সীতাকুণ্ডে এক রাতে ৩ খুন, জনমনে আতঙ্ক

সীতাকুণ্ডে নিহত আলমগীর হোসেন, মো নুর মোস্তফা ও ইমন। ছবি: সংগৃহীত

সীতাকুণ্ডে এক রাতে ৩ খুন, জনমনে আতঙ্ক

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নয় ঘণ্টার মধ্যে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি খুনের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন কিশোরকে আজ সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নিহতরা হলেন, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাইছড়ি (গামরিতল) এলাকার মানিক কোম্পানির বাড়ির মৃত আফজা উল্লাহর ছেলে ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৩৫), সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর বড়ইতলা (ছিন্নমূল) এলাকার মো. সবুজের ছেলে ইমন (১৫) ও বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের পশ্চিম লালানগর এলাকার ইউনিয়ন গ্রাম্য সরদার মো. নুর মোস্তফা ওরফে বজল (৫০)।

স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানান, গত রোববার রাত সাড়ে ১০টায় মুদি দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চৌধুরীঘাটা এলাকা অতিক্রমের সময় দুর্বৃত্তরা তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে ভাটিয়ারী বিএসবি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জঙ্গল সলিমপুরে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে ইমনকে (১৫) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সোমবার দুপুরে সীতাকুণ্ড থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে তাঁর বাবা।

ইমনের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে জঙ্গল সলিমপুরে ইমনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের কথা-কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তারা লাঠি দিয়ে ইমনের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ইমনকে নগরীর সাউদার্ন মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত তিনটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সীতাকুণ্ডের বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের পশ্চিম লালানগর এলাকায় পূর্ববিরোধের জেরে তৌহিদুল ইসলাম ও তাঁর অনুসারীরা গ্রাম্য সরদার নুর মোস্তফাকে গুলি করে ও কুপিয়ে যায়। এই ঘটনার পর তাকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পৃথক তিনটি খুনের ঘটনার মধ্যে দুটি খুন পারিবারিক বিরোধ ও বন্ধুদের মধ্যে মনোমালিন্যর কারণে হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও অনেকটা রহস্য ঘেরা সোনাইছড়ির ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের খুনের ঘটনাটি।

বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের লালানগর এলাকায় গ্রাম্য সরদার নুর মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পূর্ববিরোধের কারণে সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবার। এদিকে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নূর মোস্তফাকে বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন  বিএনপির সহসভাপতি দাবির পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করেছেন।

তবে মোস্তফার ছেলে তাওসিফ ফেরদৌস তারেক জানান, তাঁর বাবা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত তৌহিদুল ও তার বাবা নুর মোস্তফা আপন মামাতো-ফুপাতো ভাই। তাঁর বাবাকে হত্যার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাঁকে মোবাইলে ফোন করে হুমকি দিয়েছেন তৌহিদুল।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তৌহিদুল ও নুর মোস্তফার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ ছাড়া ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিস হয়। সালিসে তাঁকে গ্রামে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়। যার কারণে নুর মোস্তফার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তৌহিদুল। সন্ধ্যা তাঁকে একা পেয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।

অন্যদিকে আলমগীর হোসেন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাঁর চাচাতো ভাই মাওলানা শাহাবুদ্দিন বলেন, আলমগীরের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। সে দীর্ঘদিন প্রবাসী থাকার পর বাড়ি ফিরে এসে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করলেও তাঁর সঙ্গে থাকা নগদ নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই নিয়ে যায়নি।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, আলমগীর হোসেন চৌধুরীঘাটা এলাকায় একটি চায়ের দোকান চালাতেন। তাঁর ভাই জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তিনি রাজনীতি করতেন না। রাস্তার পাশে পথচারীরা আলমগীরের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে ভাটিয়ারী বিএসবিএ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ইমনের বাবা মো. সবুজ জানান, তাঁর স্ত্রী চাকরি থেকে ঘরে ফেরার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইমন ২০ টাকা চেয়ে নিয়ে নাশতা করতে যায়। ৮টার পর সে বাসায় ফেরার পেছন থেকে গাছ দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। আহত হয়ে অনেকক্ষণ সে ওই জায়গাতেই পড়ে ছিল। পরে লোকজন দেখে জানালে তাঁরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ইমনের ঝগড়া হয়েছিল। তারাই পরিকল্পিতভাবে ইমনকে গাছ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পৃথক তিনটি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছেন। গ্রাম সর্দার মোস্তফাকে পারিবারিক বিরোধে ও ইমনকে ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়ার কারণে হত্যা করা হয়েছে। তবে আলমগীর হোসেনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পূর্ব বিরোধের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

ওসি বলেন, এক রাতে পৃথক তিনটি ঘটনা ঘটলেও এখনো মোস্তফা ও আলমগীর হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে জঙ্গল সলিমপুরে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে কিশোর ইমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

news24bd.tv/aa