সূরা লাহাবের বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ

সূরা লাহাবের বাংলা অর্থসহ উচ্চারণ

অনলাইন ডেস্ক

সূরা আল লাহাব ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১১ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫ এবং সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। হিজরতের আগে মক্কায় মহানবী (সা) যখন প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করছিলেন সেই কার্যক্রমের প্রথম দিকে  নাজিল হয়েছিল এই সুরা। এ সুরায় রয়েছে ৫টি বাক্য বা আয়াত।

ইসলাম ও মহানবীর (সা)  অন্যতম প্রধান বা কঠোর শত্রু আবু লাহাবের প্রতি প্রকাশ্যে তথা তার নাম উল্লেখ করে কঠোর নিন্দা করা হয়েছে সুরা লাহাবে। আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর অত্যন্ত মন্দ পরিণতির ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে এ সুরায়। এই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তব হয়েছিল। কুরআনের অন্য কোনো সুরায় ইসলামের কোনো শত্রুর প্রতি এমন প্রকাশ্য নিন্দা দেখা যায় না।
মহানবীর প্রতি শত্রুতায় আবু লাহাব ও তার স্ত্রী উম্মে জামিলা বিনতে হারবের ভূমিকা ছিল এতই তীব্র যে তারা এক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বাধা, হয়রানি ও অশোভনীয় ভাষা ব্যবহারে দ্বিধা বোধ করত না, যদিও সম্পর্কের দিক থেকে আবু লাহাব ছিল মহানবীর আপন চাচা।

সুরা লাহাবের পটভূমি সম্পর্কে বলা হয়, যখন নিকটাত্মীয়দের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয় (‘ওয়ানযির আশীরাতাকাল আকরাবীন) তখন মহানবী (সা.) নিজ নিকটাত্মীয়দের দাওয়াত দিয়ে তাদের কাছে ইসলামের  আহ্বান তুলে ধরেন। এ সময় আবু লাহাব ক্রুদ্ধ হয়ে তলোয়ার হাতে নিয়ে অভিশাপ দিতে বলতে লাগল যে, 'তোমার হাত ভেঙ্গে যাক! তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি এজন্য আমাদের ডেকেছ?' এরই উত্তরে সুরা লাহাব নাজিল হয়।

আরবি:
 بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ
١  تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ 
٢ مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ 
٣ سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ 
٤ وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ 
٥ فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ 

উচ্চারণ:

‘বিসমিল্লাহ-হির রহমা-নির রাহীম’

ত্বাব্বাত ইয়াদা- আবী লাহাবিউ ওয়া তাব্বা. মা আগনা- 'আনহু মা-লুহু ওয়ামা- কাসাব. ছাইয়াছলা-না-রানযা-তা লাহাবিউ ওয়ামরাআতুহ, হাম্মা- লাতাল হাত্বোয়াব. ফীজী দিহা- হাবলুম মিম মাসাদ।

সুরা লাহাবের অনুবাদ: অসীম দয়াময় ও অনন্ত করুণাময় আল্লাহ'র নামে,
(১) আবু লাহাবের হাত দুটি চূর্ণ হোক ও সে স্বয়ং ধ্বংস হোক। (২) তার ধনসম্পদ তার কোন কাজেই এল না, অনুরূপ তার উপার্জন। (৩) সে খুব শিগগিরই লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে, (৪) এবং তার স্ত্রীও, যে আগুনের ইন্ধন বা লাকড়ি বহন করে। (৫) তার  গলদেশে পাকানো রজ্জু বাঁধানো আছে।

আবদুল মোত্তালেবের অন্যতম পুত্র তথা মহানবীর অন্যতম চাচা আবু লাহাব ছিল মক্কার শীর্ষস্থানীয় অভিজাত ও সম্পদশালী ব্যক্তি। ইসলাম-প্রচারের সূচনা-লগ্ন থেকেই আবু লাহাব ইসলামের কঠোর বিরোধিতায় জড়িত হয়। ইসলামের সবচেয়ে বড় কয়েকজন শত্রুর অন্যতম এই ব্যক্তি মহানবী(সা)-কে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিত ও অন্য মুশরিকদের চেয়েও মহানবীকে বেশি কষ্ট দিত ও হয়রানি করত।


অভাব দুর হবে, বাড়বে ধন-সম্পদ যে আমলে

সংবাদ উপস্থাপনায় ও নাটকে রূপান্তরিত দুই নারী

করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে বাধা নেই ইসলামে

কমেন্টের কারণ নিয়ে যা বললেন কবীর চৌধুরী তন্ময়


একদিন মহানবী (সা) সাফা নামক পাহাড়ের ওপর উঠে উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে বলেন: একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে। মহানবীর ডাক শুনে মক্কার জনগণ তার কাছে আসে। তাদের উদ্দেশে মহানবী বললেন:

আমি যদি এ খবর দেই যে আজ বিকালে অথবা কাল ভোরে অশ্বারোহী সেনারা এই পাহাড়ের পাশ দিয়ে এসে তোমাদের ওপর হামলার উদ্যোগ নিচ্ছে,-তোমরা কি আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? মক্কার জনগণ বলল: আমরা তোমাকে কখনও মিথ্যা কথা বলতে শুনিনি। তখন মহানবী (সা) বললেন: আমি তোমাদের কঠোর খোদায়ি শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করছি। তখন আবু লাহব বলল: আমি যদি তোমার ধর্ম মেনে নেই তাহলে অন্য মুসলমানদের তুলনায় আমাকে বিশেষ কি কি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে? রাসুলে খোদা (সা) বললেন: আমাদের ধর্ম তথা  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে অন্য সব মুসলমানের মতই একজন মুসলমান হবেন আপনি, কোনো বিশেষ সুবিধা পাবেন না, কারণ এ ধর্ম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। এ ধর্মে সবাই ওজনের পাল্লার মাপের মতই সমান।

এ কথা শুনে আবু লাহাব ক্রুদ্ধ হয়ে অনেক অশোভনীয় কথা বলে। সে বলে: ধ্বংস হও তুমি, ধ্বংস হোক্‌ এমন ধর্ম। আর এ প্রেক্ষাপটেই নাজিল হয় সুরা লাহাব। এ সুরায় বলা হল: বরং আবু লাহাবের দুটি হাত ও সে নিজে ধ্বংস হোক্।

আবু লাহাব সব সময় ছায়ার মত মহানবীর (সা) পিছনে লেগে থাকত। যখনই রাসুলে পাক কোনো গোত্রের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিতেন তখনই আবু লাহাব ইসলাম বিরোধী প্রচারণা শুরু করত। সে বলত: মুহাম্মাদ তোমাদেরকে লাত ও ওজ্জাসহ অন্যান্য মূর্তিগুলোর পূজা থেকে দূরে রাখতে চায়। সে তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে চায়। তোমরা কখনও তার কথা শুনবে না। –এভাবে আবু লাহাব সব সময় রাসুলের বিরোধিতা করত ও রাসুলের কাজে বাধা দেয়ার জন্য সব কিছুই করত। তার ভাষাও ছিল সবার চেয়ে অশালীন ও আক্রমণাত্মক। আর এ জন্যই সুরা লাহাবে খুব স্পষ্টভাবে তার ও তার স্ত্রীর কঠোর নিন্দা করা হয়েছে।

একবার মহানবী আরাফাতের কাছে জনগণের উদ্দেশে বলছিলেন: হে জনগণ! বল! আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা খোদা নেই যাতে তোমরা মুক্তি পাও। এমন সময় আবু লাহাব যুবক মহানবীর পায়ে পাথর নিক্ষেপ করলে মহানবীর পা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। আবু লাহাব চেঁচিয়ে বলছিল: হে জনগণ! এই লোক মিথ্যাবাদী! তার বক্তব্যকে সত্য বলে স্বীকার কোরো না।

আবু লাহাবের স্ত্রীকেও কুরআনে দোযখী বলা হয়েছে। উম্মে জামিল নামের এই নারী ছিল উমাইয়্যা বংশের এবং সে ছিল আবু সুফিয়ানের বোন। উম্মে জামিল রাতের বেলায় মহানবীর (সা) পথে কাঁটাযুক্ত লতা গাছ সুতো বা রশি দিয়ে বেধেঁ বিছিয়ে রাখত। কুরআনে বলা হয়েছে: কিয়ামত বা বিচার দিবসেও সে এভাবেই তথা আগুনের ইন্ধন বা লাকড়ি বহনরত অবস্থায় থাকবে এবং  গলদেশে পাকানো রজ্জু বাঁধা অবস্থায় সে দোযখে প্রবেশ করবে ।

কারো কারো মতে, ‘হাম্মালাতুল হাতাব’বা 'আগুনের ইন্ধন বহনকারী'- এর অর্থ ‘চুগলখোরী’তথা একের কথা অন্যকে বলা। আর এক অর্থ এও হতে পারে যে, কিয়ামতের দিন সে মাথায় জাহান্নামের ইন্ধন তুলে ধরে থাকবে। আর তা হয় দুনিয়ার জন্য বলা হয়ে থাকবে যে, সে এভাবেই লাঞ্ছিত, কিংবা কিয়ামতের দিন অনুরূপভাবে লাঞ্ছিত হবে।  

news24bd.tv/আলী