স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, মানুষ বাঁচান

স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, মানুষ বাঁচান

শওগাত আলী সাগর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন- তখনও প্রশ্নটা করেছিলাম, এখনও করি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় চিকিৎসাখাতের জন্য, হাসপাতালের জন্য, চিকিৎসকদের জন্য, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বরাদ্দটা কোথায়? আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলার পরিকল্পনাটা কি?

করোনায় চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কোনো চিকিৎসক মারা গেলে তার জন্য বীমার টাকার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসককে বাঁচিয়ে রাখার, নিরাপদে কাজ করে যাওয়ার পরিবেশ তৈরির জন্য বরাদ্দ কোথায়? মৃত্যুর পরে তার পরিবারকে টাকা দেয়ার চেয়েও তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগটা জরুরি। কেননা, চিকিৎসক বেঁচে থাকলে হাজার জন মানুষ বেঁচে যাবেন।

বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকা স্বাস্থ্যখাতের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ‘সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে’, ‘আগাম প্রস্তুতি’- এইসব বক্তৃতায় যে করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধ করা যায় না- সেটা যদি এখনো কেউ বুঝতে না পারেন তাদের ধিক্কার দেয়া ছাড়া আমাদের কিই বা করার আছে!

যে চিকিৎসকরা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন, যে নার্স, টেকনোলোজিস্ট, বয়, আয়া -তারাও আপনার আমার মতো মানুষ। তাদের পরিবার পরিজন আছে, তাদেরও জীবনের মায়া আছে। ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা রোগীর সেবা দেবেন, চিকিৎসা সেবা দেবেন’- এই অঙ্গীকার করেই একজন চিকিৎসক সনদ নেন। চিকিৎসকরা যাতে ‘যে কোনো পরিবেশে চিকিৎসা সেবা দিতে পারে’ তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করার, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও কিন্তু রাষ্ট্র করেছে।

রাষ্ট্রকেও তার সেই অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই।

যে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী এখন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন- তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী আছে কী না, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী আছে কী না, দিনের তিন বেলা না হোক অন্তত এক বেলা ভালো করে তারা খেতে পারছেন কী না- সেই খবর কি কেউ নিয়েছেন? কেউ কি একবারও তাদের জিজ্ঞেস করেছেন- তাদের কোনো সমস্যা আছে কী না! কেউ কি তাদের ভালোবেসে বলেছেন- ভয় পেয়োনা, আমরা তোমাদের সাথে আছি, পাশে আছি!

করোনা ভাইরাস একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, এটি রাজনৈতিক সমস্যা নয় যে কেবল পুলিশ সেনাবাহিনী দিয়ে এটি মোকাবেলা করে ফেলবেন। এটি বন্যা, ঘুর্ণিঝড় নয় যে চুরি চামারীর পরও যতোটুকু ত্রাণ সামগ্রী মানুষের কাছে পৌঁছায় তা দিয়ে পরিবেশ সামলে ফেলবেন! এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য চিকিৎসকদেরই লাগবে, স্বাস্থ্যকর্মীদের লাগবে। তাই তাদের পাশে দাঁড়ান, তাদের সমস্যাগুলো দূর করুন।

মনে রাখবেন চিকিৎসকদের, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুস্থ, স্বাভাবিক রাখতে না পারলে, তাদের কাজ করার পরিবেশ দিতে না পারলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। তেলবাজ চামচাদের ‘আপনার সানুগ্রহ নির্দেশনায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে’- জাতীয় স্তুতিবাক্য করোনার প্রতিষেধক নয়।

সরকারকে অনুরোধ করবো–ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, মানুষ বাঁচান। আমার বন্ধু তালিকায় থাকা প্রত্যেককে অনুরোধ করবো- আপনারাও আওয়াজ তুলেন-ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, মানুষ বাঁচান।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুন দেশ ডটকম।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) 

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল