সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর জন্য ৮৮ পুকুর খনন

সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর জন্য ৮৮ পুকুর খনন

মিটবে মিঠাপানির চাহিদা
Other

বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমির বন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় মিঠাপানির চাহিদা মেটাতে অবশেষে খনন ও পুনঃখনন করা হচ্ছে ৮৮টি পুকুর। ২৪ ঘণ্টায় ২ বার সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত এই লবণাক্ত এই বনভূমিতে একই সাথে পুকুরে পাকা ঘাট না থাকা ৭০টি পুকুরে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ঘাট। এসব পুকুর বণ্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো পাশাপাশি সুন্দরবনে থাকা বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীনহ বনজীবী ও পর্যটকদেরও সুপেয় পানির চাহিদা মেটাবে।

জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়ানে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননে ব্যায় হচ্ছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী হরিণসহ বন্যপ্রাণীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকাগুলোতে এসব পুকুর খনন ও পুন:খননের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হলে প্রাণ বাঁচাতে বন্যপ্রাণীগুলোকে আর লবনাক্ত পানি খেতে হবে না। সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ ভাগ।

রাত-দিন ২৪ ঘন্টায় ৬ বার তার রূপ বদলানো এই ম্যানগ্রোভ বনভূমি। দিনে ২ বার সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া লবণাক্ত স্থলভাগের পরিমান ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার। সংরক্ষিত এই বনের ৩টি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণঅ করে। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা। সুন্দরী, গেওয়া,গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। এছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে।


ইতিধ্যেই সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে ১ প্রজাতির বন্য মহিষ, ২ প্রজাতির হরিণ, ২ প্রজাতির গন্ডার, ১ প্রজাতির মিঠা পানির কুমির। গোটা সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জর ১৮টি রাজস্ব অফিস, ৫৬টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত জলাভূমিও। সুন্দরবনের জলভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমান ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের এইজল ভাগে ছোট বড় ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খালে রয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘উইল ইউ ম্যারি মি?’ ইউটিউবে শ্রীলেখার ভিডিও

সুন্দরবনের মধ্যে থাকা পুকুরগুলো ঝড়-জলোচ্ছাসে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীগুলো সুপেয় পানি সংকটের মধ্যে ছিল। এই অবস্থায় বন বিভাগ সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে অবশেষে খনন ও পুন:খনন করা হচ্ছে ৮৮টি পুকুর এবং ৩০টি পুকুরের পাকা ঘাট নির্মাণ করা হবে। এসব পুকুরের মধ্যে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরণখোলা রেঞ্জের দুবলায় ২টি ও বগীতে নতুন করে ৩টি পুকুর খনন করা হচ্ছে। এই রেঞ্জের ২৪টি পুকুর পুনঃখননের মধ্যে কচিখালী অভয়ারণ্যে ৪টি, কটকা অভয়ারণ্যে ৪টি, দুবলায় এলাকায় ৩টি, শরণখোলা রেঞ্জ সদরে ২টি, দাশেরভারানীতে ২টি। এছাড়া একটি করে পুকুর পুনঃখনন করা হচ্ছে

ডুমুরিয়া, চরখালী, তেরাবেকা, চান্দেশ^র, শাপলা, ভোলা, শেলারচর, কোকিলমুনি ও সুপতি। চাঁপাই রেঞ্জে পুকুর পূন:খনন করা হচ্ছে ২৬টি পুকুরের মধ্যে রয়েছে ধানসাগরে ৩টি, গুলিশাখালীতে ২টি, আমুরবুনিয়ায় ২টি। একটি করে পুকুর পূন:খনন করা হচ্ছে চাঁদপাই, ঢাংমারী, লাউডোপ, জোংড়া, ঘাগড়ামারী, নাংলী, হরিণটানা, কলমতেজী, তাম্বুলবুনিয়া, জিউধরা, বরইতলা, কাটাখালী, শুয়ারমারা, মরাপশুর, বৈদ্যমারী, আন্ধারমানিক, হারবাড়িয়া, নন্দবালা ও চরাপুটিয়া। এছাড়া পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগে একটি নতুন পুকুর খনন ও ৩৪টি পুকুর পূন:খনন এবং ৩০টি পুকুরের পাকা ঘাট নির্মান করা হবে। এসব পুকুর খনন ও পুন|খননের কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনের প্রাণ হচ্ছে গাছপালা ও বন্যপ্রাণী। সুন্দরবনের মধ্যে থাকা পুকুরগুলো ঝড়-জলোচ্ছাসে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বছরের পর বছর ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণীগুলো সুপেয় পানি সংকটের মধ্যে ছিল। এই অবস্থায় বন বিভাগ সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দীর্ঘদিনের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে অবশেষে ৪টি নতুন পুকুর খনন ও ৮৪ পুকুর পুপুনঃখনন করাসহ ৭০টি পুকুরে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ঘাট। বন্যপ্রাণীর আধিক্য রয়েছে এমন এলাকাগুলোতে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননের  কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়ানে এসব পুকুর খনন ও পুনঃখননে ব্যায় হচ্ছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর ফলে বন্যপ্রানীগুলোর দীর্ঘদিনে সুপেয় মিঠা পানির চাহিদা মেটাবে।

news24bd.tv তৌহিদ