মিরপুরবাসীর চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক

সংগৃহীত ছবি

মিরপুরবাসীর চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক

অনলাইন ডেস্ক

মেট্রোরেল নির্মাণের যাত্রা খুব সহজ ছিল না। দীর্ঘদিন মিরপুর-ফার্মগেট রুটে যানজটসহ ভোগান্তির যে অভিজ্ঞতা হয়েছে মিরপুরবাসীর, তা বর্ণনাতীত। মেট্রোরেলের উদ্বোধন তাই মিরপুরবাসীর জন্য অন্যরকম এক আনন্দের অনুভূতি নিয়ে আসে। শুধু মিরপুর নয়, উত্তরা এলাকায় বসবাসরত নগরবাসীর মুখেও আনন্দের ঝিলিক।

 
 

আরও পড়ুন... মিরপুরবাসীর চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক

মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন নীলিমা বেগম। তিনি প্রতিদিনই নিজের কর্মস্থল আগারগাঁও সমবায় অফিসে যাতায়াত করেন। গত কয়েক বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে এ কর্মজীবী নারীকে। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকে তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।

মঙ্গলবার নীলিমা বেগম গণমাধ্যমকে জানান , ‘সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। যানবাহনের চরম সংকটের মধ্যে একজন মহিলা হিসেবে বেশিরভাগ সময় গণপরিবহনে উঠতে পারিনি। বাধ্য হয়ে রিকশা বা অটোরিকশায় চলাফেরা করেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। বাসা থেকে বের হয়ে খুব সহজেই মেট্রোরেল দিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারব। আমার মতো এমন হাজার হাজার কর্মজীবী মহিলা এ সুবিধা পাবেন। ভাবতেই ভালো লাগছে। ’

আরও পড়ুন... মেট্রোরেল চলবে ৪ ঘণ্টা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পে বসবাস করেন মমতাজ উদ্দিন। তিনি ফার্মগেট এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উন্নত দেশের মতো আমরাও মেট্রোরেলে চড়তে পারব। যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে। সময়ও বাঁচবে। এখন ব্যবস্থাপনা কেমন হয় তাও দেখার বিষয়। তবে আমার মতো অনেকেই আশাবাদী ভালোই হবে। ’

দেশের প্রথম মেট্রোরেলের যাত্রা নিয়ে নীলিমা বেগম ও মমতাজ উদ্দিনের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহের শেষ নেই। বিশেষ করে উত্তরা পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁওসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের মাত্রা একটু বেশিই। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকা হয়ে যারা বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ এলাকায় যাতায়াত করবেন তারা মেট্রোরেল ব্যবহার করে যাত্রাপথের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াতের সঙ্গে কিছু এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাসহ সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন...মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (টিওডি) নীতিমালা তৈরি করার ক্ষেত্রে ‘লো ইমপ্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট’ নীতি অনুসরণ করা; যেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে ট্রানজিট স্টেশনের আশপাশে ধরে রাখা যায় এবং জেনট্রিফিকেশন প্রভাব সীমিত মাত্রায় রাখা যায়। মেট্রো করিডরে মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। টিওডি ডিজাইন করার সময় সাশ্রয়ী আবাসন ও সামাজিক আবাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ ছাড়া ঢাকার যোগাযোগ পরিকল্পনার সঙ্গে ভূমি ব্যবহার ও নির্মিত এলাকার ভৌত বৃদ্ধি ও ব্যবহারের ধরনকে সমন্বয় করে সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে আন্তঃসংস্থা সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। টঙ্গী-এয়ারপোর্ট-বনানী-তেজগাঁও-কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ এ রেল করিডরে কমিউটার সার্ভিস চালু করে বিশালসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করাও জরুরি বলে মনে করেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে বলেন,‘যোগাযোগব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের পাশাপাশি মেট্রোরেল ভূমি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখবে। মেট্রোরেলের কারণে স্টেশনের আশপাশের এলাকার ভূমি ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে, যার আলামত ইতিমধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও এলাকায় চোখে পড়ছে। ’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবেই এ ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় মেট্রোরেল হওয়ার আগে যে ধরনের ও আয়শ্রেণির লোক এসব এলাকায় এর আগে বসবাস করত, তারা নতুন ও তুলনামূলক উঁচু আয়শ্রেণির মানুষ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, নগর পরিকল্পনার ভাষায় যাকে বলে হয় ‘জেনট্রিফিকেশন’ বা বসবাসকারী জনসংখ্যার শ্রেণি পরিবর্তন। ফলে নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় সঠিক নীতি কৌশল প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও যথাযথ উন্নয়ন নজরদারি প্রয়োজন, যেন এই জেনট্রিফিকেশন তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং মেট্রোরেলের সুফল সব আয়শ্রেণির মানুষ পেতে পারে ও সার্বিক জনকল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। ’

আরও পড়ুন... মেট্রোরেলের ভাড়া কত?

মেট্রোরেলের টিকিট কাটার প্রক্রিয়া 

বাংলাদেশের গর্ব ও আকাঙ্ক্ষার প্রতীক মেট্রোরেল: প্রধানমন্ত্রী

 যাতায়াত ব্যবস্থায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে মেট্রোরেল: রাষ্ট্রপতি

news24bd.tv/ইস্রাফিল