুন


সুনামগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল

বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ডাকাতি

‘অসম্ভব’ অনন্ত এবার উড়ে উড়ে গুলি ধরছেন (ভিডিও)

কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে মওদুদের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন


পরে হোটেল মালিককে বুঝিয়ে নিয়ে আসি এবং তার দোকান চালানোর জন্য অনুমতি নেই। মালিক বললেন, যদি দোকান চালাতে পার তাহলে চালাও। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এরপর ২ কেজি, ৫ কেজি গরুর মাংস বিক্রি থেকে শুরু করে এরপর অনেক কষ্ট করে আজ পুরোদমে আমি প্রতিষ্ঠিত হোটেলের মালিক। বর্তমানে ৩-৩৫জন হোটেলে কর্মচারী সকাল-বিকাল দুই শিফটে কাজ করেন। শহরে মাথা গোজার একটু জায়গা হয়েছে। মেয়ে ও ছেলে পড়াশোনা করছে। যেখানে সপ্তাহে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩ থেকে ৪০০জন গরীব শ্রেণি বিশেষ করে ভিক্ষুকদের পেট ভরে ফ্রি তে খাওয়ান। এছাড়াও অন্যান দিনে কোনো গরীব অসহায় মানুষ আসে তবে তাদেরও টাকা না নিয়ে খাওয়ান। খাবার মেন্যুতে থাকে মাছ, মাংস, ডিম, ভর্তা, সবজি ও ডাল। হোটেলের সামনে চেয়ার-টেবিলে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে কোনো ছোটো-খাটো একটি অনুষ্ঠান। এভাবে গত ২০ বছর ধরে মানুষদের একবেলা খাবার দিয়ে আসছেন তিনি।

news24bd.tv

হোটেলে খেতে আসা জাহেরা বেওয়া বলেন, খুব গরিব মানুষ বাপো পরিবার থাকা হামাক কেউ দ্যাখে না। ভিক্ষা করা খাই আর বৃহস্পতিবার আসা আজগর বাপোর হোটেলত পেট ভরা খাই কোনো ট্যাকা ল্যাই না।  

বয়োজ্যেষ্ঠ শেফালি বেগম ও তাহের আলীসহ বেশ কয়কেজন বলেন, গরিব মানুষ। ভিক্ষা করে ভালোমন্দ খেতে পারি না। ৩-৪ বছর ধরে এ হোটেলে নিয়মিত খেতে আসি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে কখনো গোশত ও কখনো মাছ দিয়ে পেট ভরে খাবার খাই। আজগরের মতো সমাজের বিত্তবানরা এই ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসলে দেশের চিত্র অনেকটাই পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল।

news24bd.tv আহমেদ

সম্পর্কিত খবর