শরণখোলার মাঠে মাঠে কৃষকের কান্না!

শরণখোলার মাঠে মাঠে কৃষকের কান্না!

Other

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধের মধ্যে ৮দিন ধরে জলাবদ্ধতার পর বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। পরে পানি নিষ্কাশন শুরু হওয়ায় ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ফসলের মাঠ। মাঠের দিক তাকিয়ে এখন শুধুই হাহাকার করছেন শরণখোলার ১১ হাজারের বেশি চাষী। আমনের মাঠে লাগানো ধার ও বীচতলা সম্পূর্ন পচে যাওয়া দৃশ্য দেখে দিশেহারা কৃষকরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।

এখনো ধান চাষের সময় থাকলেও বীজের অভাবে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না চাষীরা। বর্তমানে শরণখোলার চারজন ডিলারের কারো কাছেই বীজ ধান মজুদ নেই। কারণ এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ডিলাররা বিএডিসি থেকে যে বীজ ধান উত্তোলন করেছিলেন তা বিক্রি হয়ে গেছে ৩০ জুনের মধ্যেই। কিন্তু ২৭ জুলাই থেকে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে ৮দিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধের মধ্যে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা লাগানো সব ধান ও বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হওযায় এবং বর্তমানে বীজ ধান না পাওয়ায় চরম হতাশায় পড়েছেন চাষীরা।

এই অবস্থায় কৃষি অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক (ডিডি) জি এম এ গফুর বৃহস্পতিবার শরণখোলা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে অন্য এলাকা থেকে বীজধান সংগ্রহ করে সংকট সমাধানের আশ্বাস দেন চাষীদের।

শরণখোলা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, শরণখোলায় মোট ১১ হাজার ২৯০ জন চাষীর মাধ্যমে এবার ৯ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিআর- ১১, বিআর-৫২ ও বিআর- ২২ জাতের ধান চাষের জন্য ৭৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। সম্প্রতি অতিবর্ষণের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধের মধ্যে জলাবদ্ধতায় রাগানো ধান ও বীজতলা পঁচে নষ্ট হয়েছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে লাগানো ধানসহ প্রায় ৯০ ভাগ বীজতলাই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম রাজৈর গ্রামের চাষী মো. সাইয়েদ আলী জানান, তার ১০ কাঠা জমির বীজতলা সব নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য ডিলারের কাছে গিয়ে কোনো বীজধান পাচ্ছেন না।

সাউথখালী ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের চাষী মো. জহির খলিফা জানান, তার চার বিঘা জমির আমনের বীজতলা সবই পঁচে গেছে। এখন কী করবেন ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। তবে বেশি দাম দিলে সাব-ডিলারের কাছে বীজ মিলছে বলে অনেক চাষী জানান।

মালিয়া রাজাপুর গ্রামের চাষী মো. আতিকুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রায়েন্দা বাজারের সাব ডিলার আয়শা এন্টারপ্রাইজের মালিক কবির হোসেন তার কাছ থেকে ১০ কেজি ৭১ জাতের বীজ ৮০০ টাকা রেখেছেন। অথচ ওই বীজের সরকারি মূল্য ৪২০ টাকা।

পশ্চিম খোন্তাকাটার গৌরঙ্গ মিত্রী জানান, একই বাজারের মিজানুর রহমান গাজীর দোকান থেকে ৫২ জাতের বীজের দাম রেখেছে ৯৫০ টাকা। অথচ সরকারি মূল্য ৬৬০ টাকা।

আয়শা এন্টারপ্রাইজের মালিক কবির হোসেন বলেন, যেহেতু কোথাও বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কৃষকের স্বার্থে রংপুর থেকে বীজ আনতে খরচ বেশি পড়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রী করতে হচ্ছে।

শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের ডিলার মেসার্স শহিদুল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিএডিসি অনুমোদিত চারজন ডিলার এলাকার চাহিদা অনুযায়ী বিআর-৫২, বিআর-২২ ও বিআর-১১ এই তিন জাতের ৪৫ টন বীজ ধান উত্তোলন করেন। এসব বীজ ধান ৩০জুনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের কারো কাছেই এখন বীজধান নেই। তাই সরকারিভাবে এই সংকট সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, কৃষি অধিদপ্তর খুলানার উপপরিচালক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, এই মুহূর্তে স্থানীয় ভাবে বীজ ধান সংগ্রহ করা সম্ভব না।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত বীজ ধান পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা করে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, শরণখোলায় জলাবদ্ধতায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ায় উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। দ্রুত এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন:


নরসিংদীর ইউপি চেয়ারম্যান কিশোরগঞ্জে নিহত

যাত্রাবাড়ীতে আগুন


news24bd.tv তৌহিদ

সম্পর্কিত খবর