ভাত ও বাঙালি কর্মজীবী

কাজী শরীফ

ভাত ও বাঙালি কর্মজীবী

Other

আমি প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে চাকরি করি। বর্তমান চাকরিটা বুড়ো বয়সে পাওয়ায় এতে অভিজ্ঞতা কম হলেও আগের চাকরি করেছি অর্ধ দশকেরও বেশি সময় জুড়ে।  

এ নাতিদীর্ঘ চাকরি জীবনে আমার একটা অদ্ভুত মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার ঘটেছে। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও সত্যটা হলো এ প্রায় সাড়ে আট বছরে দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় আমার একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়।

প্লেটের ভাতের দিকে তাকালেই আমার মনে হয় চারটা ভাতের জন্য মানুষ কত কষ্ট করে!

আমি যে খুব পরিশ্রমের কাজ করতাম তা নয়। একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম। ভালো ছাত্র ছিলাম না বলে ক্লাসের অবস্থাও ছিল তথৈবচ! তবু ভাত খাওয়ার সময় আমার মনে হতো চারটা ভাতের জন্য মানুষ কত কাজ করে!

বর্তমান চাকরিটা আমার মা বাবার খুব স্বপ্নের ছিল। এ বয়সে পেলেও তাই মা বাবার হাসিমুখ দেখলে ভালো লাগে।

ভেবেছিলাম বুড়ো বয়সে বিয়ে করলে স্ত্রীর মুখ দেখলে যেমন মানুষ সব ভুলে যায় আমিও তেমনি এ চাকরিতে এসে সে ভাবনা থেকে মুক্তি পাব।

দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো আমার বেলায় তা হয়নি। আমি এখনও ভাতের থালা নিয়ে বসলে ভাবি আগের ভাবনাটা। মনে হয় এদেশের মানুষ ও প্রবাসের মানুষ চারটা ভাত খাওয়ার জন্য ও পরিবারের সদস্যদের ভাতের যোগাড় করতে কত কষ্ট করে!

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মানুষ উপার্জন করে। আমি সৎ উপার্জনকারীদের কথা ভাবি। সারাদিন পরিশ্রম করে যে লোক ভাতের চাল কিনে বাসায় ফেরেন তাকে আমার বড় পবিত্র মনে হয়। দুপুরে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে যে মানুষ ভাত খায় তাকে আমার খুব আপন মনে হয়। মনে হয় তাকে ছুঁয়ে দেখি। তাকে বলতে ইচ্ছে হয় "পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমি দেখছি! "


 আরও পড়ুন:

তারেক বিলাসী জীবনের টাকা কোথায় পায়, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেন একাত্তর টিভির শাকিল আহমেদ

নির্ধারণ হলো লঞ্চের সর্বনিম্ন ভাড়া


আমি জানি আমার এ ভাবনা আপনার হাসির খোরাক যোগাচ্ছে। আপনাকে আরেকটু হাসাই। অবশ্য আমার হাসি আসেনি। আমার লেগেছে মায়া।

সৈয়দ মুজতবা আলী অফিসে ধাবমান বাঙালি কেরাণী সম্বন্ধে বলেছেন -
"ভরা পেটে ছুটতে মানা
চিবিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর
চাকরি আগে বাঁচাই দাদা
প্রাণ বাঁচানো সে তারপর।  
যে অন্নের জন্য বাঙালি কেরাণীগিরি করে সে অন্ন পর্যন্ত বাঙালি কেরাণী ধীরে সুস্থে খেয়ে আপিসে যেতে পারে না। এত বড় প্যারাডক্স, এত বড় স্বার্থত্যাগ বাঙ্গালা দেশের বাইরে আপনি পাবেন না। "

সৈয়দ মুজতবা আলীর সাথে দ্বিমত করার সামর্থ্য আমার নেই।

কাজী শরীফ, সহকারী জজ, নোয়াখালী -এর ফেসবুক থেকে নেওয়া। (সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv নাজিম