বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ছেনা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, লোকসানে জেলে-মহাজনরা

বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়ছেনা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, লোকসানে জেলে-মহাজনরা

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সরকার ইলিশ রক্ষায় ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে সাগরে গিয়ে প্রায় ইলিশ শূন্য হয়ে ফিরছে ফিশিং ট্রলারগুলো। প্রথম ট্রিপে প্রত্যেক ফিশিং ট্রলার মালিক কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা করে লোকসান গুণতে হয়েছে।  

আবার দ্বিতীয় ট্রিপের প্রস্তুতি নিতেই শুরু হয় নিম্নচাপ। বৈরী আবহাওয়ায় সমস্ত ফিশিং ট্রলার অবস্থান করছে উপকূলে।

বর্তমানে দ্বিমুখী সংকটে পড়ে ভালো নেই বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবিসহ শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া, রামপাল ও মোংলা উপজেলায় সাগরে ইলিশ আহরণ করতে যাওয়া জেলে, ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়ৎদাররা।

শুক্রবার (৭ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেবিঘাট ও শরণখোলার রায়েন্দা-রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ঘাটে খোজ নিয়ে জানা গেছে, শত শত ফিশিং ট্রলার নোঙর করে আছে। বাজারঘাট করে সাগরে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন জেলেরা। সাগর উত্তাল তাই ট্রলারেই অলস সময় পার করছেন তারা।

 

আবার প্রথম ট্রিপে প্রত্যেক ফিশিং ট্রলার মালিক কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় অনেকে দ্বিতীয়বার সাগরে যেতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। শরণখোলার রায়েন্দার এফবি আরিফুল ইসলাম ট্রলারের মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আলামীন ঘরামী জানান, অবরোধ শেষে দাদন ও ধারদেনা করে দুই লাখ টাকা খরচ করে ট্রলার পাঠিয়েছিলেন সাগরে।

মাত্র ৫০০ ইলিশ নিয়ে ট্রলার ঘাটে ফেরার পর ওই মাছ বিক্রি করেছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকায়। প্রথম চালানেই তার ৮০ হাজার টাকা লোকসান। তাই টাকার অভাবে দ্বিতীয়বার ট্রলার সাগরে পাঠাতে পারছেন না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

শরণখোলা মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার ফরাজী জানান, তার এফবি রূপসা ট্রলারে খচর হয় দুই লাখ টাকা। কিন্তু গোন শেষে সামান্য কিছু ইলিশ ও বাজে মাছ নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসে জেলেরা। সেই মাছ বিক্রি করেছেন মাত্র ৬০ হাজার টাকা। প্রথম গোনে (ট্রিপে) তার মতো সব মহাজনেরই লোকসান হয়েছে।  

বাগেরহাট জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, প্রথম গোনে আমার এফবি মুন্না-১ ও এফবি জিসান-১ নামের দুটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে খরচ হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। দুটি ট্রলারে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে দুই লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আমার লোকসান গুণতে হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার টাকা। অনেকে টাকার অভাবে সাগরে যেতেই পারবেনা।  

তার ওপর দ্বিতীয় ট্রিপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই সাগরে নিম্নচাপ দেখা দেয়। সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণকারী প্রায় ৬০০ ফিশিং ট্রলার বিভিন্ন ছোট ছোট নদী-খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকলে দ্বিতীয় ট্রিপেও চরম লোকসানে পড়তে হবে। বর্তমানে জেলে-মহাজনরা দাদন ও ধারের টাকা কিভাবে শোধ করবেন সেই চিন্তায় রয়েছেন।

বঙ্গোপসাগরে ইলিশ না পাওয়ার ব্যাপারে এসব জেলে, ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়ৎদারা জানান, বাংলাদেশ ইলিশ রক্ষায় ৬৫ দিনের অবরোধ দিলেও ওই নিষিদ্ধ সময়ে ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা মাছ ধরা অব্যাহত রাখেন। তখন ওইসব দেশের জেলেরা অবাধে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়।  

এ কারণে অবরোধ শেষ হলেও বাংলাদেশ সীমানা ইলিশ শূন্য হয়ে পড়ে। তাদের দাবি সব দেশ একই সময়ে ইলিশ রক্ষায় অবরোধ দিলে এককভাবে কোনো দেশ ইলিশ সংকটে পড়বে না। বিশেষজ্ঞরাও মৎস্যজীবীদের এই যুক্তির সঙ্গে অনেকটা একমত পোষণ করেছেন।

বাগেরহাটের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক মৎস্যজীবীদের এসব যুক্তিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, যেহেতু বিষয় একই। তাই বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের নীতিনির্ধারকরা বসে একই সময়ে ইলিশের অবরোধের সময় নির্ধারণ করলে এককভাবে কোনো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।  

তাছাড়া, অনেক সময় ইলিশের বিচরণের গতিপথও পরিবর্তন হয়। ইলিশ না পাওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে। আবার বর্তমানে সাগরে পানির প্রবাহ বেশি। যার ফলে জেলেরা গভীরে যেতে না পারায় জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে।  

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল