সাংবাদিকতা ও জনপ্রত্যাশা

হারুন আল নাসিফ

সাংবাদিকতা ও জনপ্রত্যাশা

Other

সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে ওভার-অল সাংবাদিকদের ওপর ক্ষেপে আছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা নেতিবাচক পোস্ট লিখে অনেকেই মনের ঝাল ঝাড়ছেন। আর তাতে বেশ লাইক, সহমত, ধন্যবাদ ও প্রশংসা জুটছে। অনেকে অশ্লীল গালমন্দ করতেও ছাড়ছেন না।

যে যার মতো প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক, সত্য-অর্ধসত্য, মিথ্য-বানোয়াট নানা কাল্পনিক-আজগুবি অভিযোগ নিয়েও সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার ওপর হামলে পড়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। অবস্থা দেখে মনে হয়, সাংবাদিকরাই সব নষ্টের মূল। এদের একহাত নিতে পারলে বা শায়েস্তা করতে পারলেই বোধ হয় একটা হেস্ত-নেস্ত হয়ে যাবে। আসলেই কি?

এমন পরিস্থিতির যে কোনো কারণ নেই তা বলা যাবে না।

আছে। সাবাদিকতায় দোষ-ত্রুটি-বিচ্যুতি, সীমাবদ্ধতা সবই আছে। তা সত্ত্বেও এগুলো টোটাল সাংবাদিকতার চিত্র নয়। যারা এটা নিয়ে পুরো সাংবাদিকতাকে দুষেন তাদের কাছে খণ্ডই সমগ্র। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে? আমার মনে হয়, এর পেছনে রয়েছে সংবাদ মাধ্যমের ওপর মানুষের অতিরিক্ত প্রত্যাশা। কেনো এতো প্রত্যাশা? এরও অবশ্য নানা সামাজিক-রাজনৈতিক কারণ আছে। যা বলা বাহুল্য। মানুষের সব প্রত্যাশা যে ন্যায্য হবে এমন কথা নেই। আবার যার কাছে প্রত্যাশা করা হয়, তার তা অ্যাকোমোডেট করার সামর্থ আছে কিনা সেটা না দেখলে কি চলে?

সাংবাদিকতা বলতে কী বোঝায় এবং আপনি কী বুঝেন তা পরিষ্কার থাকা দরকার। সচেতন মানুষের কাছ থেকে সাংবাদিকতা কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ধারণা থাকার প্রত্যাশাটা অন্যায্য না হলেও বাস্তবে এর দেখা মেলা ভার। সাংবাদিকতার পক্ষে জনপ্রত্যাশার কতোটা পূরণ করা সম্ভব তার তো একটা সীমা আছে। সাধ্যের বাইরে বোঝা কি কেউ বইতে পারে? সাংবাদিকতায় যদি কোথাও কোনো সমস্যা হয় তার কারণ ও সমস্যা নিরসনের উপায় কী- এসব নিয়ে কি ভাবার সময় হয়েছে আপনার? অন্তত এটুক ভাবতে পারেন। রাজি?

তো, আপনাকে ভাবতে হবে আপনি অন্য কোনো উপায় না দেখে সাংবাদিকদের ওপর আপনার সব প্রত্যাশা চাপিয়ে দিয়ে যে নিশ্চিন্তে আরাম কেদারায় পা দোলাতে চাচ্ছেন, আপনার এ প্রত্যাশা কতোটা বাস্তবসম্মত বা সমীচীন। এক্ষেত্রে আপনি উদো মশাই নাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য ঠিক মতো পালন করেছেন তো? নাকি সাংবাদিক বুধোর ঘাড়ে আপনার পুরো পিণ্ডিটাই চাপিয়ে দিয়ে সে সেটা বইতে পারছে না বলে তার ওপর ইচ্ছেমতো চটছেন? ঝাল ঝেড় কৃত্রিম পুলক পাচ্ছেন? লক্ষ্যটা স্রেফ পুলক লাভ হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। না হলে দু’খান কথা আছে। শুনবেন?

সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা কী জিনিস? বিশেষ করে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে। এগুলো আগে বোঝা দরকার। এক লাইনের জাজমেন্টাল কমেন্ট মানুষকে সত্য জানতে দেয় না, বুঝতেও দেয় না। কিছু বেহুদা বাত-চিতই সার হয়। ব্ল্যাক-আউট বা কোনো বিশেষ সংবাদ কোনো বিশেষ হাউসের এড়িয়ে যাওয়া কি নতুন কিছু? আর সেটা আপনি অপর একটা নিউজ আউটলেট থেকে জেনে যান। জানলেন, এখন আপনার করণীয় কী? চুরির খবর না ছাপানোর জন্য পত্রিকা অফিসে হামলা চালাবেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন, নাকি চুরির দায়টা তাদের ওপর চাপাবেন? নাকি অন্য কিছু?

আরও পড়ুন:

 এবার লেবাননকে হুমকি দিলো ইসরাইল

ভারতে তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতন, ঢাকার ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ আটক

জুমার দিনে ‘সূরা কাহাফ’ তেলাওয়াতের ফজিলত

 গাজায় ইসরায়েলের অপরাধের তদন্ত করবে জাতিসংঘ

 

সাংবাদিতকা কি কোনো প্রফেটিক প্রফেশন? সেখান থেকে কী আশা করা যাবে বা যাবে না সেটা আগে ঠিক করা চাই। আপনি যে অর্থে সাংবাদিকতার বস্তনিষ্ঠতা নাই বলে গলা ফাটাচ্ছেন, সে অর্থে কোনকালে কতোটা ছিলো বা বাস্তেবে থাকা কতোটা সম্ভব এগুলো নিয়েও ভাবা দরকার, আলোচনা করা দরকার। আর অপরাধ ও রাজনীতি ছাড়া অন্য খবরের কোনো খবর-বার্তা আপরার আছে? ক্রীড়া, কৃষি, বন, বিজ্ঞান, বিনোদন, শিল্প-সাহিত্য? এসব খবরকে আপনার খবর মনে হয় তো? 

আসলে কী অন্য অনেক বিষয়ের মতো সাংবাদিকতাটাকেও আমরা নানা গোঁজামিল দিয়ে বুঝি। এ বোঝা-পড়ায় পরিবর্তন কাম্য, দরকারও বটে। তা হলে সাংবাদিকতা নিয়ে বেহুদা বাখোয়াজ কমবে আশা করা যায়।

সিনিয়র সাবএডিটর- বাসস (ফেসবুক থেকে নেওয়া)

news24bd.tv নাজিম