যক্ষ্মা হলে রক্ষা মিলবে কীভাবে?

যক্ষ্মা হলে রক্ষা মিলবে কীভাবে?

Other

যক্ষ্মা (টিবি) ফুসফুসের একটি সংক্রামক রোগ। তবে শরীরের অন্যান্য অংশেও যক্ষ্মার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হতে পারে। এটি মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে জনে জনে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যক্ষ্মা ব্যাসিলাস আবিষ্কার করেছিলেন ড. রবার্ট কোচ এবং তার নামানুসারে টিবি কে “কোচ-এর ব্যাসিলাস” নামেও ডাকা হয়।

যেহেতু এইচআইভি/এইডস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, কাজেই এইডসের সাথে সাথে টিবি সংক্রমণও লক্ষ্যণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। টিবি’র চাপ সামাল দিতে চিকিৎসকরা রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কিন্তু অধিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

কারণসমূহ - 
যক্ষ্মা অধিক মাত্রায় সংক্রামক একটি রোগ।

হাঁচি-কাশি, কথা বলা, হাসাহাসি বা গান গাওয়ার সময় মুখ থেকে নির্গত থুথু বাতাসে মিশে রোগ ছড়াতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বিশেষ করে এইচআইভি আক্রান্তদের টিবি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।  

উপসর্গসমূহ :
চিকিৎসকদের মতে টিবি ২ প্রকার; সুপ্ত টিবি এবং সক্রিয় টিবি। সুপ্ত টিবি’র ক্ষেত্রে শরীরে রোগের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকলেও রোগী আক্রান্ত হয়না। তবে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়লে টিবি সক্রিয় হয়ে যেতে পারে। আবার সক্রিয় টিবি’র উপসর্গ হলো; তিন বা ততোধিক সপ্তাহ ধরে কাশি, কাশির সাথে রক্ত যাওয়া, শ্বাস ও কাশির সময় বুকে ব্যথা, ওজন হ্রাস, ক্লান্তি, জ্বর, অতিরিক্ত ঘাম, ঠান্ডা লাগা এবং ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি। টিবি ফুসফুস জনিত রোগ হলেও শরীরের অন্যান্য অংশও আক্রান্ত হতে পারে। মেরুদণ্ডে টিবি হলে পিঠ ব্যথা এবং কিডনিতে হলে প্রসাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।


ঝুঁকি এবং জটিলতাসমূহ :
কিছু কিছু কারণে টিবি’র ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসকারী রোগাক্রান্ত হলে। এইচআইভি, ডায়াবেটিস, কিডনি জনিত রোগ, ক্যান্সার ও কেমোথেরাপি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং নির্দিষ্ট কিছু ঔষুধ ব্যবহার যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া জটিলতার মধ্যে মেরুদণ্ড ব্যথা, গিটে ব্যথা, মস্তিষ্কের পর্দা (মেনিনজাইটিস) ফুলে যাওয়া, লিভার বা কিডনি জনিত সমস্যা, হৃদরোগ ইত্যাদি হতে পারে।

পরীক্ষা এবং ডায়াগনোসিস :
যেকোন ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার আগে চিকিৎসক আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। স্টেথোস্কোপের সাহায্যে ফুসফুসের অবস্থা পরীক্ষার পর ফুলে যাওয়া অংশের লিম্ফ নোডগুলোও পর্যবেক্ষণ করেন। রোগীর ত্বকও পরীক্ষা করা হতে পারে, যেখানে হাতের নিচে পিপিডি টিউবারকুলিন ইনজেক্ট করা হয়। উল্লেখ্য যে, ইনজেকশন প্রয়োগের ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি হতে পারে। এছাড়া রক্ত পরীক্ষা, ইমেজিং টেস্ট (এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান) এবং স্পুটাম টেস্ট করা হতে পারে। এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান-এর মাধ্যমে টিবি সনাক্ত হয় এবং থুথু পরীক্ষার মাধ্যমে টিবি’র ঔষধ জনিত ধরন সনাক্ত হয়।

আরও পড়ুন:

অবশেষে ব্রিটেনের লাল তালিকা থেকে বাদ পড়ছে বাংলাদেশ

বেড়াতে গিয়ে অতিরিক্ত মদ পানে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যু

আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না, জানালেন কৃষিমন্ত্রী

ইভ্যালির সঙ্গে আর সম্পর্ক নেই তাহসানের


চিকিৎসাসমূহ : 
যক্ষ্মা (টিবি) অতি-সংক্রামক একটি রোগ। টিবি’র চিকিৎসায় ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগতে পারে। তবে বয়স, শারীরিক অবস্থা, ঔষধ জনিত, সংক্রমিত অঙ্গ এবং যক্ষ্মার ধরণ অনুযায়ী রোগের চিকিৎসা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় যক্ষ্মার সুচিকিৎসা হয়। এছাড়া যক্ষ্মার সুচিকিৎসায় ভারতের হায়দ্রাবাদে অবস্থিত ইয়াশোদা হসপিটাল উপমহাদেশের অন্যতম সেরা একটি হাসপাতাল।      

ডা. ভিসওয়াসভারান বালাসুব্রামানিয়ান, কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি এবং স্লিপ মেডিসিন, ইয়াশোদা হসপিটালস, হায়দ্রাবাদ।

news24bd.tv/আলী