ওয়াজে ধর্মকে উগ্রভাবে তুলে ধরা হয়, শান্তির ধর্মকে রূপান্তরিত করা হয় অশান্তির ধর্মে

ওয়াজে ধর্মকে উগ্রভাবে তুলে ধরা হয়, শান্তির ধর্মকে রূপান্তরিত করা হয় অশান্তির ধর্মে

শোয়াইব জিবরান

আমার আবাসনের পাশে দুইটা ছোট গ্রামীণ ধরনের বাজার আছে। একটিতে প্রধানত এ এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা কেনাকাটা করেন। ফলত দাম স্বাভাবিক চড়া। কিন্তু আবাসনের লাগোয়া বাজারটি একদম মনের মত।

পাশের গ্রাম থেকে তাজা শাকসব্জি আসে। দামও যুক্তিসঙ্গত। দোকানদের মধ্যেও গ্রামের বাজারের আত্মীয় আত্মীয় ভাব আছে।  

ফলত ক্যাম্পাসের ভেতরে সুপার শপ থাকলেও সে বাজারেই সদাই করে আনন্দ পাই।

এ বাজারের মূল ক্রেতা মেট্রোরেলের নির্মানাধীন আবাসনের সাথে জড়িত মানুষ আর আমরা আবাসনের বাসিন্দারা।

সকালে বাজার করতে গিয়েছিলাম। শাকসবজি কিনছি আর শুনি পাশের টং চায়ের ঘরে উচ্চ স্বরে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। বাকবিতণ্ডার বিষয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আর হেফাজতের ফতোয়া।

দুই পক্ষই ইসলামী নানা মসলা দিচ্ছেন ইসলামী চিন্তাবিদদের মত। অথচ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার্কিকরা নিরক্ষর বা খুবই অল্প অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন নির্মাণ শ্রমিক। কিন্তু অমন করে যুক্তুতর্ক করছেন মনে হতে পারে এক এক জন মুফতি, ইসলামী তাত্ত্বিক। দুপক্ষই ইসলামের আলোকে ভাস্কর্য হারাম কি হারাম নয় মূলত এই পয়েন্টেই আছেন। আক্রমণ হিসেবে একপক্ষ আরেক পক্ষকে আওয়ামী লীগ বা জামাত চিহ্নিত করছেন।

এ দৃশ্য স্বাভাবিক নয়। ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে রাজনীতি এতো দিন ছিল সমাজের কিছু ধান্দাবাজ আর সুযোগ সন্ধানীর ব্যবসার বিষয়। কৃষক-শ্রমিক তথা সাধারণ মানুষ এগুলোর ধার ধারতেন না। তারা ছিলেন ধর্মপ্রাণ, উদার, অসাম্প্রদায়িক।  

এই সমাজের একদম নিচ পর্যায় পর্যন্ত মানুষের চিন্তাকে উগ্র করে তোলা হয়েছে। এগুলো মূলত গ্রামে গ্রামে মাইক লাগিয়ে ওয়াজ মাহফিলের ফল। সে সব ওয়াজ ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সবার হাতে হাতে।

জ্ঞানী মানুষ, চিন্তাশীল মানুষ কখনও উগ্র হতে পারেন না। কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের নামে আয়োজিত এসব সভায় ধর্মকে যেভাবে উগ্রভাবে তুলে ধরা হয় তাতে, চিৎকার, হুমকী ধামকির মাধ্যমে যে  উত্তেজনা তৈরি করা হয় তা সমাজের সর্বস্তরে, বিশেষত নিম্নস্তরে অস্বাভাবিকভাবে সঞ্চারিত হয়েছে।  
একটা শান্তির ধর্মকে উগ্রতা, অশান্তির ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

এ বিষফল ইতোমধ্যে ফলতে শুরু করেছে। কতদূর অশান্তিতে গড়ায়, মা'বুদ জানেন।