লিটন-মিঠুন-সাইফের ব্যাটে রানের পাহাড়

লিটন-মিঠুন-সাইফের ব্যাটে রানের পাহাড়

অনলাইন ডেস্ক

লিটন-মিঠুন-সাইফের ব্যাটে রানের পাহাড় গড়ল বাংলাদেশ। লিটনের অনবদ্য সেঞ্চুরি ও মিঠুনের ফিফটি আর সাইফের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়েকে ৩২২ রানের টার্গেট দিল তারা।

এ ম্যাচ দিয়ে দীর্ঘ ৭ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রত্যাবর্তনেই টসভাগ্যে জেতেন তিনি।

রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাতে জিতে আগে ব্যাটিং নেন টাইগার অধিনায়ক।

তার সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক প্রমাণ করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তারা। ওপেনিংয়ে ৬০ রান তোলেন এ জুটি।

ব্যক্তিগত ২৪ রানে উইসলি মাধেভেরের এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তামিম। অবশ্য ব্যাটিংয়ে তেমন সাবলীল ছিলেন না তিনি। সর্বোপরি, রিভিউ নিলেও শেষরক্ষা হয়নি ড্যাশিং ওপেনারের।

তবে শুরু থেকেই স্বচ্ছন্দে ছিলেন লিটন। ছন্দময় ব্যাট করেন তিনি। ব্যাটে ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। পথিমধ্যে ফিফটি তুলে নেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সেই যাত্রায় তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিজে নামার পর থেকেই জিম্বাবুয়ে বোলারদের শাসান তিনি। তেড়েফুড়ে খেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

কিন্তু বিধিবাম! আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন শান্ত। তিনোতেন্দা মুতম্বোদজির বলে ফেরার আগে ২৯ রান করেন তিনি। পরে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, ইম্প্যাক্ট ছিল স্টাম্পের বাইরে। বলটি কোনোভাবেই স্টাম্পে লাগছিল না। রিভিউ ছিল না বলে এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি শান্ত। কারণ, আগেই তা নষ্ট করেন তামিম। তাতে ভাঙে ৮০ রানের জুটি।

তবে আস্থার সঙ্গে খেলে যান লিটন। ব্যাটে ছোটান রানের ফোয়ারা। ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় শতক। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেন এ ব্যাটার। দুই বছর পর পেলেন আরেকটি। তিন অংক ছোঁয়ার পথে লিটনের ব্যাট থেকে আসে ১০ চার ও ১ ছক্কা।

এসময়ে তার সঙ্গে জোট বাঁধেন মুশফিকুর রহিম। দারুণ খেলেন তারা। তাতে দ্রুত ঘোরে বাংলাদেশের রানের চাকা। বড় স্কোরের পথে এগিয়ে যেতে থাকেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে হঠাৎ ছন্দপতন। লিটনের সেঞ্চুরির পরই বিদায় নেন মুশফিক। ডোনাল্ড তিরিপানোর শিকার হওয়ার আগে তিনি করেন ১৯ রান। তবে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি একমাত্র টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মিস্টার ডিপেন্ডেবল।

ক্রিজে নামার পর থেকেই ব্যাট হাতে স্বচ্ছন্দে ছিলেন লিটন। তবে শরীরটা ফিট ছিল না! সময় গড়ানোর সঙ্গে পা বেশ ভোগায়। রান নিতে খোঁড়ান। মাধেভেরেকে বিশাল ছক্কা হাঁকানোর পর আর পারেননি তিনি। ফিজিওর সঙ্গে মাঠ ছাড়েন লিটন। এর আগে ছাড়িয়ে যান ওয়ানডেতে নিজের আগের সেরা ইনিংস।

আগের ওভারেই তিরিপানোকে ৩ চার মারেন লিটন। একবার হেলমেটে বল লাগলেও থমকে যাননি। কিন্তু মাধেভেরেকে ছক্কা মারার পর মাঠ ছাড়তেই হয় তাকে। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে ফেরত আসেন তিনি। এসময় তার রান ছিল ১০৫ বলে ১২৬। সেই পথে ১৩ চার ও ২ ছক্কা মারেন লিটন। ওয়ানডেতে তার আগের সেরা ভারতের বিপক্ষে ১২১, এশিয়া কাপে।

এরপর ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝড় তোলেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাকে যথার্থ সমর্থন দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনই একের পর এক চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকেন। কিন্তু অতি আগ্রাসী হতে গিয়েই সর্বনাশ। ক্রিস এমপফুর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফিনিশ হন মাহমুদউল্লাহ। ফেরার আগে ৩২ রানের ক্যামিও খেলেন তিনি।

সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হাতে পারেননি মিঠুন। ওডিআই ক্যারিয়ারে পঞ্চম ফিফটি হাঁকানোর পরই ফেরেন তিনি। প্যাভিলিয়নে ফেরত আসার আগে ৪১ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় কাঁটায় ৫০ রান করেন এ মিডলঅর্ডার। সেই রেশ না কাটতেই কার্ল মুম্বার বলির পাঁঠা হন মেহেদী হাসান মিরাজ।

তবে রান তোলার গতিতে ভাটা পড়েনি। অন্তিমলগ্নে ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে জিম্বাবুয়ে বোলারদের কচুকাটা করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মাত্র ১৫ বলে ৩ ছক্কায় ২৮ রানের হার না মানা ক্যামিও খেলেন তিনি। শেষ অবধি তার ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটে ৩২১ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। এটিই জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় রান। আর সবমিলিয়ে অষ্টম। সফরকারীদের হয়ে ক্রিস এমপফু নেন ২ উইকেট।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর