ঈদে বাড়ি যাওয়ার পরিবর্তে

ঈদে বাড়ি যাওয়ার পরিবর্তে

Other

কাজই যাদের ঈদ অথবা ঈদের দিনে যাদেরকে কাজ করতে হয় তাদেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রতিটি ঈদে প্রায় প্রতিটি চ্যানেলে প্রচার করা হয়। চিকিৎসক, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেডের কর্মী ও সাংবাদিকরা সেখানে বক্তব্য দেন।  

এমন একটি প্রতিবেদন আমি প্রথম করি অনেক বছর আগে। ১৮ / ১৯ বছর আগে।

তখন আমি কাজ করি চ্যানেল আই -তে, রিপোর্টার পদে। কী দারুণ উত্তেজনা কাজ করে মনের ভেতর, কী দারুণ সব কথা, ঈদ আর কর্তব্যের সম্পর্কের কী অসাধারণ সমীকরণ! বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে বক্তব্য নেই।  

এরপর একটা প্রতিবেদন করলাম, যারা দুই পয়সা বেশি আয় করার আশায় গ্রামের বাড়ি যায় না। নারী বা নাড়ী কোনোটার টানই তাকে ঢাকা থেকে সরাতে পারে না।

তারা হলেন হকার, বাদামওয়ালা, বাঁশি ওয়ালা ইত্যাদি। ঈদের সময় নাগরিকরা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে যান, সে সব স্থাপনার সামনে তারা কিছু পণ্য বিক্রি করেন, উৎসবে বিক্রি বাড়ে, দুই পয়সা বেশি আয় হয়। শিশু পার্ক তখন জমজমাট স্পট, সংসদ ভবনের আবেদনও চরম মাত্রার।

একটা সময় আমি বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। সেসময় আমাকে একটা সাক্ষাৎকার দিতে হয় ঈদে দায়িত্ব পালন বিষয়ে। এটা ছিল অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমি কী বলেছিলাম, তা এখন আর মনে নেই, তবে ভালো বলেছিলাম, তাতে সন্দেহ নেই।

ঈদে প্রথম দায়িত্ব পালন করি চ্যানেল আইতে। বয়সও তখন বেশ কম ছিলো। তখনকার বার্তা সম্পাদক শাহ আলমগীর ভাই ও চিফ রিপোর্টার সাইফুল আমিন ভাই আমাকে দারুণ একটা সারপ্রাইজ দিলেন। গ্রামের ঈদ শিরোনামে আমাকে প্রতিবেদন করার অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন। আমি অনুমতি পেলাম নিজের জেলায় গিয়ে প্রতিবেদন করার। অফিসের গাড়ী চড়ে মনের মতো জায়গায় যাওয়ার স্বাধীনতা একই সঙ্গে অফিসের কাজ করা।

আসলে এই ধরনের ব্যবস্থাপনা তখন সাংবাদিকদের ফেলো ফিলিংস অনেক বাড়িয়ে দিতো। এই যেমন, এখন এই ঈদে আলমগীর ভাই এই পৃথিবীতে নেই, সাইফুল ভাইও ঢাকায় নেই, তারপরো দুজনকে আমার বেশ মনে পড়ল।

ঈদে বাড়ি যাওয়ার পরিবর্তে কর্মস্থলে থাকার গুরুত্ব অনেক বেশি -এই বোধে আস্থা ছিলো আমার ছোট বেলার বন্ধু জসিমের। সে কাজ করতো বেক্সিমকো ফেব্রিকসএ কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে। দু:খের বিষয় জসিমও বেঁচে নেই। কিন্তু কর্ম-নিষ্ঠা নিয়ে তার অনুপ্রেরণা এখনও আমার মনে পড়ে।

যাহোক, এখন অতিমারী চলছে। এর শেষ কোথায় আমরা জানি না। এই অতিমারীতে সাংবাদিকরাও ফ্রন্টফাইটার হিসাবে কাজ করছে। এই ঝুঁকিতে কাজ করা আর ঈদের দিনে কাজ করা, এক নয় নিশ্চয়ই।

ঈদে গ্রামে যাওয়া মানে আসলে নিজের স্মৃতির কাছে ফিরে যাওয়া। এটা একধরনের অতীত ভ্রমন। অনেকটা টাইম মেশিনে চড়ে অতীতে ঘুরে আসার মতো। এমনিতে অনেক স্মৃতি আমাদের মনে চাপা পড়ে যায়। পুরনো মানুষদের দেখলে সে সব স্মৃতি মনে পড়ে। আর স্মৃতি রোমন্থন মানে হলো, একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে আবারো যাওয়া। অনেকটা পড়া বই আবারো পড়া বা রিভাইস করার মতো।

মানুষের শরীরের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। মনের শক্তি অসীম, তার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ফলে, বাড়ি ফেরা নিছকই বাড়ি ফেরা নয়, বাবা মার কবর জিয়ারত করা, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করা এসবও আছে। এসবই স্মৃতির ওপর ভিত্তি করে রচিত নানা বর্ণিল সম্পর্ক।

যাহোক, এবারের ঈদে আমি অফিসে আছি, আপনাদের সেবায় । আমার মতো ছোট-বড় যে পেশাজীবীরা উৎসবে অফিস করছেন তাদের সবাইকে এই সুযোগে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখতে চাই। এমন একটা সময় হয়তো সামনে আসবে যখন সব সেক্টরই বছরের সব সময় খোলা থাকবে ।  

মানুষ তার প্রয়োজনের সেবা চাওয়ামাত্র দিনরাতের সব সময়, বছরের সব দিনে পাবে। সে সব দিনে মানুষের জীবন কেমন হবে? আমি সময় পেলে তা ভাবার চেষ্টা করি।  

যা হোক, সবাই ভালো থাকবেন। ঈদ মোবারক।

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজ টোয়েন্টিফোর।



আরও পড়ুন


বিয়ের মাত্র একদিন পরই মারা গেলেন কলেজ শিক্ষক

পর্যায়ক্রমে সবাইকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করলেন মাহি!

বঙ্গবন্ধু সেতুতে একদিনে প্রায় তিন কোটি টাকা টোল আদায়


news24bd.tv / কামরুল