দর্শনের ইতিহাসে নারী দার্শনিকদের উপেক্ষাই করা হয়েছে

দর্শনের ইতিহাসে নারী দার্শনিকদের উপেক্ষাই করা হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক

দর্শনের ইতিহাসে নারীদের কোন নাম নেই। যদিও প্রাচীন দর্শনের ইতিহাসে কয়েকজন নারী দার্শনিকের নাম আমরা জানি জেমন আলেকজান্দ্রিয়ার হাইপেসিয়ার কথা। ভারতীয় দর্শনেও আমরা গার্গির কথা জানি। কিন্তু সাধারণভাবে দর্শনের ইতিহাস লিখতে গেলে নারী দার্শনিকদের অবদানের কথা উপেক্ষাই করা হয়েছে।

 

আমরা সাম্প্রতিক কালের মুসলিম নারী দার্শনিক আজিজা আল হিব্রির কথা বলতে পারি। ইসলামী আইন নিয়ে তার খুবই মৌলিক কাজ আছে। আজিজা আল হিব্রির কাজই ইসলামী আইন সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচারণার সবচেয়ে বড় জবাব হতে পারে। কিন্তু তিনি পশ্চিমে তো বটেই ইসলামী দুনিয়াতেও পরিচিত নন।

উনাকে নিয়ে অবশ্য আমার আলাদা লেখা দেয়ার ইচ্ছা আছে।  

Eileen O'Neill ফেমিনিস্ট হিস্ট্রি অব ফিলোসফি বইয়ে  দেখিয়েছেন যে নারীরা ১৬০০-১৮০০  সাল পর্যন্ত দর্শনে অসংখ্য অবদান রেখেছে এবং দর্শনের ইতিহাসে তাদের কাজ সিস্টেমেটিক্যালি উপেক্ষা করা হয়েছে।  

ধরা যাক আধুনিক পশ্চিমা দর্শনের জনক বলে যাকে মনে করা হয় সেই দেকার্তের কথা। দেকার্তের বিখ্যাত ম্যাক্সিম আই থিঙ্ক দেয়ারফোর আই এম তিনি পেয়েছিলেন ষোল শতকের নারী দার্শনিক তেরেসার কাছে থেকে। তেরেসা ছিলেন একজন নান। তিনিই লিখেছিলেন,

“Each expects to lead meditators to certainty about fundamental truths, each employs demonic deception as a strategic means to that goal, and each transforms the common deceiving-demon trope into something with a powerful epistemological punch.” এর বাংলা হচ্ছে।  

"প্রত্যেক চিন্তাশীল ব্যক্তিই মৌলিক সত্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার প্রত্যাশা করে, প্রত্যেকেই সেই লক্ষ্যের কৌশলগত উপায় হিসাবে ডেভিলস ডিসিপশন থেকে মুক্ত থাকার চেষতা করে এবং প্রত্যেকে সাধারণ সেই ডেভিলস ডিসিপশনকে  একটি শক্তিশালী জ্ঞানতাত্ত্বিক করেই সত্য জ্ঞানে উপনীত হয়। "

বাংলা আর ইংরেজি দুটোই খটমটো জন্য আরো একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি। দর্শনের একটা মৌলিক আলাপ ছিল সেইসময়ে যে আমাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান কি সত্য জ্ঞান? তাই যদি হয় তাহলে তো আমরা চোখ দিয়ে চাঁদ দেখি একটা থালার মতো। চাঁদের আকার তো থালার সমান না। আবার জ্বর হলে খাবার বিস্বাদ লাগে তার মানে তো খাবার থেকে স্বাদ চলে যায়না। তাহলে এইযে ইন্দ্রিয় সত্য জ্ঞান দিচ্ছেনা সেটা কীভাবে বুঝতে পারবো। এইযে ইন্দ্রিয়ের ডিসিপশন বা প্রতারণা এটাকেই তেরেসা বলছে ডেলিলস ডিসিপশন।

আরও পড়ুন:


বিমানবন্দরে শুরু আরটি-পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম

নির্মাণশৈলী ও রাতে নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পায়রা সেতুতে পর্যটকদের ভিড়

কাল লাখ লাখ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বন্ধ হয়ে যাবে!

জাপার ফিরোজ রশীদের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত


এটা থেকে মুক্তি না পেলে সত্য জ্ঞান হয়না। দেকার্ত এটা থেকেই শুরু করলেন তার চিন্তা। তিনি যেখানেই ডিসিপশনের সম্ভাবনা দেখলেন তাকেই ত্যাগ করলেন কারণ তা হয়তো সত্য নয়, তা হয়তো মায়া বা ডিসিপশন এবং ভাবতে থাকলেন। কিন্তু তিনি যে চিন্তা করছেন এটা তো মিথ্যা নয়। এইখান থেকেই তিনি বললেন তিনি যে সত্য তা বুঝতে পারছেন কারণ তিনি চিন্তা করতে পারেন। এই থিংকিং সেলফই তাকে সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিলো। তার এজেন্সি নিশ্চিত  করলো।  

আরো একজন নারী বোহেমিয়ার রাজকন্যা এলিজাবেথ দেকার্তের চিন্তাকে শেইপ করতে সাহায্য করেছিলেন। এলিজাবেথের সাথে দীর্ঘ ছয়বছর ধরে দেকার্তের পত্রালাপ চলেছে। এলিজাবেথই দেকার্তের শরীর এবং মন সংক্রান্ত চিন্তাকে ক্রিটিক করে শেইপ দিয়েছেন। এলিজাবেথের কন্ট্রিবিউশন ছাড়া দেকার্তের সেই চিন্তা দাঁড়াতেই পারতো না। এলিজাবেথের কথা আমরা জানিনা। আধুনিক দর্শনের ইতিহাস এতোটাই পুরুষতান্ত্রিক যে দর্শন চিন্তার জগতে  নারীদের সব অবদানকে মুছে দেয়া হয়েছে।

লেখাটি শান্তা আনোয়ার-এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ( লেখাটির আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম