'দরজা খুলতেই নওয়াজ আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে'

নওয়াজউদ্দিন ও নীহারিকা

'দরজা খুলতেই নওয়াজ আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে'

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

ছুদিন আগে বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা নিয়ে অভিযোগের তীর ছুড়েছিলেন অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা। অবশ্য সরাসরি যৌন হেনস্তার নয়, অভিযোগ ছিল নওয়াজের সামনেই চিত্রাঙ্গদাকে পরিচালক কুশান নন্দী যৌন হেনস্তা করেছিলেন, আর নওয়াজ কোন প্রতিবাদ করেননি। তবে এবার নওয়াজের বিরুদ্ধে একেবারে ধারালো তীর ছুড়লেন সাবেক মিস ইন্ডিয়া ও ‘মিস লাভলি’খ্যাত অভিনেত্রী নীহারিকা সিং। তিনি জানালেন, প্রাতঃরাশের দাওয়াতে নওয়াজ তার বাসায় গিয়ে তাকে যৌন হেনস্তা করেন।

'হ্যাশট্যাগ মি-টু' আন্দোলনে এখন উত্তাল সারা বিশ্ব। একে একে মুখ খুলছেন যৌন হেনস্তার শিকার নারীরা। হলিউডের পর এখন বলিউডে ঝড় তুলেছে এ আন্দোলন।  একের পর এক অভিনেত্রী মুখ খুলছেন যৌন হেনস্থা নিয়ে।

এ নিয়ে বিপাকে পরিচালক, প্রযোজক থেকে অনেক নামজাদা অভিনেতারা। সবাই নিজের আমলনামাটা একবার স্মরণ করে দেখার চেষ্টা করছেন।  

অভিযোগের তীরে এরইমধ্যে বিদ্ধ হয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, নানা পাটেকর, সালমান খান, আরবাজ খান, অলোক নাথ, পরিচালক উমেশ গার্গের মতো দাপুটে অভিনেতা-পরিচালকরা। যদিও এ আন্দোলনের পক্ষে- বিপক্ষে মত তৈরি হয়েছে। মি-টু আন্দোলনের মাধ্যমে একে একে যেমন থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে, তেমনি অনেক নারী, অভিনেত্রী অন্যকে ফাঁসাতে এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।  

যাই হোক অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুললে সরগরম হয়ে ওঠে বলিপাড়া। এরপর তাদের মধ্যে শুরু হয় আইনি লড়াই। এর মধ্যে নানা পাটেকরের পক্ষে অবস্থান নেন বিতর্কিত অভিনেত্রী রাখি সাওয়ান্ত। তিনি তনুশ্রীকে মাদকাসক্ত বলে পাল্টা অভিযোগ করেন।

এরইমধ্যে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলে আলোচনায় এসেছেন তনুশ্রী দত্ত, বলিউডের ইরানি অভিনেত্রী মন্দানা করিমি, মডেল ও অভিনেত্রী পূজা মিশ্রা, অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা সিং, হেয়ার স্টাইলিস্ট  স্বপ্না মতি ভাবনানি, সালমানের সাবেক প্রেমিকা সোমা আলিসহ অনেকে। অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অনেক নামজাদা ব্যক্তিকে। এবার সেই মিছিলে শামিল হয়েছেন সাবেক মিস ইন্ডিয়া ও ‘মিস লাভলি’খ্যাত অভিনেত্রী নীহারিকা সিং।

তার অভিযোগের তীর বিখ্যাত অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। বাকি দুজন হলেন অভিনেতা সাজিদ খান এবং একটি মিউজিক সংস্থার কর্তা ভূষণ কুমার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে শনিবার ওই তিনজনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তোলেন নীহারিকা। তার লেখা শেয়ার করেছেন সাংবাদিক সন্ধ্যা মেনন। এরপরই বিষয়টা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

নীহারিকা জানিয়েছেন, নিগ্রহ বলতে ঠিক কী বোঝায়, কাকে শাস্তি দেয়া দরকার, কাকে ক্ষমা করা যায়-এ বিষয়গুলো ভালো করে বুঝে নিতেই নিজের অভিজ্ঞতা লিখলেন তিনি।

২০০৯ সালে নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে ‘মিস লাভলি’ ছবিতে স্বাক্ষর করেন নীহারিকা। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১২ সালে। নীহারিকা খোলাখুলিই জানিয়েছেন, নওয়াজউদ্দিনকে প্রথম থেকেই তার ভালো লেগেছিল। একসময় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। একবার সারা রাত শুটিং করে সকালে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী ফিরছিলেন। ফোনে তিনি নীহারিকাকে জানান, তাঁর বাড়ির খুব কাছাকাছি তিনি আছেন। নীহারিকা তাঁকে প্রাতঃরাশ করার জন্য বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী আসার পর বাড়ির দরজা খুলতেই তিনি ঝাপিয়ে পড়েন। নীহারিকা তাঁর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। নওয়াজকে ঠেলে সরিয়ে দেন। তবে প্রাথমিক ধস্তাধস্তির পর আত্মসমর্পণ করেন।

টুইটারে নীহারিকা আরও লিখেছেন, নওয়াজ জানিয়েছিলেন-একজন অভিনেত্রী বা ভারত-সুন্দরীকে স্ত্রী হিসেবে পেতে চান তিনি। তবে এসবই ছিল নওয়াজের ‘মিথ্যা বুলি’। শুধু শরীরের খিদে মেটাতেই নওয়াজ তার সঙ্গে এমন ভালোবাসার নাটক করেছিলেন। এসব জানার পরে সম্পর্ক থেকে সরে আসেন বলে জানান নীহারিকা।

নীহারিকার দাবি, নওয়াজ জাতপাতে বিশ্বাসী এবং অবদমিত যৌনাকাঙ্ক্ষার এক ভারতীয় পুরুষ। ২০১২ সালে কান ফিল্ম উৎসবে ‘মিস লাভলি’ প্রদর্শনের সময় আবার দেখা হলে যৌন সম্পর্কের জন্য তার কাছে অনুনয়-বিনয় করেন নওয়াজ।

পরিচালক সাজিদ খানের প্রসঙ্গ দিয়ে লেখা শেষ করেছেন নীহারিকা। অভিযোগ করেছেন, একটি রেস্তোরাঁ উদ্বোধনের সময় সাজিদ নিজের তৎকালীন বান্ধবী সম্পর্কেও কটু মন্তব্য করেছিলেন আর তার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন-‘এ তো কিছু দিনের মধ্যেই আত্মহত্যা করবে। ’

নীহারিকার এবারের অভিযোগ ভূষণ কুমারের বিরুদ্ধে। ‘মিস লাভলি’ ছবির অভিনেত্রী জানিয়েছেন-সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার পর রাজ কানওয়ার তাকে একটি ছবিতে সুযোগ দিতে চান। কিন্তু ভূষণ কুমার কানওয়ারকে জানান, ওই ছবি থেকে নীহারিকাকে ছেড়ে দেয়া হোক। কারণ তিনি একটি ছবিতে তাকে নিতে চান।

নীহারিকার অভিযোগ, তাকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠান ভূষণ। একটি খামে দুটি ৫০০ টাকার নোট দেওয়া হয় নীহারিকাকে। ওই রাতে ভূষণের টেক্সট মেসেজ আসে। তাতে লেখা ছিল-‘তোমাকে আরও গভীরভাবে জানতে চাই। আমরা কি দেখা করতে পারি?’

নীহারিকা জবাব দেন-‘অবশ্যই। ডাবল ডেট হোক। আপনি স্ত্রীকে নিয়ে আসুন, আর আমি বয়ফ্রেন্ডকে। ’ তার পর আর কোনো দিন মেসেজ পাঠাননি ভূষণ।

তবে অভিযুক্ত ওই তিনজনের কেউ-ই রাত পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি।

সম্পর্কিত খবর