‌‘বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটাই আমাদের আজন্ম পাপ!’

‌‘বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটাই আমাদের আজন্ম পাপ!’

অনলাইন ডেস্ক

‘‌‌‌‌বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটা আজন্ম ‘পাপ!’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশি এক শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থীর নাম মুরাদ। চায়না থ্রি গরজেস বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তার ক্ষোভের কথা জানান।

চীনের উহানের পাশের শহর হুবেই প্রদেশের ইয়েচিংয়ে আটকা ওই শিক্ষার্থী বলছেন- ‘উহান যেদিন থেকে লকডাউন, ইয়েচিংও সেদিন থেকে লকডাউন।

‘এখন এখানে আমরা দুদিক থেকেই সমস্যায় আছি। লকডাউনের জন্য নিজে টিকেট কেটে দেশে যেতে পারছি না, একদম সরাসরি এপিসেন্টার না হওয়ায় সরকার আমাদেরকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। ’

‘আমাদের শহরে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছেই। ৩ দিন আগেও যেটা ছিল ২০০ এর ঘরে, তা এখন ৫৬৩।

চারজন সম্ভবত মারাও গেছেন। এম্বাসিতে যোগাযোগ করেছি। তারা কিছুদিন আশ্বাস দিয়েছেন, লিস্ট নিয়েছেন। এরপরে সুর পাল্টেছেন। তাদের নাকি ফান্ড নেই। ’

ওই ছাত্র বলছেন- ‘আমাদের সমস্যা শুধু ভাইরাস না। বড় সমস্যা খাবার। আগে অনুমতি নিয়ে বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারলেও ১ সপ্তাহ আগে থেকে ডর্মেটরি সিলড অফ! কোনোভাবেই বাইরে যাওয়া সম্ভব না। ’

‘এক্ষেত্রে ভার্সিটি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ক্যান্টিন থেকে খাবার অর্ডার করা যায়। একটা গ্রুপকে অর্ডার করলে তারা ডেলিভারি দেবে। এই খবর শুনেই এম্বাসি বলেছে খাবার নিয়ে আমাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। ’

চীনের দুর্ভোগের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আসলে জিনিসটা লিখিতভাবে যত সহজ শোনাচ্ছে বাস্তবে এতটা সহজ না। ক্যান্টিন থেকে যেসব খাবার দেয় সেখানে দাম অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় সমস্যা চাইনিজ খাবার, অনেকে মুখেই নিতে পারি না। খাবারের গন্ধ কেউ সহ্য করতে পারে না।

খবার সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি আলু, ডিম, চাউল অর্ডার করি ২ তারিখে। তারা আমাকে গতকাল ডেলিভারি দিয়েছে। ৬ টা ডিম, ৪ টা আলু। ২-৫ তারিখ পর্যন্ত আমি কী খেয়ে সারভাইভ করলাম। এটা এম্বাসি জানবে কীভাবে?

‘রুমে থাকা কয়েকটা শুকনো খাবার দিয়ে বেঁচে থাকা যায়? গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া ৬ টা ডিম আর ৪টা আলু দিয়ে আমি কতদিন বেঁচে থাকব। ’

তিনি আরও জানাচ্ছেন, খাবার পানির একটা বড় সমস্যা ছিল, কয়েকদিন ট্যাপের পানি ফুটিয়ে খেয়েছি। একদিক থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সকালে উঠে আপডেট চেক করার পর আমাদের কেমন লাগে তা বলে বোঝানোর মতো না। সাথে খাবারের সমস্যা। এতসব মানসিক প্রেসারের পর আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। ’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্বৃতি দিয়ে ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, চায়নাতে আমাদের চিকিৎসা ভালো হবে। দেশে না যেতে। মাননীয় স্বাস্থমন্ত্রী, আমরা কেউ এখনো আক্রান্ত হইনি। এখনই চিকিৎসার ব্যাপার কেন আসছে? এইটা কোন ধরনের গোঁজামিল। সুস্থ থাকা অবস্থায় দেশে নেবার ব্যবস্থা না করে অসুস্থ হবার পর ভালো চিকিৎসা দেখানো হচ্ছে।

‘ভারত, মরোক্কো, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কান বন্ধুদেরকে দেশে ফিরে যেতে দেখলাম। আফ্রিকার কয়েকটি দেশও তাদের স্টুডেন্ট ফিরিয়ে নিয়েছে। আগামীকাল আরও ২টা দেশ তাদের স্টুডেন্টদের ফিরিয়ে নেবে। আমরা বাংলাদেশিরাই কয়েকজন আফ্রিকানের সঙ্গে এখনো আছি। ’

বারবার এম্বাসি থেকে ফান্ডের কথা শোনানো হয়। সত্যিই এই দেশ বিপদের সময়ে ১৭১ স্কলারদের দেশে ফেরাতে পারছে না ফান্ডের অভাবে। দ্যাটস আ শেইম। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন ওই শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়ে ওই শিক্ষার্থী জানান, সবকিছু ভুলেই আমরা তাকিয়ে আছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে। তারাও যদি আমাদের সুস্থ অবস্থায় না ফিরিয়ে অসুস্থ হওয়ার পর চীনের উন্নত চিকিৎসার কথা শোনায়, তাহলে মরে যাবার পর যেন আমাদের এপিটাফে লেখা হয় ‘বাংলাদেশে জন্ম নেওয়াটাই ছিল আমাদের আজন্ম পাপ। ’

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর