দুর্নীতিবাজদের পরিণতি

প্রতীকী ছবি

দুর্নীতিবাজদের পরিণতি

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

সমাজের সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাধি হলো দুর্নীতি, যা সমাজকে কলুষিত করে তাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান, সম্পত্তির আত্মসাৎ এবং সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়ে জর্জরিত এই পৃথিবীতে অবৈধ পন্থায় আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মূলমন্ত্র দুর্নীতি। সাধারণত দুনিয়াপ্রীতি থেকেই মানুষ দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়।

যাদের কাছে পরকাল শুধুই অলিক গল্প, দুনিয়ার ভোগ-বিলাসই মুখ্য তাদের কাছে, দুর্নীতিটা সফলতার চাবিকাঠি। অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ কুক্ষিগত করতে পারা তাদের কাছে শিল্প। তারা এত সূক্ষ্মভাবে মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেয় যে মানুষ তা টের পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতি করে মানুষের সম্পদ লুণ্ঠন করা জঘন্যতম অপরাধ।

পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ কোরো না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

এ আয়াতটির এক অর্থ হচ্ছে, শাসকদের ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করো না। এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যখন জানো এগুলো অন্যের সম্পদ, তখন শুধু তার কাছে তার সম্পদের মালিকানার কোনো প্রমাণ না থাকার কারণে অথবা একটু এদিক-সেদিক করে কোনো প্রকারে প্যাঁচে ফেলে তাঁর সম্পদ তোমরা গ্রাস করতে পারো বলে তার মামলা আদালতে নিয়ে যেয়ো না।

কেননা, আদালত থেকে ওই সম্পদের মালিকানা অধিকার লাভ করার পরও প্রকৃতপক্ষে তুমি তার বৈধ মালিক হতে পারবে না। আল্লাহর কাছে তো তা তোমার জন্য হারামই থাকবে। অর্থাৎ দুর্নীতি করে দুনিয়ার আদালতকে ফাঁকি দিয়ে দুনিয়ার দৃষ্টিতে অন্যের সম্পদের বৈধ মালিক হওয়া সম্ভব হলেও মহান আল্লাহর দরবারে তা কখনো বৈধ বলে গণ্য হবে না। সুতরাং দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হস্তগত করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই।

তা ছাড়া দুর্নীতির মূল কারণ লোভ-লালসা, মানুষ লোভ-লালসা থেকে দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়।

যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এগুলো মানুষের দ্বিন-ধর্মকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। কাব ইবনে মালেক আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)

তাই নিজের দ্বিন-ধর্ম বাঁচাতে হলে অবশ্যই লোভ-লালসা ত্যাগ করতে হবে। আর লোভ-লালসা ত্যাগ করা গেলে দুর্নীতিও কমে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

বেশির ভাগ মানুষ দুর্নীতি করে ঘুষের লেনদেনের মাধ্যমে। যা মানুষকে অভিশপ্ত করে দেয়। কারণ যারা ঘুষের লেনদেন করে, নবীজি (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮০)

অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই সমান অপরাধী। উভয়ই দুর্নীতিবাজ, রাসুল (সা.) তাদের এই কাজে লিপ্ত নিকৃষ্ট মানুষদের অভিশাপ দিতে বাধ্য হয়েছেন। যাকে রাহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবীজি (সা.) অভিশাপ দিতে বাধ্য হয়েছেন, তার শাস্তির মাত্রা কতটা ভয়াবহ হবে, তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন!

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিদায়াত দান করুন।