সতর্কতার সঙ্গে পুরনো ঢাকার সংস্কৃতি উপস্থাপন করুন

শামছুল হক রাসেল

সতর্কতার সঙ্গে পুরনো ঢাকার সংস্কৃতি উপস্থাপন করুন

Other

ফেসবুকে আমি সাধারণত ছবি অথবা নিউজের কোনো লিংক শেয়ার করি। অনেকদিন পর এবার ফেসবুকের জন্য কি-বোর্ড ধরলাম। তাহলে বিষয়টা একটু পরিষ্কার করেই বলি।  

সাম্প্রতিককালে টেলিভিশন নাটকে পুরান ঢাকার ভাষা ও সংস্কৃতিকে যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে তা দেখে অনেকটাই হতাশ ও ক্রোধ দুটোই মনের মধ্যে চেপে ধরেছে।

এর প্রথম কারণ আমি নিজে ঢাকাইয়্যা বলে। শুধু জন্মগতভাবে নয়, বলতে পারেন আমার চৌদ্দগোষ্ঠী ঢাকার বাসিন্দা (বলার প্রয়োজনে বললাম, অন্য কোনো কারণে নয়)।  

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। বিটিভি আমলেও বিভিন্ন নাটক ও ম্যাগাজিনে পুরান ঢাকার কালচার ও ভাষা খণ্ডাংশ আকারে পাওয়া যেত।

এ স্রোতধারা একটু বেশি বহমান হয় বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল একুশে টিভি আসার পর। ২০০০ সালে ‘বন্ধন’ নাটকটির মাধ্যমে পুরান ঢাকার কিছু কৃষ্টি যেমন: বাকরখানি, বেকারি ব্যবসা, সাদা-শার্ট, সাদা লুঙ্গি ইত্যাদি জাহিদ হাসানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এরপর থেকে কম-বেশি অন্যান্য চ্যানেলেও এ ধারা অব্যাহত থাকে।  

গত ছয়-সাত বছরে একচেটিয়া তৈরি হতে থাকে ঢাকাইয়্যা ভাষার আদলে নাটক। এমনকি বিজ্ঞাপনও তৈরি হচ্ছে রীতিমতো। কিন্তু যখন দেখি এটা অতিমাত্রায় ও অতিরঞ্জিত আকারে দেখানো হচ্ছে তখন নিজের ক্রোধ দমাতে পারি না।   

আপনারা দেখান, কিন্তু একটু সঠিকভাবে। এমনভাবে উপস্থাপন করা ঠিক নয় যাতে মনে হয় ‘যাত্রাপালা’ দেখছি। বিশেষ করে ঈদের সময় ‘ঢাকাইয়্যা নাটক’র মাত্রা একটু বেশিই মনে হয়। গত তিনদিন টেলিভিশনগুলোতে নিজেও উপলব্ধি করেছি এ বিষয়টা।  

আপনারা চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটু ভেবেচিন্তে বাছাই করুন। এমনও দেখা যায় যে, নায়ক বা নায়িকা ‘লাভার বয়’ বা ‘ড্রিমগার্ল’ হিসেবে পরিচিত কিংবা ‘মাম্মি-ড্যাডি’ সোসাইটি খ্যাত হয়ে পড়েছে তাদের মুখ দিয়ে ঢাকাইয়্যা ভাষা জোর করে বলাচ্ছেন।  

এতে দর্শকরা বিরক্ত হচ্ছেন। আমি জানি অনেকেই বলবেন তাহলে এত ঢাকাইয়্যা অভিনেতা-অভিনেত্রী কোথায় পাব? আমার বক্তব্য কিন্তু সে জায়গায় নয়, বক্তব্য হলো চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন যার বডি ল্যাংগুয়েজ ও কথাবার্তায় কিছুটা ঢাকাইয়্যা আদল থাকে। তার মানে এই নয়, ‘লাভার বয়’রা ঢাকাইয়্যা ভাষা বলতে পারবে না।  

পারবে, কিন্তু ওই যে বললাম একটু দেখে শুনে বাছাই করুন। এটাই শুধু অনুরোধ।
বেশিরভাগ নাটকের শুটিং হচ্ছে সূত্রাপুর কাগজিটোলার খেলাঘর কিংবা গেণ্ডারিয়ার বড়ইতলার আশেপাশে। সব নাটকেই ব্যাকগ্রাউন্ড ও স্থাপত্য একই দেখা যাচ্ছে।  

যেমন: কাগজিটোলার গলি ও খেলাঘরের ছাদ দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে উঠেছে দর্শকরা। অনেকেই বলবেন, এত স্পট পাব কোথায়? তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ‘পথ পথিকের সৃষ্টি করে না পথিকই পথের সৃষ্টি করে’। একটু খোঁজাখুঁজি করুন।  

প্রয়োজনে ঝিগাতলা, লালবাগ, হাজারিবাগ, নারিন্দা, বংশাল, ধোলাইখালে স্পট খুঁজুন। এতে বৈচিত্র্য আসবে।

এবার আসি খাবার দাবারের ব্যাপারে। এমনও দেখা যায়, বিখ্যাত কোনো খাবারকে বিকৃত করা হয়। যেমন: একটি নাটকে, দাদি তার নাতিকে বলছেন, আরে... ‘ঝুনুর বিরানি আনছত, (দেখানো হয় কাঁঠাল পাতায় বিরানি)’।  

এ দৃশ্যটি দেখার পর আমার মতো ঢাকার বাসিন্দারা হাস্যরসে ফেটে উঠেছেন- তা হলফ করে বলতে পারি। কারণ ঝুনুর বিরিয়ানি হয় না। হয় পোলাও, তাও কিনা মোরগ পোলাও। এমনকি ঐতিহ্যবাহী এ দোকানে কাঁঠাল পাতায় পোলাও দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় কাগজের বক্সে। আর কাঁঠাল পাতা দেওয়া হয় হাজির বিরিয়ানিতে (এখন বক্সেও দেয়)।  

অনেকেই বলতে পারেন নাটকে অনেক কিছুই চেঞ্জ করা যায়। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে আমি নিজেও সেটা বিশ্বাস করি। কিন্তু কিছু কিছু কৃষ্টি-কালচার-ঐতিহ্য অস্বীকার করা যায় না, যায় না বিকৃত করা। ধরুন, আমি যদি এখন বলি ঝালকাঠির দই সবচাইতে সেরা। সবাই আমাকে পাগল বলবেন, সেরা দই বলতেই বুঝি বগুড়া। ঠিক তেমনি ঝুনুর বিরানি না, হয় পোলাও।

পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই, যারা এসব নাটক তৈরি করছেন তারা মহৎ উদ্দেশ্যেই করছেন। তারাও চাচ্ছেন ঢাকাইয়্যা সংস্কৃতি বিকশিত হোক। কিন্তু অনুরোধ একটাই যারাই করছেন একটু সতর্কভাবে উপস্থাপন করুন। যাতে করে নাটক বা চরিত্রগুলোকে কেউ হাস্যরসে পরিণত করতে না পারে।  

আরও পড়ুন:


স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাসব্যাপী আগস্টের কর্মসূচী ঘোষণা

জার্মানিতে বন্যায় প্রাণহানির ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক প্রকাশ

রেকর্ড গড়েই টোকিও অলিম্পিকের প্রথম সোনা জিতলেন চীনা তরুণী

বৃষ্টিপাতে ভারতের গোয়ায় ধস, ট্রেন লাইনচ্যুত (ভিডিও)


এভাবে চলতে থাকলে হয়তোবা জনপ্রিয় তুর্কি ধারাবাহিক ‘দিরিলিস: আরতুগ্রুল’ও একদিন ঢাকাইয়্যা ভাষায় ডাবিং হয়ে যাবে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, লেবু নাকি বেশি চিপলে তিতা হয়ে যায়। অবস্থা এখন অনেকটা সেরকমই হয়ে উঠেছে ঢাকাইয়্যা নাটকের। পাশাপাশি অন্যান্য আঞ্চলিক নাটক বানালে সেগুলোও কিন্তু ভালো দর্শক টানবে। বিষয়টা ভাবতে পারেন।

বি:দ্র: আমার এই স্ট্যাটাস কাউকে বা কোনো গ্রুপকে ছোট বা খাটো করার উদ্দেশ্য নয়। মূলত মনের কোনো জমে থাকা কিছু কথার বহি:প্রকাশ। আমার মতামত ও লেখায়ও ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু বিষয়টিকে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না। এই স্ট্যাটাসকে ঘিরে নতুন কোনো তর্ক-বিতর্কও চাই না। সবাই ভালো থাকুন। সবাইকে ঈদের ৩য় দিনের শুভেচ্ছা।

লেখাটি ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ অনলাইনের ইনচার্জ শামছুল হক রাসেল-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া। (মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম