প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলো ম্যানচেস্টার সিটি

সংগৃহীত ছবি

প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলো ম্যানচেস্টার সিটি

অনলাইন ডেস্ক

ইন্টার মিলানকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলল ম্যানচেস্টার সিটি। অবশেষে! শব্দটা ব্যবহার করতেই হয়। এই একটি শিরোপার জন্য প্রচুর সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে কোচ গার্দিওলার। গত ৬ মৌসুমে রসিটিজেনদের হয়ে পাঁচবার প্রিমিয়ার লিগ জিতলেও ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে গিয়ে বারবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু এবার আর নয়। সব ব্যর্থতা পেছনে ফেলে এবার গার্দিওলা হাসলেন, হাসলো সিটিও।

শেষ বাঁশি বাজার পর ডাগ আউট থেকে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়েরা যখন এক ছুটে মাঠে ঢুকছেন, ক্যামেরা ধরল পেপ গার্দিওলাকে। কার দিকে যেন ছুটে যাচ্ছেন সিটি কোচ।

হয়তো দলের কোনো খেলোয়াড়কে অভিনন্দন জানাতেই। রদ্রির দিকে কি? পরের ফ্রেমে ধরা পড়লেন আর্লিং হলান্ড। মুখে হাসি । কিন্তু তাৎক্ষণিক উচ্ছ্বাস এতটা বোঝা গেল না। যাবে কী করে! চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে কীভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হয়, সেটাই তো জানা নেই তাঁর। জানা ছিল না আসলে সিটির কোনো খেলোয়াড়েরই। এটাই যে সিটি ইতিহাসে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি!

ফাইনালে সিটির তুলনায় শক্তিমত্তায় ইন্টারকে পিছিয়ে রেখেছিলেন অনেকেই।  কিন্তু মাঠের খেলায় এই তত্ত্ব যেন হাওয়ায় মিলে গেল। আতাতুর্ক স্টেডিয়ামের প্রথমার্ধে সিটিকে এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়নি ইন্টার। প্রেসিং ফুটবলের দুর্দান্ত প্রদর্শনী উপহার দেয়। সিটির  আক্রমণগুলো ডি-বক্সে আসার আগেই রুখে দিতে থাকে তারা। হলান্ড তো গোলই পেলেন না। কিন্তু ট্রফি জিততে কী আর সবার গোল করা লাগে! কখনো কখনো একটা গোলই যথেষ্ট এবং আজ সিটির সেই একমাত্র গোলটা করলেন রদ্রি।  

১-০ গোলের এই জয় সিটিকে শুধু প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফিই এনে দিল না, ইউরোপের ইতিহাসে দশম দল হিসেবে ট্রেবলও জিতে গেল সিটি। ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে এ কীর্তি এর আগে ছিল শুধু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পরের বছর এবং সাউদাম্পটন ও সাম্পদোরিয়ার অবনমনের মৌসুমে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ।

প্রথমার্ধে টুকটাক দুই দলেরই সুযোগ এসেছে। শুরু থেকেই প্রায় অদৃশ্য থাকলেও হলান্ড ২৭ মিনিটের দিকে একটা দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনার পাস থেকে। তবে জায়গা বের করতে না পেরে তিনি শট নেন ইন্টার মিলান গোলরক্ষক আকন্দ্রে ওনানার গায়ে। পাল্টা আক্রমণে সুযোগ পেয়েছিল ইন্টারও। কিন্তু ভাগ্যের চাকা খোলেনি তাদের। সব ছাপিয়ে প্রথমার্ধের সবচেয়ে বড় ঘটনা ডি ব্রুইনার ইনজুরি। বদলি নামেন ফিল ফোডেন।

সিটি সমর্থকদের বুকের ধড়ফড়ানি আরও বেড়ে যায় ম্যাচের ৫৯ মিনিটে। একটা ব্যাক পাস নিজে না ধরে গোলরক্ষক এদেরসনের জন্য ছেড়ে দেন সিটি ডিফেন্ডার ম্যানুয়াল আকাঞ্জি। কিন্তু মাঝপথেই সেই বল পেয়ে যান ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেজ। তাঁর সামনে তখন এদেরসন একা। মার্তিনেজের সেই শট ঠেকিয়ে সিটিকে সেই যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদেরসন। পেপ গার্দিওলা তো ওই মুহূর্তে দুশ্চিন্তায় হাঁটু গেড়ে বসেই পড়েছিলেন মাঠে। এদেরসনের সেভের পর উঠে দাঁড়িয়েছেন।

ইস্তাম্বুলের দর্শকেরা ততক্ষণে গোলের জন্য হা-হুতাশ শুরু করে দিয়েছেন। সেই গোল অবশেষে এলো ম্যাচের ৬৮ মিনিটে। ম্যানুয়েল আকাঞ্জি পাস বাড়ান ডানদিকে ফাঁকায় থাকা বের্নার্দো সিলভার পায়ে। সিলভার ক্রস ইন্টারের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে যায় ম্যান সিটির মিডফিল্ডার রদ্রির পায়ে। দৌড়ে এগিয়ে আসা রদ্রি দুর্দান্ত এক শটে বল পাঠান ইন্টারের জালে। সেই রদ্রি চেলসির বিপক্ষে ২০২১-এর ফাইনালে যাকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন গার্দিওলা!

তবে সেই গোল পর মুহূর্তেই শোধ করে দেওয়ার সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি ইন্টার মিলান। ডেঞ্জেল ডামফ্রাইসের হেড যায় সিটির বক্সে, সেটায় দুর্দান্ত এক হেড করেন দিমার্কো। তবে বল ফিরে আসে সিটির গোলবারে লেগে। ফিরতি বলে আবার হেড দিমার্কোর। কিন্তু এবার বলের সামনে পড়ে গেলেন দিমার্কোরই সতীর্থ বলদি নামা রোমেলু লুকাকু! ভাগ্যদেবীই যেন বাঁচিয়ে দিলেন সিটিকে।

রদ্রির কাজটুকুর পর দায়িত্বটা যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল এডেরসনের জন্য। যে করেই হোক গোলবার অক্ষত রাখতে হবে তাকে। বাকি প্রায় ৩৫ মিনিট একের পর এক পরীক্ষা দেন তিনি। একটিতেও ব্যর্থ হননি। ইন্টারের সুবর্ণ সুযোগগুলো একে একে নষ্ট করে দিতে থাকেন এই গোলকিপার। ৮৮ মিনিটে রোমেলু লুকাকুর হেড দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি।

সমতায় ফিরতে মরিয়ে হয়ে থাকা ইন্টার কর্নার পায় ম্যাচের শেষ মিনিটে। দিমাক্রোর নেওয়া সেই শট পোস্টের দিকেই এগোচ্ছিল। কিন্তু তা ঠেকিয়ে দেন এডেরসন। ঠিক এর পরেই বেঁজে উঠে রেফারির শেষ বাশি। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন সিটি ফুটবলাররা। স্বাদ পেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম শিরোপার। একইসঙ্গে ট্রেবলেরও। ১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেই কীর্তি প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে গড়েছিল। তখন কে ভেবেছিল, তার পরের লাইনটা সিটির হাত ধরে লেখা হবে! ইউরোপের ইতিহাসে দশম ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতল তারা।