আর্থিক সঙ্কট কাটাতেই ব্যাংক লুট করে কুকিচীন: র‍্যাব

র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আর্থিক সঙ্কট কাটাতেই ব্যাংক লুট করে কুকিচীন: র‍্যাব

অনলাইন ডেস্ক

আর্থিক সঙ্কট কাটাতে এবং অস্তিত্ব জানান দিতেই কুকিচীনের সদস্যরা বান্দরবানে ব্যাংক লুট করেছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে রাত সোয়া ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এই হামলা চালায়।

হামলার সময়ে বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা এই বিষয়টি তদন্ত করছি। যতটা জেনেছি হামলায় প্রায় শতাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন কেএনএফের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি সর্বপ্রথম র‍্যাব সামনে এনেছে।

এই কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) টাকার বিনিময়ে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়াকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয়, অস্ত্র সরবরাহ ও  প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। এই প্রশিক্ষণের জন্য তারা তিন বছর মেয়াদি চুক্তি করেছিল। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় র‍্যাব দীর্ঘ একটি অভিযান চালায়। অভিযানে ট্রেনিং সেন্টার শনাক্ত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ শতাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ও কুকিচীনের ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে।  

খন্দকার আল মঈন বলেন, আমাদের অভিযানের ফলে অনেকটা কোণঠাসা ছিল। সম্প্রতি শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলছিল। এই কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিনের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ রাখে। এই আলোচনা চলমান অবস্থায় গত ২ এপ্রিল শতাধিক কেএনএফ সদস্য সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়।

তিনি বলেন, হামলাকারীরা বাংলাদেশ পুলিশের ১০টি অস্ত্র ও আনসারের ৪টি অস্ত্র লুট করে। ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন বোল্টের চাবি না দেওয়ায় তাকেও অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপরের দিন তারা থানচিতে আরও দুটি ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে। ব্যাংক দুটি থেকে ভল্টের চাবি নিতে না পারলেও ব্যাংকে থাকা গ্রাহকের বেশ কিছু টাকা নিয়ে যায়।  

তিনি আরও জানান, প্রথম দিনের হামলায় তারা কোনো গাড়ি ব্যবহার করেনি। রাতের বেলা এসেছিল। প্রথম দিন বিদুৎ না থাকায় কোনো ফুটেজ ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের হামলায় তারা চাঁদের গাড়ি ব্যবহার করে। এই দিনের বেশ কিছু ফুটেজ পাওয়া গেছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যাংক ম্যানেজারকে অক্ষত ও নিরাপদে ফিরিয়ে দিতে চাই। এজন্য নানা কৌশলে কাজ করছে র‍্যাব। এখন পর্যন্ত ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে তার পরিবারের কথা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। এই সন্ত্রাসী সংগঠন মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দাবি করছে। তার অবস্থান শনাক্তে কাজ চলছে। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি, কীভাবে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা যায়। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ স্থানীয়দের দেখিয়ে ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করে জড়িতদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত। ব্যাংক ও তার আশপাশে এলাকায় তারা বেশ কিছুদিন ধরে ছদ্মবেশে অবস্থান করে আসছিল। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বলতে গেলে তারা টাকার জন্য কাজটি করেছে। টাকাটা তাদের মূল টার্গেট ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি শান্তি কমিটির মাধ্যমে শান্তি আলোচনা চলছে। এমন সময়ে তাদের অবস্থান ও আধিপত্য জানান দেওয়ার চেষ্টাই এই হামলা করা হয়। এই হামলায় অন্য কারো ইন্ধন রয়েছে কি না বা কোনো কারণ রয়েছে কি না সে বিষয়ে জানতে র‍্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছে। ইতোমধ্যে র‍্যাব-১৫ থেকে বান্দরবান ক্যাম্পে জনবল বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি র‍্যাব সদরদপ্তর থেকে পাহাড়ে অভিযানে দক্ষ র‍্যাব সদস্যদের বান্দরবান পাঠানো হয়েছে।

মঈন বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পার্বত্য এলাকায় অভিযান চালানো অত্যন্ত কঠিন। তাই অভিজ্ঞদের ছাড়া পাহাড়ে অভিযান চালানো দুরূহ। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় র‍্যাব অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা ও অস্ত্র উদ্ধারে কাজ করছে।

news24bd.tv/DHL