আমাদের পরিবারের নতুন সদস্য

আমাদের পরিবারের নতুন সদস্য

আনোয়ার সাদী

আমাদের পরিবারে চার নতুন সদস্য যোগ হয়েছে। তারা গাছ। একটা মরিচ গাছ, একটা কামরাঙ্গা মরিচ, একটা গোলাপ আর সব শেষে যোগ হয়েছে মানিপ্ল্যান্ট।   

মানিপ্ল্যান্টের জায়গা হয়েছে ডাইনিং টেবিলে।

মানে আমাদের সাবার মাঝে সে ঘর আলো করে সবুজ এক বোতলে বসে আছে। বেড়ে উঠার জন্য তার মাটি লাগে না। সে পরিষ্কার পানিতে বাস করে। এই পানি নিয়ে আমাদের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক কাজ করে।
কেননা পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করে। ফলে, প্রতিদিন আমরা পানির দিকে গভীরভাবে তাকাই, গাছের শিকড় ছাড়া আর কিছু দেখা যায় কী না দেখি।  

সবাই যদি নিজের ঘরটা এডিস মশা মুক্ত করতো, আর আমাদের মেয়ররা রাস্তা ঘাট মশামুক্ত করতো তাহলে হয়তো আমরা প্রিয় ঢাকা শহরকে মশা মুক্ত করতে পারতাম। আমার খুব আফসোস হয় সেটা আমরা পারিনি। খারাপ বিষয় হলো, গত বছর এডিস মশাকে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি । এই মশা একবার প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়লে আমরা কী সহজে তা নির্মূল করতে পারবো ? মনে হয় না। কথায় বলে না, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। মানে সময় মত অল্প পরিশ্রমে যা করা যায়, তা না করলে অন্য সময় এর জন্য অনেক বেশি সময় দিতে হয়। মশা মারার ক্ষেত্রে হয়তো খরচ অনেক বেড়ে যাবে।  

আমার ধারণা এখন পড়ার চল অনেক কমে গেছে বলে, এসব প্রবাদ প্রবচন কেউ পড়ে না। পড়লে হয়তো সমাজ ভিন্নরকম হতো।  

যাহোক, গাছদের কথা বলছিলাম। গাছের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের মাত্রা অনন্য । মানুষ গাছ থেকে ফল নেয়, ফুল নেয়, খাবার নেয়, অক্সিজেন নেয়, ওষুদ বানানোর উপকরণ নেয়, ঘর ও আসবাব বানানোর উপকরণ নেয়, কী নেয় না ? গাছের সঙ্গে কী মানুষের বন্ধুত্ব হয়? গাছ কী সাড়া দেয়? এ নিয়ে আহমদ ছফার দারুণ একটা বই আছে। পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গ পুরান। সেই বইয়ে তিনি গাছের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা লিখেছেন। বারান্দায় মোড়ায় বসে একটা গাছের সঙ্গে গল্প করতেন তিনি। এক সন্ধ্যায় অনুভব করলেন গাছ ঝুঁকে তার গায়ের ওপর পড়ছে। তিনি গাছের অন্যদিকে বসলেন, দেখলেন গাছ আবারো তার গায়ের ওপর ডাল নামিয়ে দিয়েছে। এটা তার চেতনায় দারুন এক অনুভূতি ছিলো।  

গাছ নিয়ে বিজ্ঞান এখন আমাদেরকে বিস্তারিত ও ভিন্ন রকমের নানা তথ্য জানায়। এই যেমন গাছরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে শেকড়ের মাধ্যমে। এক গাছ অন্য গাছ কে শেকড়ের মাধ্যমে পুষ্টি পাঠায়। কী দারুন যোগযোগ ! আচ্ছা তারা কী এ সময় কোনো বার্তা পাঠায়। ধরুন কোনো একজন দুর্নীতিবাজ হেঁটে যাচ্ছে, আর নিচে শেকড়ে শেকড়ে এক গাছ অন্য গাছকে সেই লোকটা সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে, বলছে ওই যে দুর্নীতিবাজ যাচ্ছে ।  

কী জানি গাছরা হয়তো বলে, মানুষরা শুনতে পায় না বলে গট গট করে ঘাস মাড়িয়ে গাছের দিকে না তাকিয়ে হেঁটে চলে যায়।  

যাহোক, পরিবারের বাকী সদস্যদের স্থান হয়েছে বরান্দায়। সেখানে রোদ আসে। কামরাঙ্গা মরিচ গাছের গোড়ায় আরেকটা গাছ হয়েছে। আমি তার নাম জানি না। বুনো গাছ । আমার হিসাবে সে আগাছা। তাকে তুলে ফেলে দেওয়াই নিয়ম। কিন্তু আমার সন্তান তা করতে দিতে চায় ন। সে চায় সেই সুন্দর গাছটাও বড়হোক। আগাছা বলে তার জগতে কিছু নেই। প্রকৃতির কাছে কী আগাছা বলে কেনো ধারণা আছে? বড়দের জগত বড় জটিল। ছোটোদের জগত বরং অনেক সরল। আমরা যদি ছোটোদের জগতের মতো সরলভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে পারতাম, শহরকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে পারতাম। কতো ভালো হতো। তাই না ? 
আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজ টোয়েন্টিফোর।

এই রকম আরও টপিক