ভোটের আগে বাজি ধরার প্রতি আমার নেশা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিগত কয়েকটা র্নিবাচনে আমি নিয়মিত বাজি ধরছি। সব বাজিতে আমি জিতেছি বলবো না। তবে এ নেশা অনেকটা জুয়ার নেশার মতো।
বারাক ওবামার দুইটা ভোটে আমি জিতেছি। আমি ওবামা জয়ী হবেন বলে বাজি ধরেছিলাম । পত্রিকায় লেখা আমার বিশ্লেষনেও আমি দ্বিধাহীনভাবে ওবামা জয়ী হবেন বলে লিখেছি।গত ২০১৬ সালের ভোটে আমি হেরেছি।
আমার অত্যন্ত প্রিয় অনুজ হাসানুজ্জামান সাকী যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে। সে আমাকে বলেছিল, নীরব ভোট বিপ্লব হলে ট্রাম্প জয়ী হবে । আমি তার কথায় আস্থা রাখতে পারিনি। তাই প্রতিটি টকশোতে আমি বলেছি, হিলারি ইতিহাস গড়বেন। বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে হিলারির ইতিহাস গড়া হলো না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেন।
একদিক থেকে আমি জয়ী হয়েছিলাম। ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হতে পারলেন না। যুক্তরাষ্ট্রে ভোট বেশি পেলেই প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না। ইলেক্টোরাল ভোটে জয়ী হতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ টি অঙ্গরাজ্য রয়েছে। এসব অঙ্গরাজ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যায় ইলেক্টোরাল ভোট আছে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিকে বলা হয় ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া। এটি কোনও রাজ্যের অধীন নয়। তবে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট আছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে ইলেক্টোরাল ভোট ৫৩৮। তার মধ্যে যে প্রার্থী ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন; তিনি হবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। কোনও অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন; ওই রাজ্যের সকল ইলেক্টোরাল ভোট তিনি পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের কিছু রাজ্য ঘাঁটি আছে। যেমন নিউইয়র্ক ডেমোক্রেট ঘাঁটি।
বাংলাদেশে যেমন গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি; বগুড়া বিএনপি'র। যুক্তরাষ্ট্রেও তাই। ফলে ওইসব রাজ্য নিয়ে কারও কোনও চিন্তা নেই। তবে সারাদেশে ১২ রাজ্য আছে সুইং স্টেট, দুদোল্যমান রাজ্য, এদের কোনও চরিত্র নেই। এরা কখনও রিপাবলিকানদের জয়ী করে আবার কখনও ডেমোক্রেটদের। ওইসব রাজ্যের ভোটে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়। ফলে আমেরিকার ভোট মানে সুইং স্টেটের ভোট। এসব রাজ্যে প্রচারে প্রার্থিদের ঘাম ঝড়ে। কেননা জয়ের জন্যে ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট প্রয়োজন। সুইং স্টেটে ১৯০ ভোট আছে। সুইং স্টেটের মধ্যে ফ্লোরিডাকে বলা হয় ভাগ্য নির্ধারনী। ফ্লোরিডায় ২৯ ইলেক্ট্রোরাল ভোট আছে । কথায় আছে, ফ্লোরিডায় জিততে না পারলে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হয় না ।
আমেরিকায় আরেকটা বিষয় আছে আগাম ভোট। ডাকযোগে ভোট দেয়া যায়। এবার সবচেয়ে বেশি আগাম ভোট পড়েছে। এবার মোট ভোটার ২৪ কোটি। এখন পর্যন্ত রেকর্ড সাত কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আগাম ভোট বেশি। ৩ নভেম্বর ভোটের দিন পর্যন্ত ১০ কোটি আগাম ভোট পড়তে পারে। এখন পর্যন্ত সুইং স্টেটে আগাম ভোটের জরিপে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন । আরিজোনায় ২ দশমিক ৭, ফ্লোরিডায় ১ দশমিক ৯, জর্জিয়ায় ০ দশমিক ৫, লোয়ায় ১ দশমিক ১, মিশিগানে ৭ দশমিক ৮, মিনেসোটায় ৭ দশমিক ১, নাভাদায় ৫ দশমিক ৮, নর্থ ক্যারোলিনায় ১ দশমিক ৯, পেনসালভেনিয়ায় ৫ দশমিক ৪, উইসকনসিনে ৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে আগাম ভোটে এগিয়ে জো বাইডেন।
অপরদিকে, ওহাইয়োতে ১ ও টেক্সাসে ১ দশমিক ৭ পয়েন্টে এগিয়ে ট্রাম্প । তবে এভাবে এগিয়ে থাকাই জো বাইডেনের জয়ের জন্য যথেষ্ঠ নয় । কারণ শেষ দিকে ট্রাম্প এগিয়ে যাচ্ছেন । তারপর ৩ নভেম্বর ভোটের দিনে রিপাবলিকান ভোটাররা ভোট দেবেন বেশি । এবার ১৫ কোটি লোক ভোট দিতে পারেন । ভোটার উপস্থিতি ৬৫ শতাংশ হতে পারে । ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন । ওই সময় ৬ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন । নারীদের কোনও ভোটাধিকার ছিল না । এখন সাধারনত ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দেন না । কিন্তু এবার ৬৫ শতাংশ ভোট দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটে বড় বিষয় বর্ণবাদ। সাদা চামড়ার ভোটার ৬৭ শতাংশ। কালো কিংবা শ্যাম বর্ণ ৩৩ শতাংশ। সাদারা সাধারণত রিপাবলিকানদের ভোট দেন। কালো আর শ্যামারা ডেমোক্রেটদের। ট্রাম্প বর্ণবাদ উস্কে দিয়েছেন। হোয়াইট সুপ্রিমেসি দিয়ে সাদা ভোট টানতে চাইছেন। তার আমলে আশকারা পেয়ে কিছু কালো মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। তারপর শুরু হয় "ব্ল্যাক ব্লাড মেটার্স" আন্দোলন। বণর্বাদ ভোটে ফ্যাক্টর। কালো ভোট পাওয়া নিশ্চিত করতে বাইডেনের পক্ষে নেমেছেন ওবামা।
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ট্রাম্প ব্যর্থ হয়েছেন বলে বাইডেন প্রচার করছেন। ট্রাম্প অর্থনীতি ভাল করেছেন। সেটা তার প্রচারে ব্যবহার করছেন।
আমেরিকায় এবার শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নাও হতে পারে । ট্রাম্প আগাম ঘোষণা দিয়েছেন ডাকযোগে ভোটে চুরি হচ্ছে। তিনি ফলাফল না মানলে আদালতে গড়াবে। ২০০০ সালে আদালত আল গোর ও বুশের মধ্যে বুশকে জয়ী ঘোষণা করেছিল। ট্রাম্প শূন্য পদে নতুন বিচারক দিয়েছেন। অ্যামি কোনি ব্যারেট। রিপাবলিকান সমর্থক। ৯ সদস্যের আদালতে ৬ সদস্য রিপাবলিকান। ৩ সদস্য ডেমোক্রেট।
আদালতে গড়ালে ট্রাম্পের পক্ষে রায় হবে । ট্রাম্প তাই উল্লসিত ।
আমি ভোটে জো বাইডেনকে এগিয়ে রেখেছি । শেষ হাসি কে হাসবে জানি না । আমার বাজি বাইডেন । আপনার ?
মাসুদ করিম, সিনিয়র সাংবাদিক ।
(ফেসবুক থেকে)