পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মাঝেই শেষ জানুয়ারি

পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মাঝেই শেষ জানুয়ারি

অনলাইন প্রতিবেদক

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আরও শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করে নিয়েছে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে দলটি। তবে সরকার পতনের একদফা দাবিতে এবারও নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।

২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো এবারও নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের।

যদিও দলটির নেতারা আগে থেকেই দাবি করে আসছেন বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। কারণ দেশের আদালতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে রয়েছে ছোট বড় অনেক অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ। বাস থেকে ট্রেন- বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত দলটির নেতাকর্মীরা।

পাল্টা অভিযোগ বিএনপি নেতাদের।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, বিগত দুইবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেনি। তার অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে। দলীয় ক্যাডার সিন্ডিকেটের খরচ জোগাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য করছে সরকার।

একইদিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিএনপিকে জালিয়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করেছেন। মন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে এসে বিএনপি এখন দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল থেকে জালিয়াত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে তারা। তবে মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী সন্ত্রাসী দল থেকে জালিয়াত দল হয়ে বিএনপির উন্নতি না অবনতি হলো- সেটাই ভাবার বিষয়।

বাকযুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কখনও পিছিয়ে ছিলেন এমন নজির নেই বললেই চলে। বিএনপির নেতাদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে বরাবরই ঘায়েল করতে ওস্তাদ জনাব কাদের। বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বক্তব্যে কাদের বলেন, বিএনপি রাজপথে ফ্রি স্টাইলে সমাবেশ করতে চাইছে। কাদেরের মতে রাজপথে কর্মসূচি করতে গেলে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। আইন অনুযায়ীও যেটা সিদ্ধ।

অভিযোগ করে কাদের বলেন, বিএনপির কালো পতাকা কর্মসূচির পক্ষে দেশের জনগণের কোনো সমর্থন নেই। অনুমতি না নিয়ে রাজপথে ফ্রি স্টাইলে কর্মসূচি দিলে সরকার চুপচাপ বসে থাকবে না। বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত।

যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে দলটির হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই দলটির সিনিয়র সব নেতারা কারাবন্দী। বিভিন্ন নাশকতা ও দুর্নীতির অভিযোগে তাদের আটক রাখা হলেও বিএনপির দাবি রাজনৈতিক কারণেই তাদের আটক রেখেছে সরকার। বিরোধীদের আটক রেখে একটি একদলীয় নির্বাচন করেছে সরকার।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির বিশাল কর্মসূচির আয়োজন করে। সেদিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় ২৯ অক্টোবর আটক হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত কারাগারেই আছেন বিএনপির এই নেতা। অন্যদিকে বিএনপির আরেক নেতা মির্জা আব্বাসও কারাগারে। ২৮ অক্টোবর পুলিশের ওপর করা হামলার মামলায় তাকে ৩১ অক্টোবর আটক করা হলেও তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় ২০০৭ সালে করা দুদকের মামলায়। তবে আটকের পরপরই পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, মির্জা আব্বাসকে শাহজানপুর থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

দোষারোপের রাজনীতিতে পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টি। তবে তাদের দোষারোপ নিজ দলের নেতাদের মধ্যেই। কারণ দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তারা নিজেরাই রয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্বে। এর ফলে অন্য রাজনৈতিক দলের খুব একটা সমালোচনা করতে দেখা যায় না তাদের। হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ছোটভাই জি এম কাদেরের বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কারের মধ্য দিয়েই কেটেছে গত পাঁচ বছর। তবে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের কালেভদ্রে আওয়ামী লীগের টুকটাক সমালোচনা করলেও 'সবার সাথে বন্ধুত্ব' নীতিতেই আগাচ্ছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। মাঝে মধ্যেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনের অতিথি হন তিনি।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক